বাংলাদেশের ৩৩ তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হলো বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের ৩৩ তম সরকারি  বিশ্ববিদ্যালয় হলো বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের দক্ষিণঅঞ্চলে  অবস্থিত। বরিশাল বিভাগের এই বিশ্ববিদ্যালয়টির  ভিত্তিপ্রস্থ স্থাপিত হয় ২০১১ সালে।এবং এটি বাংলাদেশের ৩৩ তম সরকারি  বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১২ সালের ২৪ শে জানুয়ারি চারটি ফ্যাকাল্টির অধীনে ৬ টি ডিপার্টমেন্ট নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে । বর্তমানে ২৫ টা ডিপার্টমেন্ট নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলমান। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামগত সমস্যা :

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার 12 বছর তথা এক যুগ পার হয়ে গেলও মাত্র একটি ভবনের মধ্যে 25 টি ডিপার্টমেন্টের ক্লাস এবং একাডেমিক কার্যক্রম চলছে। কোন কোন ডিপার্টমেন্টের একটিমাত্র ক্লাসরুম। অনার্সের চারটি  ব্যাচ এবং মাস্টার্স এর দুইটি মোট ছয়টা ব্যাচের ক্লাস কার্যক্রম চলে এ একটি ক্লাসরুমে। যদি কোন ব্যাচের ক্লাস বা পরীক্ষা চলে তাহলে অন্য ব্যাচদের বসে থাকতে হয়। প্রায় সময় যখন ক্লাসের সময় দেওয়া থাকে ডিপার্টমেন্টে গেলে দেখা যায় যে কোন একটা ব্যাচের ক্লাস বা পরীক্ষা চলছে। ওই সময়টুকু বসে থাকতে হয়। পাশাপাশি দুইটা ডিপার্টমেন্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং আইন। ক্লাসরুমে সংকটের কারণে যখন কোন ব্যাচের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় দুই রুমে পরীক্ষা হওয়ার কারণে একসঙ্গে দুইটা ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদেরই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। প্রায় সময় ক্লাস বন্ধ থাকে আর যদিও হয়, দেখা যায় দিনে একটা বা সর্বোচ্চ দুইটা ক্লাস ।  একটা ব্যাচের  ক্লাস বা পরীক্ষা থাকার কারণে প্রায় দেখা যায় শিক্ষকরা ক্লাসের সময় দেওয়ার পরও ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ফেরত আসতে হয়। 

শিক্ষক সংকট :

এখানে অধিকাংশ ডিপার্টমেন্টে দেখা যায় প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল শিক্ষক। অনেক সময় শিক্ষকরা নিজের বসার ডেক্সটুকুও পায় না। একটা ছোট রুমে পাঁচ ছয় জন শিক্ষককে গাদাগাদি করে বসতে হয়। বেশ কিছু শিক্ষক বাহিরের দেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে যাওয়ার কারণে পাঠদানের শিক্ষক সংখ্যা কমে যায় যেমন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দুই জন শিক্ষক বাহিরের দেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে গেছেন। এ কারণে মাত্র ছয় জন শিক্ষক নিয়ে ডিপার্টমেন্টের পাঠদান কার্যক্রম চলছে। এই কারনে বর্তমানে অবস্থিত শিক্ষকরা তাদের সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না এবং পাঠদানের জন্য যে একটি সুন্দর পরিবেশের দরকার তা তারা পাচ্ছেন ন। অনেকগুলো ব্যাচ থাকার কারণে অল্প কিছু সংখ্যক শিক্ষক মিলে অনেকগুলো খাতা দেখতে হয় এই কারণেই রেজাল্ট দিতে প্রায়ই বিলম্বের সৃষ্টি হয়। সে কারণে পরবর্তী সেমিস্টারের পরীক্ষাও দেরি হয় আর সেশন সংকটে পড়ে যায়  শিক্ষার্থীরা। লোকোবল সঙ্কটের কারণে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে কোন পরীক্ষার ডেট বা পরীক্ষার কার্যক্রম বা রেজাল্টের সিট পাঠানো হলে অনেক দেরি করে তারা সেটা ছাড় করেন। 

হলের আবাসন সংকট :

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে (2023 সালে) 8000 এরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ছেলেদের পাঁচ তলা বিশিষ্ট  দুইটি এবং মেয়েদের পাঁচ তলা বিশিষ্ট দুইটি হল রয়েছে। পাঁচতলা বিশিষ্ট এই হলের প্রথমতলার এক পাশে  ডাইনিং,  দ্বিতীয় তলা খেলা আর টিভি দেখার এবং তৃতীয় তলা রিডিং আর নামাজের রুম। আর যে রুমগুলো আছে তার একটা রুমে আট জন শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। এমনকি একটি বেডে দুইজন করে থাকতে হয়। এ কারণে প্রায় ছাত্র-ছাত্রীদের ঘুমের এবং পড়ার অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়।  অনেক গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী হলে সিট না পাওয়ার কারণে তাদের পড়ালেখা হুমকির মুখে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত সমস্যা:

বিশ্ববিদ্যালয়টির  ভোলা রোডের মেইন গেটের দিকে তাকালে মনে হয় কোন বোটানিক্যাল গার্ডেন যার দুই পাশে ঝোপঝাড় লতা পাতায় ভর্তি, পাশে যে দুইটা খাল রয়েছে সেখানেও ময়লা এবং কালো পানিতে পরিপূর্ণ।  আর উপরে ঝোপ ঝাড়ে পরিপূর্ণ। হলের দুই পাশে ময়লার ভাগাড়। মেয়েদের হলের পাশে এই ময়লার ভাগাড় আরো ব্যাপক।  কোন ঘাট বাঁধানো পুকুর নেই। হলের যে একটা পুকুর রয়েছে তার আশেপাশে ঝোপঝাড় আর পুকুরটি কচুরিপানায় পূর্ণ ।  আর ভিসির বাসভবনের সামনে যে পুকুরটি রয়েছে সেটিরও ঘাট বাধানো তো দূরের কথা আশেপাশের ঝোপঝাড়ের কারণে শিক্ষার্থীরা পুকুরে নামতে ভয় পায়। এটিও আগাছা এবং ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ দেখা যায় এইসব ঝোপঝাড়ের কারনে। 

বিশ্ববিদ্যালয় নেই কোন পাকা রাস্তা:

বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় কোন পাকা রাস্তা নেই। যে ইট বাঁধানো রাস্তা আছে তার অধিকাংশ জায়গায় খানাখন্দে ভর্তি আর অমর্সৃন । বর্ষার সময় প্রায়ই রাস্তা এবং আশেপাশের জায়গায় পানি জমে থাকে।  রাস্তা উঁচু-নিচু এবং অমর্সৃন হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের হাঁটতে অনেক কষ্ট হয়। প্রায় সময় হোঁচট খাওয়া এবং পড়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটে। 

খেলার মাঠের বেহাল দশা:

বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কেন্দ্রীয় মাঠেটি রয়েছে এটির অবস্থা খুবই নাজুক। মাঠে নেই পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।  বর্ষায় মাঠে পানি জমে থাকে আর সে মাঠে খেলার কারণে  বিভিন্ন খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। আর মাঠ শুকনো অবস্থায় উঁচু-নিচু জায়গায় পা পড়ে অনেক শিক্ষার্থীর আহত হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। মুক্তমঞ্চের সামনে যে জায়গাটুকু আছে সেটা পরিষ্কারের অভাবে শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দে সেখানে খেলতে পারে না। ক্রিকেট খেলার জন্য কোন পিচ বা ভালো মাঠের সুব্যবস্থা নেই। নেই কোন বাস্কেটবল কোট। নেই ভালো একটা ভলিবল কোট। জিমনেসিয়াম নেই যেখানে শিক্ষার্থীরা শরীর চর্চা করতে পারে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোন অডিটোরিয়াম:

 বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় কোন অডিটোরিয়াম নেই।  যে দুইটা ছোট কনফারেন্স হল কীর্তনখোলা আর জীবনানন্দ দাশ হল রয়েছে সেটাও অপর্যাপ্ত। বড় বড় সেলিব্রিটিদের যখন বিশ্ববিদ্যালয় কোন প্রোগ্রাম করতে নিয়ে আসা হয় তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র জায়গার সংকটের কারণে তারা অংশগ্রহণ করতে পারে না। যে কোন ডিপার্টমেন্টের কালচারাল, নবীন বরণ, র‌্যাগ-ডে 

 উৎসব অনুষ্ঠানের জন্য ডিপার্টমেন্টের বা কীর্তনখোলা অথবা জীবনানন্দ হলের ছোট্ট জায়গার উপর নির্ভর করতে হয়। 

এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পাঁচ দিনের  মধ্যে আরও একদিন মঙ্গলবার ছুটি। যে কার্যক্রম অফ লাইনে হলে সুন্দর হয় সেটা অনলাইনে হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস বোঝার ক্ষেত্রে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন  হয়। বাংলাদেশের যে ইন্টারনেট স্পিড এবং অপারেটরদের যে ইন্টারনেট সার্ভিস সেটা দ্বারা অনেক সময় ক্লাস করা ও বিরম্বনার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও এই দিন বাস বন্ধ থাকার কারণে রাত্রিবেলা যখন টিউশনি করে শিক্ষার্থীরা হলে বা ক্যাম্পাসে ফিরে তাদের অনেক টাকার অপচয় হয়। মঙ্গলবার ছাড়া বাকি চার দিন রাতে বেলা দুইটা বাসে যখন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে তখন ভেতরে জায়গা না থাকার কারণে দাঁড়িয়ে থেকে আসতেও কষ্ট হয় এবং অনেক শিক্ষার্থী বাসে উঠতেও পারে না। 

এত এত সমস্যাগুলো  কোন সুষ্ঠু  এবং সহজ সমাধানের পথে এগোচ্ছে না।