বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংলিশদের বাংলাওয়াশ

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংলিশদের বাংলাওয়াশ

সংক্ষিপ্ত ওভারের ফরম্যাটে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। এতদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কোনো ফরম্যাটেই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারানোর গৌরব ছিল না বাংলাদেশের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে জয় ছিনিয়ে নিয়ে সেই আক্ষেপ মিটিয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাওয়াশ করেই ছাড়ল সাকিব আল হাসানের দল।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) মিরপুর শের-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে প্রথমে ব্যাট করে লিটন দাসের ফিফটি ও নাজমুল হোসেন শান্তর ৪৬ রানে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।

জবাবে রান তাড়া করতে নেমে ডেভিড মালান ও অধিনায়ক জস বাটলারের ব্যাটে জয়ের পথেই ছিল ইংল্যান্ড। তবে তাসকিন আহমেদ-মোস্তাফিজদের দারুণ বোলিংয়ে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ালে নির্ধারিত সময়ে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রানেই থেমে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস।

ফলে ১৬ রানের দারুণ এক জয়ে সিরিজও ৩-০ ব্যবধানে জিতল বাংলার দামাল ছেলেরা। সেই সঙ্গে একাধিক ম্যাচের সিরিজে নবম সিরিজ ও চতুর্থবার প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা।

এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। এদিন প্রথম ওভার থেকেই ইংলিশ বোলারদের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাটিং করেন দুই ওপেনার রনি তালুকদার ও লিটন দাস। ফলে পাওয়ার প্লেতে ৪৬ রান তুলে কোনো উইকেট হারাতে দেননি তারা।

তবে অষ্টম ওভারে এসে দলীয় ৫৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আদিল রশিদের করা বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন রনি। বিদায়ের আগে ২২ বলে তিন বাউন্ডারিতে ২৪ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। এরপর তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে লিটনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন আগের দুই ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাট করা নাজমুল হোসেন শান্ত।

এই দুজন মিলে ইংলিশ বোলারদের ওপর চড়াও হন। ফলে আগে ব্যাটিং করে তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ ৮৪ রানের জুটি গড়েন তারা। তবে ৪১ বলে নিজের ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি তুলে নেওয়া লিটন সেঞ্চুরির পথে থাকলেও ক্রিস জর্ডানের বলে ফিল সল্টের হাতে ক্যাচ দিয়ে দেন।

সাজঘরে ফেরার আগে ৫৭ বলে ১০ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৭৩ রান করেন তারকা এই ব্যাটার। এরপর পুরো সিরিজে ব্যাট হাতে আলো ছড়ানো শান্তর ৩৬ বলে ১ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৪৭ ও কাপ্তান সাকিবের ৬ বলে ৪ রানে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।

১৫৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা ইংলিশদের সামনে প্রথম ওভারেই তানভীরের হাতে বল তুলে দেন সাকিব। প্রথম বলেই ডেভিড মালানের কাছে বাউন্ডারি হজম করলেও তৃতীয় বলেই ফিল সল্টকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন তানভীর। ৫ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ইংলিশরা।

দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে দ্বিতীয় বলেই আবার বাংলাদেশকে উইকেট উপহার দিতে তাসকিন আহমেদ। মালানের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আউট দিয়েছিলেন মাঠের আম্পায়ার, তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান এই ওপেনার। এরপর অবশ্য পাওয়ার প্লে'র বাকিটা সময় টাইগার বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন মালান আর বাটলার মিলে।

পাওয়ার প্লে'র ৬ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৪৭ রান তুলে ফেলেছে ইংলিশরা। সপ্তম ওভারে সাকিবকে টান চার ছয়ে ১৩ রান তোলেন মালান। ১০ ওভার শেষে নিরবিচ্ছিন্ন এই জুটিতে ১ উইকেটেই ৭৭ রান তোলে ইংল্যান্ড।

তাসকিনের করা ১১তম ওভারে দুই চার মারেন বাটলার আর মালান। পরের ওভারে ইনিংসে প্রথম বল হাতে নেওয়া মেহেদি হসান মিরাজকে চার-ছয় মেরে ১২ রান তোলেন বাটলার। ওভারের শেষ বলে এক রান নিয়ে ৪৩ বলে নিজের ফিফটি পূরণ করেন মালান।

১৩তম ওভারে এসে দলীয় ১০০ রান তোলে ইংলিশরা। ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে থাকা এই জুটিকে থামান মুস্তাফিজ। ১৪তম ওভারে পরপর দুই বলে দুই ব্যাটারকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ইংলিশরা।

ওভারের প্রথম বলেই ফিফটি করা মালানকে উইকেটের পেছনে বাংলাদেশের আশা জাগিয়ে তোলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ৬ চার আর ২ ছয়ে ৪৭ বলে ৫৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন মালান। মালানকে ফিরিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে নিজের ১০০ উইকেট পূরণ করেন মুস্তাফিজ।

পরের বলেই বাটলার ফেরেন রান আউট হয়ে। মিরাজের সরাসরি থ্রোতে সাজঘরের পথ ধরেন ৩১ বলে ৪০ করা বাটলার। ১০০ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে ইংলিশরা। উইকেটে নতুন দুই ব্যাটার মঈন আলী আর বেন ডাকেট।

১৫ ওভার শেষে ইংল্যান্ড তোলে ৩ উইকেটে ১০৮ রান। ১৬ তম ওভারে হাসান মাহমুদ বোলিংয়ে এলে তাকে একটি করে চার-ছয় মেরে ১১ রান তোলে মঈন আর ডাকেট। তবে পরের ওভারেই জোড়া উইকেটে মিরপুরের গ্যালারিকে আবারও উল্লাসে মাতান তাসকিন। ওভারের দ্বিতীয় বলে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ১০ বলে ৯ রান করা মঈন। আর শেষ বলে ডাকেটের স্ট্যাম্প ভেঙে দিয়ে টাইগারদের জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন ঢাকা এক্সপ্রেস।

১৮ ওভার শেষে ইংলিশদের রান দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১২৮। শেষ ১২ বলে জয়ের জন্য দরকার ৩১ রান। ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই স্যাম কারানকে ফেরান সাকিব। ওভার থেকে আসে মাত্র ৪ রান। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিলো ২৭ রান। হাসান মাহমুদের প্রথম দুই বলে ২ চার মেরে ইংলিশদের নিভে যাওয়া প্রদীপে আশার আলো জ্বালেন ক্রিস ওকস। তবে আর পারেননি তারা। পরের চার বলে দুর্দান্তভাবে ইংলিশ ব্যাটারদের আটকে দিয়ে বাংলাদেশকে ১৬ রানের জয় এনে দেন হাসান মাহমুদ।