সেহরি ও ইফতারের আদর্শ পুষ্টি খাবার

সেহরি ও ইফতারের আদর্শ পুষ্টি খাবার

সেহরি

সেহরি ও ইফতারে যেমন পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে তেমনি কিছু খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

যেসব খাবার বাদ দেওয়া ভাল

* অতিরিক্ত চিনিযুক্ত শরবত, কোমল পানীয় কিংবা বাজারের প্যাকেট জাত শরবত।

* চা, কফি, অ্যালকোহল ইত্যাদি।

* অতিরিক্ত তেলে ভাজা পোড়া খাবার।

* অতিরিক্ত মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার।

* খোলা বাজারের ভাজা পোড়া ইফতার।

* ডালের তৈরি একাধিক পদ, যেমন একই দিনে পেয়াজি, ছোলা, হালিম ইত্যাদি।

* অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত গুরুপাক খাবার।

* অতিরিক্ত গরু, খাসির মাংসের নানারকম খাবার।

* প্রোসেস ফুড কিংবা ফাস্ট ফুড ইত্যাদি অস্বাস্থ্যকর খাবার তা যতই মুখোরচক হোক না কেন।

সারাদিন রোজা রাখায় আমাদের শরীরে এমনিতেই পানির ঘাটতি থাকে; তারমধ্যে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত শরবত খেলে চিনি তো আমাদের কোন উপকারেই আসবে না বরং অতিরিক্ত চিনি, কোষের পানি শুষে নেয় ফলে শরীর পানিশূণ্য হয়ে পড়ে। এর ফলে অবসাদ, অতিরিক্ত ক্লান্তি কিংবা তীব্র মাথা ব্যথা হতে পারে। এর ফলে পরের দিনের রোজা রাখাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া যারা ওজনাধিক্যতে ভুগছেন তারা চিনিযুক্ত শরবত খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন হয়ে যাবে। রোজায় অতিরিক্ত তেলে পোড়া খাবার খেলে ট্রান্সফ্যাট বেড়ে যেতে পারে। এতে করে অ্যাসিডিটি, গ্যাসের সমস্যা, কন্সটিপেশন কিংবা আলসারও হতে পারে। তাই এ তীব্র গরমে সারা দিন রোজা রেখে ইফতারে তেলে ভাজাপোড়া খাবার না রাখাই ভাল। কিংবা সুস্থ ও স্বস্থির সঙ্গে রোজা রাখতে চাইলে সেহরিতেও অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত গুরুপাক খাবার না রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। অনেকের অভ্যাস হচ্ছে ইফতারে সময় ডালের একাধিক আইটেম রাখেন, যেমন-ছোলা ভুনা, পেঁয়াজু কিংবা ডালের বড়া, হালিম ইত্যাদি খাবার। একই সময়ে একাধিক ডাল ও ডাল জাতীয় খাবার খেলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে, কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে এমন কি রক্তের ক্রিয়েটিনিনও বেড়ে যেতে পারে, এতে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

* সেহরিতে কী খাবেন

তীব্র গরমের সময় রোজা রাখার জন্য সেহরি গুরুত্বপূর্ণ। উপযুক্ত পরিমাণে এবং সুষম খাবারের মাধ্যমে সেহরি যদি আমরা গ্রহণ করে থাকি সারাদিনে রোজা রাখা সহজ হবে। সেহরি হবে সুপাচ্য, সহজে হজমযোগ্য, পর্যাপ্ত ক্যালরি সমৃদ্ধ সুষম খাবারের সমন্বয়। খাদ্য তালিকায় সব গ্রুপের খাবার থাকতে হবে যেমন, প্রোটিন, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত খাবার ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার জাতীয় খাবার। সম্ভব হলে লাল চালের ভাত কিংবা লাল আটার রুটি খেতে পারলে ভালো। লাল চাল কিংবা লাল আটাতে ক্যালরি কম কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার বা খাদ্য আশ রয়েছে যা আমাদের পেটে অনেকক্ষণ থেকে আমাদের ক্ষুধা লাগা থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘসময় রোজা রাখা অনেকটাই সহজ হয়। এর সঙ্গে অবশ্যই প্রথম শ্রেণির প্রোটিন যেমন, মাছ, মুরগির মাংস কিংবা ডিম রাখতে পারেন। বাজারের এ ঊর্ধ্বগতির মূল্যে অনেকেরই প্রতিদিন হয়ত মাছ, মাংস কিংবা ডিম ক্রয় করা খুব কঠিন হতে পারে। তাই এ অতিরিক্ত বাজার দরের সময় আমরা যদি সপ্তাহের সাত দিন ভাগ করে প্রথম শ্রেণির প্রোটিন গ্রহণ করতে পারি; যেমন, সপ্তাহে দুদিন মাছ, একদিন মুরগির মাংস, দুদিন ডিম এবং বাকি দুদিন পাঁচমিশালি ডাল, ছোলা, সয়া বা টফু, শিমের বিচি ইত্যাদির মাধ্যমে প্রোটিনের চাহিদা পুরণ করা সম্ভব। এসঙ্গে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে তাজা শাকসবজি ও ফলমূল রাখতে হবে ভিটামিন ও মিনারেলস পাওয়ার জন্য। এসব খাবারের মাধ্যমেই পেতে পারি পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে সাহায্য করে। সেহরিতে এককাপ তরল দুধ কিংবা হাফকাপ টকদই রাখতে পারেন। দই হচ্ছে খুব ভালোমানের প্রো বায়োটিক যা খারাপ ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে ভালোমানের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইলকে সুস্থ রাখে। সেহরিতে চিড়া দই কলা কিংবা দুধ চিরা কলা ও খেতে পারেন এতে করে পেট ঠান্ডা থাকবে এবং সব পুষ্টি উপাদান ও পাবেন। যাদের ব্লাড সুগার স্বাভাবিক আছে তারা সেহরিতে একটি খেজুর খেতে পারেন।

** ইফতারের খাবার কেমন হবে

* খেজুর : ইফতারে অবশ্যই একটি অথবা দুটি খেজুর বা খুরমা খাবেন। খেজুরে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলস এবং যথেষ্ট পরিমাণে ডাইটারি ফাইবার। খেজুরের ইনস্ট্যান্ট সুগার বা চিনি যা আমাদের সারা দিনের ক্লান্তি দূর করে খুব সহজে। একটি খেজুর থেকেই খুব দ্রুত এনার্জি পেতে পারি। খেজুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

* পানি ও পানি জাতীয় খাবার : সারা দিন রোজা রেখে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত শরবত খেলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত আট থেকে দশ গ্লাস কিংবা দশ থেকে বার গ্লাস পানি খাওয়া প্রয়োজন। আমরা অনেকে যে ভুলটা করে থাকি; অনেক সময় ইফতার খোলার সঙ্গে সঙ্গে আমরা হঠাৎ করে এক দুই গ্লাস পানি খেয়ে নেই। এতে অস্বস্তি হতে পারে, পেট ফাঁপা হতে পারে, গ্যাসের সমস্যা হয়ে হজমের ব্যাঘাত করতে পারে। তাই এসময়ে অতিরিক্ত পানি পান না করে প্রথমে এক ঢোক বা দুই ঢোক বিশুদ্ধ পানি পান করে খেজুর খেয়ে তারপরে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক শরবত খেতে পারি। ডাবের পানি, বেলের শরবত কিংবা তরমুজের শরবত। এগুলো চিনিমুক্ত হতে হবে অথবা বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল দিয়েও আমরা শরবত করে খেতে পারি।

* দই চিড়া কলা : ইফতারের শুরুতে অতিরিক্ত তেলে ভাজাপোড়া খাবার না দিয়ে যদি আমরা দই চিড়া কলা কিংবা ওটস দুধ কলা এই জাতীয় সুষম খাবার এবং ঠান্ডা জাতীয় খাবার দিয়ে যদি আমরা ইফতার গ্রহণ করি তাহলে এ গরমে স্বস্তি এবং সুস্থতা দুটিই পাব। টকদইতে পাব পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রোবায়োটিক। চিড়া বা ওটস দুটোই কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে এবং একটি কলা থেকেই কিন্তু আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম এবং আয়রন পেতে পারি।

* সবজি খিচুড়ি : বাজারের এ ঊর্ধ্বগতির সময় প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য একটু মুখেরোচক ইফতার করতে চাইলে পাঁচমিশালি ডাল, চাল এবং নানা রকমের সবজি দিয়ে একটি পাতলা সবজি খিচুড়ি কিংবা ফিস ফাস করতে পারি।

* ছোলা : ছোলা বা বুট অতিরিক্ত গুরুপাক না করে কাঁচা খেতে পারি কিংবা অল্প একটু ছোলা বা বুট সিদ্ধ তেলে একটু হালকা পেঁয়াজ কাঁচামরিচ দিয়ে শসা কুচি, গাজর, টমেটো, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা ও সরিষার তেল দিয়ে সালাদ করে খেতে পারি।

* তাজা ও মৌসুমি ফল ও শাক সবজি : ইফতার টেবিলে সহজলভ্যতা অনুযায়ী তিন থেকে চার রকমের মৌসুমি ফল রাখতে হবে।

* ভাল মানের ফ্যাট ও বাদাম : ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভালমানের ফ্যাট পেতে হলে পরিমাণ মত বিভিন্ন ধরনের বাদাম রাখতে পারেন সন্ধ্যা রাতের খাবারে। এছাড়া চিয়া সিড, তোকমা, তিলের বিচি, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, তিসির বিচি খেতে পারেন নানা ধরনের রেসিপি করে।