গৌরনদীর ভ্যানচালক নজরুলের পরিবারের ঈদের আনন্দ কেড়ে নিল দুর্বৃত্তরা

গৌরনদীর ভ্যানচালক নজরুলের পরিবারের ঈদের আনন্দ কেড়ে নিল দুর্বৃত্তরা

বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় নজরুল ইসলাম (৪০) নামের এক ভ্যানচালক ও তাঁর পরিবারের ঈদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

যাত্রীবেশে ভ্যানে উঠে ভূরঘাটায় নিয়ে গতকাল শুক্রবার নজরুলকে পিটিয়ে, কুপিয়ে রক্তাক্ত করে তাঁর ভ্যানটি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। নজরুল বর্তমানে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। দুর্বৃত্তরা পরিবারটির ঈদের আনন্দই শুধু কেড়ে নেয়নি, ছিনিয়ে নিয়েছে পরিবারটির চলার একমাত্র অবলম্বনও।

গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আজ শনিবার সকাল নয়টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, ডান হাতে দুটি জখম নিয়ে কাতরাচ্ছেন ভ্যানচালক নজরুল ইসলাম (৪০)। চিকিৎসকেরা জানান, নজরুল এখন শঙ্কামুক্ত।

তবে জীবিকার অবলম্বন হারিয়ে যেন মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘ভাগ্যদোষে মুই আজ ভ্যানচালক। ভ্যান চালিয়ে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে খেয়েদেয়ে ভালোই আছিলাম। পরিবারের সবাইকে ঈদের আনন্দ দেওয়ার জন্য বাড়তি আয় করতে এত গরমের মধ্যেও দিন-রাত রাস্তায় ভ্যান চালাই।’

ভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নজরুল বলেন, ‘শুক্রবার সকালে অজ্ঞাতনামা দুই যাত্রী গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড থেকে ভূরঘাটা যাওয়ার জন্য আমাকে ভাড়ায় নেন।

বিকেলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভূরঘাটার দক্ষিণ পাশে পৌঁছালে যাত্রীবেশে থাকা দুই দুর্বৃত্ত মোর ওপর হামলা করে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে আমার আয়ের একমাত্র ভ্যানটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

পরে পথচারীরা পরিবারকে খবর দেন। স্বজনেরা আমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। ওরা মোর ও পরিবারের ঈদের আনন্দ কাইড়া নিছে। ঈদ তো হাসপাতালে গেল, ঈদের পরে কী দিয়ে পরিবার–পরিজন নিয়ে বাঁচমু, হেইয়া লইয়া বড়ই দুশ্চিন্তায় আছি।’

নজরুলের বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায়। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। করোনা মহামারির মধ্যে চাকরিটি চলে যায়।

তিনি বলেন, ‘ভান্ডারিয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএ (উচ্চমাধ্যমিক) পাস করে ঢাকা ভাওয়াল বদরে আলম কলেজে স্নাতকে ভর্তি হই।

পরে পরিবারের কারণে ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে ঢাকায় বসবাস করি। করোনার সময় চাকরি হারিয়ে নিজ গ্রাম ভান্ডারিয়া ফিরে আসি। বেঁচে থাকার জন্য কোনো উপায় ছিল না।

নিজ এলাকায় রিকশা-ভ্যান চালাতেও আত্মসম্মানে বাজে। যে কারণে গৌরনদীতে এসে শাওড়া গ্রামে ইব্রাহিম সিকদারের বাড়িতে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে ভাড়া থেকে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। পরিশ্রম করে ভালোই ছিলাম।

দুঃখ প্রকাশ করে নজরুল বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা মোর ঈদের আনন্দই শুধু কাইড়া নেয়নি, ওরা মোর সব কাইরা নিল। মুই কী দিয়া পরিবারের আহার জোগাব আর কী দিয়া বাচ্চাদের লেহাপড়া করামু।’ নজরুলের স্ত্রী শাহিনুর বেগম বলেন, ‘ঈদ করতে পারি নাই কষ্ট যেমন আছে, তারপরও স্বামী বেঁচে আছে, এটাই সান্ত্বনা।’

খবর পেয়ে আহত নজরুলকে হাসপাতালে দেখতে যান প্রতিবেশী সরকারি গৌরনদী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদ মোসলেম উদ্দিন সিকদার। নজরুলের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন তিনি। পরিবারকে মিষ্টি ও সামান্য কিছু আর্থিক সহায়তা নেন।

এ সময় মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘ভ্যানচালককে আহত করে ভ্যান ছিনিয়ে নিয়ে পরিবারের ঈদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। উপার্জনের একমাত্র অবলম্বনটি হারিয়ে আজ নজরুল নিঃস্ব।

এই পরিবারের প্রতি সমাজের বৃত্তবানদের আমি অনুরোধ করছি, তাঁরা যেন নজরুলের পাশে দাঁড়িয়ে অন্তত ভ্যান দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।