গৌরনদীতে স্কুল ভবন আছে, নামে জায়গা নেই ভূয়া দলিল দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করার অভিযোগ

গৌরনদীতে স্কুল ভবন আছে, নামে জায়গা নেই ভূয়া দলিল দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি  করার অভিযোগ

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম ভূরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাালয়ে ২টি ভবন আছে, কিন্তু  স্কুলের নামে কোন রেজিষ্ট্রি জায়গা নেই।  স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা জাকের পাটির সহ-সভাপতি এস.এম মঞ্জুর এলাহীর বিরুদ্ধে ভূয়া দলিল জমা দিয়ে স্কুল রেজিষ্টার ও জাতীয়করণ (সরকারী) করানোর অভিযোগ  পাওয়া গেছে। বর্তমান বি.এস রেকর্ডে ওই স্কুলের নামে অন্য দাগে ২ শতাংশ জমি রেকর্ড থাকলেও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৪ শতাংশ জমি স্কুলের দখলে রয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা  গত ৪ বছর পূর্বে উপ-পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।

সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ১৯৭৯ সালে উপজেলার পশ্চিম ভূরঘাটা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয় এস.এম মঞ্জুর এলাহী গংরা উদ্যোগ নেয়। ওই বছরই ভূরঘাটা   মৌজার এস.এ ১১২/১১৭/৫৭/৩১নং খতিয়ানের এস.এ ৬/৮৯/১০১/১২৬/১৫/১৬নং দাগের ৩৬ শতাংশ জমি ওই স্কুলের (উপ-পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা) নামে  জমিদাতা হিসেবে স্থানীয় আবুল কাশেম সরদারের ছেলে মোঃ ইয়াকুব আলী সরদার, আলতাজউদ্দিন সরদার, এস.এম মঞ্জুর এলাহী একটি রেজিষ্ট্রি দলিল দেখায়। যার দলিল নং ৩১০৫/২৯-১১-১৯৭৭ইং ও ক্রমিক নং-৩১৬০। ওই বছর মঞ্জুর এলাহী তার সহোদর বড়ভাই ইয়াকুব আলী সরদারকে  কাগজপত্রে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানিয়ে এলাহী নিজেই নেতৃত্ব দিয়ে এস.এ ১৫/১৬নং দাগের আংশিক জমির ওপর কাঁচা স্কুলঘর নির্মাণ করেন। ওই বছরই এলাহীর পরামর্শে ৪জন শিক্ষক নিয়োগ দেয় তৎকালীন এসএমসি কমিটি। ৮১ সালের ১৭ ডিসেম্বর স্কুলটি রেজিষ্টারভূক্ত হয়।  পরবর্তীতে স্কুলটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয়করণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্মিত একতলা ও দোতলা ২টি পাকা ভবনসহ স্কুলের দখলে রয়েছে বি.এস রেকর্ডে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৩৬ ও ৩৭ দাগে ১৪ শতাংশ জমি।

উপজেলা ভূমি অফিস সুত্রে জানা  গেছে, ভূরঘাটা মৌজায় এস.এ ১৫/১৬নং দাগ ভেঙ্গে বিএস রেকর্ডে  ৩০নং দাগে ২৭ শতাংশ, ৩১নং দাগে ২৫ শতাংশ, ৩২নং দাগে ১৪ শতাংশ, ৩৩নং দাগে ১২ শতাংশ ও এসএ ১৫নং দাগ ভেঙ্গে বি.এস রেকর্ডে ৩৬নং দাগে ১১ শতাংশ. ৩৭নং দাগে ৮ শতাংশ জমির প্লট হয়েছে। বি.এস রেকর্ডে ৩১নং দাগের ২৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৩০১নং খতিয়ানে ২ শতাংশ জমি ভূরঘাটা  আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে, ৩০৪নং খতিয়ানে ৮ শতাংশ জমি জলিল সরদারের নামে, ৫নং খতিয়ানে ১০ শতাংশ  জমি ভূরঘাটা জামেমসজিদের নামে, ৫৪নং খতিয়ানে ৫ শতাংশ জমি আঃ মন্নান সরদার গংদের নামে বিএস রেকর্ড রয়েছে। 

এদিকে, স্কুলের দখলের জায়গা বি.এস রেকর্ডে ৩৬নং দাগে ১৭৫নং খতিয়ানে ১১ শতাংশ জমি পানু সরদার গংদের নামে ও ৩৭নং দাগে ২০৪নং খতিয়ানে ৮ শতাংশ জমি মাজু বিবি গংদের নামে রেকর্ড রয়েছে।

স্থানীয় মোকছেদ বেপারী, আনোয়ার হোসেন অভিযৈাগ করে বলেন,  বরিশাল রেকর্ড রুমে আমরা খোজ নিয়ে  জানতে পারি, স্কুলের নামে কোন  জমির সাবরেজিস্ট্রি দলিল নেই। এসএমসির সাবেক সভাপতি এস.এম মঞ্জুর এলাহী  স্কুলের নামে ভূয়া ও কাল্পনিক দলিল সৃষ্টি করে জমিদাতা সেজে ১৫ বছর একটানা  সভাপতির দায়িত্ব পারন করেছে।  এর আগে স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে জমিদাতা হিসেবে স্কুলের সভাপতি ছিলেন এলাহী সহোদর বড় ভাই মরহুম আইয়ুব সরদার। তথ্য ও উপাত্ত গোপণ  রেখে এলাহী ও তার বড় ভাই সরকারি বিধিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে প্রতারনা ও জালজালিয়াতি করে স্কুল রেজিষ্টারভূক্ত করায়। বি.এস রেকর্ডে ৩১নং দাগের ২৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৩০১নং খতিয়ানে ২ শতাংশ জমি ছাড়া ভূরঘাটা  আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে  আর কোন জমি রেকর্ড নেই বলে তারা জানান। 

ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি কথিত জমিদাতা এস.এম মঞ্জুর এলাহী বলেন. আমার নিজের স্বার্থে কিছু করি নাই। কিছু করে থাকলে স্কুল ও এলাকার স্বার্থে করেছি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিসের ভিত্তিতে এ স্কুলটি সরকারি করেছে তা সরকারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন। এ গুলো সাংবাদিকদের দেখার দায়িত্ব নয়। স্কুলের ২টি ভবনের স্থানের সাড়ে ৫ শতাংশ জায়গা  বিএস রেকডিয় মালিকের কাছ থেকে আমার ছেলে কিনে গত ৬ মাস পূর্বে  স্কুলের নামে রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছে। এরপর  আমার ছেলে জমিদাতা  সদস্য  হিসেবে এসএমসির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাসলিমা বেগম বলেন, আমাদের দায়িত্ব হলো স্কুল সঠিক ভাবে চলে কিনা তা দেখার। তবে, এ ব্যাপারে তদন্ত করে  সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি লিখিত ভাবে জানাবো।

ওই ক্লাস্টারের উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহাবুবুল ইসলাম  বলেন, স্কুলের নামে জমির কোন রেজিষ্ট্রি দলিল না থাকায় জমিদাতা ছিলনা। তাই এসএমসি কমিটি ৩ বছর ছিল না। গত ৬ মাস পূর্বে স্কুলের দখলে থাকা মালিকানাধীন ১৪ শতাংশ জমির মধ্যে থেকে ৬ শতাংশ জমি কিনে দিয়ে জমিদাতা সদস্য হয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিষ কুমার জানান, এ ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই।  তবে, ভূয়া দলিলে স্কুল সরকারি হয়ে থাকলে, তাহলে অনিয়ম হয়েছে। তৎকালিক সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়য়ে ভালো বলতে পারবেন। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া  হবে।