বাহারী রকমের ইফতার নিয়ে জমে উঠেছে রাজধানী

বাহারী রকমের ইফতার নিয়ে জমে উঠেছে রাজধানী

অনেকদিন ধরে পুরান ঢাকা ও বেইলি রোড ঐতিহ্যবাহী ও বাহারি ইফতারের জন্য পরিচিত। প্রতি বছর মাহে রমজান উপলক্ষে বেইলি রোডে বসে জমজমাট ইফতারের আয়োজন।

ইফতারের আগ মুহুর্তে ছুটে আসে নগরীর নানা প্রান্তের মানুষ। তাদের আসার পিছনে কারণ একটাই বেইলি রোডের অভিজাত ইফতার সামগ্রী কেনা। বিগত বছরগুলোতে করোনার প্রকোপ থাকায় ইফতার আয়োজন কিছুটা ম্লান হয়ে গেলেও এবার ফিরে পেয়েফে তার পুরনো রুপ, ফিরেছে তার চিরচেনা রুপে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য খ্যাত রাজধানীর বেইলি রোড। নাট্যকর্মীদের কারণে এলাকাটি নাটকপাড়া বলে পরিচিত। এর বাইরেও এলাকাটি আরেকটি পরিচয় পায় রোজার সময়ে। পবিত্র রমজান মাসজুড়ে বেইলি রোড পরিণত হয় ইফতার বাজারে। এই অভিজাত ইফতার বাজারের পরিধি এখন বেইলি রোড ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশেও।

আজ শনিবার (২৫ মার্চ) বিকেলে বেইলি রোড ঘুরে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। আগের বছর যেইখানে ছিলো লোকশূন্য আজ সেখানে ক্রেতায় পরিপূর্ণ। রাজধানীর দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ইফতার সামগ্রী কিনতে আসছেন। ছোলা-পেঁয়াজু থেকে শুরু করে মাংস-পরোটা সবই মেলে বেইলি রোডে। ইফতার কিনতে মানুষজন ভিড় জমিয়েছেন বাহারি সব ইফতারের দোকানগুলোতে।

বেইলি রোডের দোকানগুলোতে বছরের অন্যান্য সময় ফাস্টফুড, পিঠা ইত্যাদি বিক্রি হলেও রমজান মাসে সাধারণত সেসব দোকানে ইফতারসামগ্রী বিক্রি হয়ে থাকে। বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় ইফতার বিকিকিনি। হরেক রকমের বাহারি সব আইটেম নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসে দোকানগুলো। জাগেরি রেস্টুরেন্ট, ক্যাপিটাল ইফতার বাজার বা নবাবী ভোজের ইফতারি থাকে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে।

ক্যাপিটাল ইফতার বাজারের বিক্রয়কর্মী আরিফ মাহমুদ বলেন, আমরা প্রতিবছরই নানারকম ইফতার আইটেম বিক্রি করে থাকি। গত বছর করোনা থাকার কারণে আমরা আয়োজন কেরতে পারিনি। তবে এবার আশা করছি বিগত বছরের চেয়ে ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাবো। ক্রেতাদের চাহিদা বজায় রেখে এবারও ইফতারের আয়োজন করেছি। এবার আশানুরূপ ক্রেতা সমাগমও হচ্ছে।

আবার ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) চলছে পুরান ঢাকার ইফতার বাজার। সেখানে ৪২ রকমের বিভিন্ন খাবার আইটেম নিয়ে ইফতার আয়োজন করেছে আইসিসিবি হেরিটেজ রেস্টুরেন্ট।

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, আইসিসিবির স্টল ঘিরে ক্রেতাদের ভিড়। বাহারি স্বাদের এবং নামের এসব খাবার কিনতে এসেছেন অনেক রকমের মানুষ। এর মধ্যে আছে শাহী পোলাও, বিরিয়ানি, চিকেন হরিয়ালি কাবাব, চিকেন রেশমি কাবাব, চিকেন সাসলিক, ভেজিটেবল সাসলিক, খাবসা, চিকেন তান্দুরি, স্পেশাল হান্ডি কাবাব ইত্যাদি। মিস্টি জাতীয় খাবারের মধ্যে কমলাভোগ, দিল্লি চমচম, ল্যাংচা, মালাই চপ, গোলাপ জামুন, ক্ষীর টোস্ট, রসমালাই, স্পঞ্জ রসগোল্লাসহ বাহারি স্বাদের সব মিষ্টি পাওয়া যাচ্ছে সেখানে।

আইসিসিবির স্টলে খাবসা কিনতে এসেছিলেন মামুন নামের একজন। তিনি বলেন, আমি আগে প্রবাসে থাকতাম। প্রায় ২০ বছর থেকেছি। এই খাবার কিন্তু আরবরা ইফতারে খুব সমাদর করে খায়। এখানে দেখলাম পাওয়া যাচ্ছে। তাই ভাবলাম বাসায় নিয়ে যাই। যদি খাবারের মান ভালো হয় তাহলে আবার আসব।

একটু ঘুরতেই চোখ পড়ে কন্যাসহ ইফতার কিনতে আসা এক নারীর দিকে। তিনি থাকেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। সংবাদ পড়েই ইফতার বাজার সম্পর্কে জানতে পেরেছেন তিনি। শায়লা আমিন বলেন, আমি আমার মেয়েকে নিয়ে এসেছি। মেয়ে প্রথম রোজা রাখছে এই বছর। তার পছন্দমতো ইফতার নেবো। মেয়ে নিজে পছন্দ করে আজ ইফতার কিনবে সেজন্যই মেয়েকে নিয়ে আসা।

তাকে প্রশ্ন করতেই হাসি! আইসিসিবির স্টলের আয়োজন কেমন লাগছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক আইটেম দেখতে পাচ্ছি। আমি বলব, বেশ সমৃদ্ধ আয়োজন। রাজধানীর বুযকে এতো সুন্দর আয়োজন ভাবতেই পারিনি।

স্টোল ঘুরে ঘুরে চোখ পড়লো এক বিক্রয়কর্মী দিকে, তাকে জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলো ক্রেতাদের বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি কোন পদে বেশি সাড়া মিলছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন হান্ডি কাবাবের নাম। এটা সকলেই পছন্দ করে। ইফতারের বিভিন্ন আইটেমের পাশাপাশি ‘ঠান্ডা-গরম’ স্টলে প্রায় ৩০ রকমের বেশি ফলের জুস পাওয়া যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি এসব ফলের জুসের দামও নাগালের মধ্যেই। এখানে আম, লিচু, তরমুজ, কালো জাম, তেঁতুল, আঙুর, আনার, চালতা, আমড়া, ঢেউয়া, স্ট্রবেরি, আপেল বরইসহ মজাদার স্বাদের জুস মিলবে।

সপ্তম বারের মতো আয়োজিত এবারের আইসিসিবি পুরান ঢাকা ইফতার বাজার চলবে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে। আগামী ২৫ রমজান পর্যন্ত ইফতার বাজার চালু থাকবে।