শীতে মুখ বেঁকে গেলে কী করবেন
শীতকালে বাহারি রোগ দেখা যায়। মুখ বেঁকে যাওয়ার সমস্যাও দেখা যায় কারো কারো। যদিও ফেসিয়াল প্যারালাইসিসের সঙ্গে শীতের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু এ রোগের একটি রিস্ক ফ্যাক্টর হলো শ্বাসনালির ঠান্ডাজনিত ভাইরাল ইনফেকশন এবং ঠান্ডা লেগে কানের ইনফেকশন, যা এ শীতের সময় সচরাচর বেশি দেখা যায়।
শীতমৌসুমে ফেসিয়াল প্যারালাইসিসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। এটি এমন একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে মুখের একপাশের পেশিগুলো হঠাৎ অবশ হয়ে যায়। সপ্তম ক্রেনিয়াল নার্ভ যে কোনো কারণে আক্রান্ত হওয়ায় ফেসিয়াল মাসলের একপাশে দুর্বল অথবা প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়াকে ফেসিয়াল পালসি বলা হয়। যখন সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ পাওয়া যায় না, তখন একে বেলস পালসি বলা হয়। যে কোনো বয়সের মহিলা ও পুরুষের হতে পারে, তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের এ রোগটি বেশি দেখা যায়।
শীতে মুখ বেঁকে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের হেড-নেক সার্জন ডা. মো. আবদুল হাফিজ শাফী।
* কারণ
যদিও ফেসিয়াল প্যারালাইসিসের মূল কারণ জানা যায়নি, তবে এটি ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হতে পারে। যেমন- হারপিস সিমপ্লেক্স, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ বিভিন্নরকম ভাইরাল ইনফেকশন, মধ্যকর্ণের প্রদাহজনিত ইনফেকশন, ঠান্ডাজনিত কারণে (শীতের সময় মোটরসাইকেল চালানো, শীতের মধ্যে পানিতে নেমে সারারাত মাছ ধরা, শীতে খেলাধুলার পর অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করা, শীতে দীর্ঘ সময় ভ্রমণ যাত্রা ইত্যাদি), মস্তিষ্কে অথবা মাথার খুলিতে আঘাতজনিত কারণে, কানের অপারেশন পরবর্তী জটিলতা।
* লক্ষণ
* মুখ এক দিকে বেঁকে যায়।
* আক্রান্ত অংশের চোখ বন্ধ হয় না। অনেক সময় আক্রান্ত অংশের চোখ জ্বলে/পানি পড়ে।
* দাঁত দেখাতে গেলে মুখ বেঁকে যায়।
* কোনো কিছু খেতে গেলে খাবার একপাশে চলে যায়। খাবার মুখের ভেতরের আক্রান্ত অংশে জমা হয়ে থাকে।
* খাবারের স্বাদ কমে যায় বা অনুভূত হয় না।
* কপাল ভাঁজ করতে পারে না।
* হঠাৎ উচ্চ আওয়াজ শুনতে পায়।
* চিকিৎসা
উপরে উল্লিখিত সমস্যা দেখা দিলে যত দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন, ততই ভালো। কেননা, স্টেরয়েড বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শুরু করলেই সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া চিকিৎসক বিশেষ ধরনের ব্যায়াম শিখিয়ে দেবেন, যা দিনে কয়েকবার করতে হবে। এ সময় চোখের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। যেহেতু চোখ সহজে বন্ধ হয় না, তাই তা শুষ্ক হয়ে যায়। চোখের ড্রপ ব্যবহার ছাড়াও রাতে ঘুমানোর সময় বিশেষ প্যাঁচ ব্যবহার করে চোখ বন্ধ রাখা হয়। খাবার খেতে সমস্যা হলে ধীরে ধীরে তরল বা আধা তরল খাবার খেতে হবে। বেশিরভাগ বেলস পালসি কয়েক দিন বা কয়েক মাসের মধ্যেই সেরে যায়। কিছু ক্ষেত্রে সমস্যাটা দীর্ঘমেয়াদিও হতে পারে। বেলস পালসি গুরুতর গোছের কোনো রোগ নয়, তবে এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ অথবা নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবেন। প্রয়োজন হলে পাশাপাশি ফিজিওথেরাপিও নেওয়া লাগতে পারে।
* শীতে চাই বিশেষ সতর্কতা
মাথা ঢাকার ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা উদাসীন থাকি। মাথা, নাক, মুখ, কান-উপযুক্ত শীতের কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন। শীতে টুপি, মাফলার, মাস্ক পরা ছাড়বেন না। শীতের প্রকোপে বাইরে গেলে খেয়াল রাখতে হবে কান দিয়ে যাতে বাতাস না ঢুকে। রাতের শেষদিকে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা আছে, তাই ঘুমানোর সময় এ ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।