৬২ বছর পর ইতালির মাটিতে ইংল্যান্ডের জয়
বিশ্বকাপে পেনাল্টি মিসের হতাশা ঝেড়ে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়লেন হ্যারি কেইন। দুই গোলে এগিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পেল ইংল্যান্ড। বিরতির পর পাল্টা আক্রমণে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিলেও ব্যবধান ঘোচাতে পারল না রবের্তো মানচিনির দল। পাঁচ যুগের বেশির সময় পর ইতালির বিপক্ষে তাদের মাঠেই জয়ের মিষ্টি স্বাদ পেল ইংলিশরা।
নেপলসের দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দিবাগত রাতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়ের ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতেছে শেষ দিকে ১০ জন নিয়ে খেলা ইংল্যান্ড। ডেকলান রিসের গোলে শুরুতেই দলটি এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কেইন। দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান কমান মাতেও রেতেগি।
ইতালির বিপক্ষে ইতালির মাটিতে দীর্ঘ ৬ দশকের জয় খরা তো ছিলই, দলটির সঙ্গে গত এক দশকের মুখোমুখি লড়াইয়ের চিত্রও ইংলিশদের জন্য ছিল না সুখকর। কেইনের ইতিহাস গড়ার ম্যাচে ইংল্যান্ডের ৬২ বছরের অপেক্ষার অবসান ইতালিয়ানদের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সবশেষ জয় ছিল ২০১২ সালে, প্রীতি ম্যাচে ২-১ গোলে। আর ইতালির মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে তারা সবশেষ জিতেছিল সেই ১৯৬১ সালে, প্রীতি ম্যাচে ৩-২ গোলে। অবশেষে এবার শেষ হলো তাদের এই ব্যর্থ পথচলা।
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের গত আসরের ফাইনালে এই ইতালির বিপক্ষে হেরেই শিরোপা স্বপ্ন ভেঙেছিল সাউথগেটের দলের। সে ক্ষতে কিছুটা প্রলেপও দিতে পারল তারা। 'সি' গ্রুপের ম্যাচে প্রথম ছয় মিনিটে দুবার ইংল্যান্ডের রক্ষণে হানা দেয় ইতালি, উল্লেখযোগ্য যদিও কিছু করতে পারেনি তারা। এরপর শুরু হয় ইংলিশদের আক্রমণ।
পাঁচ মিনিটে দারুণ তিনটি সুযোগ তৈরি করে সফরকারীরা। অষ্টম মিনিটে বুকায়ো সাকার শট ঝাঁপিয়ে ফেরানোর চার মিনিট পর জুড বেলিংহ্যামের জোরাল শট কোনোমতে এক হাত দিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান জানলুইজি দোন্নারুম্মা। ওই কর্নার থেকেই এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। সাকার কর্নারে অরক্ষিত কেইন শট নেন, ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বল চলে যায় বক্সে অন্য পাশে রিসের পায়ে। বাঁ পায়ের প্লেসিং শটে গোলটি করেন ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার।
৩২তম মিনিটে দূর থেকে ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা করেন ক্যালভিন ফিলিপস। ম্যানচেস্টার সিটি মিডফিল্ডারের জোরাল নিচু শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে গেলে সে যাত্রায় বেঁচে যায় ইতালি। কেইনের ইতিহাস গড়ার ম্যাচে ইংল্যান্ডের ৬২ বছরের অপেক্ষার অবসান ৪৪তম মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় ইংল্যান্ড। ডি-বক্সে ডিফেন্ডার জিওভানি দি লরেন্সোর হাতে বল লাগলে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টি দেন রেফারি। সফল স্পট কিকে ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড একার করে নেন কেইন।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে টটেনহ্যাম হটস্পার ফরোয়ার্ড কেইনের মোট গোল হলো ৫৪টি, ৮১ ম্যাচে। ইংল্যান্ডের জার্সিতে সাবেক তারকা স্ট্রাইকার ওয়েইন রুনির গোল ৫৩টি।
ব্যবধান দ্বিগুনের পরের মিনিটেই ইংল্যান্ড পেতে পারত আরেকটি গোল। কিন্তু বক্সে ফাঁকায় বল পেয়েও অবিশ্বাস্যভাবে দূরের পোস্টে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন জ্যাক গ্রিলিশ। এমন সুবর্ণ সুযোগ হারিয়ে মাথায় হাত উঠে যায় ম্যানচেস্টার সিটির এই মিডফিল্ডারের। কেইনের ইতিহাস গড়ার ম্যাচে ইংল্যান্ডের ৬২ বছরের অপেক্ষার অবসান লড়াইয়ে ফিরতে বিরতির পর চাপ বাড়ায় ইতালি। গোলও পেয়ে যায় তারা ৫৬তম মিনিটে। কোনাকুনি শটে গোলটি করেন আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া অভিষিক্ত ফরোয়ার্ড রেতেগি।
নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট বাকি থাকতে বড় ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড। নিজেদের ডি-বক্সের বাইরে রেতেগিকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন ইংলিশ ডিফেন্ডার লুক শ। তবে একজন কম নিয়েও বাকিটা সময় ভালোভাবেই কাটিয়ে দেয় তারা। একেবারে শেষ সময়ে একটা হাফ-চান্স পেয়েছিলেন রেতেগি। তবে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি। কাঙ্ক্ষিত জয়ের আনন্দে বাছাই শুরু করে মাঠ ছাড়ে ইংল্যান্ড।