সেপ্টেম্বরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে চূড়ান্ত হবে বাংলাদেশের ভাগ্য

সেপ্টেম্বরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে চূড়ান্ত হবে বাংলাদেশের ভাগ্য

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে রীতিমতো টাগ অফ ওয়ার চলছে। দুটি দেশ, ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার বলছে, তারা বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। শুধু মুখের কথায়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বসে নেই। একের পর এক মার্কিন প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করছেন, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলছেন। আগামী নির্বাচনে যেন পক্ষপাত না হয়, নির্বাচনে যেন কোনো রকম কারচুপি না হয়, সেজন্য গত ২৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। সুস্পষ্টভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সরকারের উপর একটি চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে এবং সেখানে নির্বাচনের পাশাপাশি সুশাসন, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়গুলোকেও সামনে নিয়ে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রাসী অবস্থানের সমালোচনা করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। 

তিনি গতকাল (১৬ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় বলেছেন, বঙ্গোপসাগরের কর্তৃত্ব নেওয়ার জন্য কেউ কেউ বাংলাদেশে একটি তাবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই বক্তব্য এবারই প্রথম নয়, বিভিন্ন সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র যে তাকে ক্ষমতায় আনতে চায় না, এরকম বক্তব্য উপস্থান করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে রীতিমতো সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, ঠিক সেই সময়ে বিপরীত অবস্থানে ভারত। ভারতের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং জনগণ ঠিক করবে সেখানে কিভাবে নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে যাই হোক না কেন, বাংলাদেশে যেন সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান না ঘটে এবং দুই দেশের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা যেন রক্ষা পায়- এই বার্তাটিও ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এরকম বাস্তবতায় গতকালও স্মিতা পন্স বলেছেন, ১০ বছরে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে গতিময়তা অর্জিত হয়েছে, তা অব্যাহতভাবে ধরে রাখা দরকার। সুস্পষ্টভাবেই ভারত বর্তমান সরকারের প্রতি একটি সহানুভূতিশীল অবস্থানে রয়েছে এবং আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে যেন সরকার কোনো রকম চাপে না পরে, সে ব্যাপারে ভারত যথেষ্ট সহানুভূতিশীল।

সাম্প্রতিককালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন এবং সেখানেও তিনি বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে একাধিক গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশিত হয়েছে। তবে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের ব্যাপারে ঠিক কি বলেছেন এবং তার জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, সে সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশ নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে, এটি কূটনৈতিক মহলে এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়। শেষ পর্যন্ত এই দুই প্রভাবশালী দেশ কি ঐক্যমত হতে পারবে, নাকি ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে ভূমিকা রাখবে- এটি নিয়েই কূটনৈতিক মহলে নানা রকম আলাপ-আলোচনা চলছে। 

কিন্তু বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত অভিন্ন পন্থা গ্রহণের সুযোগ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। দীর্ঘ দিন ধরেই এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র হলো ভারত এবং নানা কারণেই ভারতের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্ভরশীল। আর সে কারণেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের থেকে ভিন্ন অবস্থান নিক- এটি ভারত চায় না। আর তাই আগামী সেপ্টেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনেরে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের খবর পাওয়া যাচ্ছে। জয়শঙ্কর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। আর এখানেই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে তার বাংলাদেশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি হওয়ার কতা রয়েছে। 

উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও যোগ দিবেন। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মেঘ কেটে যাবে এবং সঙ্কট সমাধানের একটি পথ চূড়ান্ত হবে।