শাহজাহান ওমরকে নিয়ে যা বললেন স্থানীয় নেতারা
ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তিনি দল থেকে বহিষ্কারও হয়েছেন। তিনি নৌকা প্রতীক পাওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ গত রোববার সারা দেশে দল মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে।
তখন রাজাপুর-কাঁঠালিয়া নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানে হঠাৎ বিএনপির এক নেতার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার খবর বিস্ময় তৈরি করে নেতাকর্মীদের মধ্যে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শাহজাহান ওমরের নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা নেই। এ আসনে এখন পর্যন্ত বজলুল হক হারুন নৌকার মনোনীত প্রার্থী। ’
এর বাইরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. মনিরুজ্জামান এ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আর তৃণমূল বিএনপির পক্ষে এখানে প্রার্থী হচ্ছেন জসীম উদ্দীন তালুকদার।
শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, শাহজাহান ওমরকে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা মেনে নেবেন না। তাঁকে রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ার জনগণ প্রত্যাখ্যান করবেন।
শাহজাহান ওমরের এভাবে দল পাল্টানো মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন আজ রাত আটটার দিকে উপজেলার বাগরি এলাকার তাঁর বাসভবনে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে বক্তব্যে শাহজাহান ওমরের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার তীব্র প্রতিবাদ জানান।
বিএনপি নেতা নাসিম আকন বলেন, ‘আমরা নেতাকর্মীরা তাঁর হাতে-পায়ে ধরেছি। তাঁকে বুঝিয়েছি, আপনি জীবনে সবকিছু পেয়েছেন এখন দলের সাথে বেইমানি করবেন না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, তিনি দলত্যাগ করে দলের নেতাকর্মীদের সাথে অন্যায় করেছেন। বেইমানি করেছেন। ’
রাজাপুর বাইপাস মোড়ে উপজেলা বিএনপি কার্যালয় ছিল শাহজাহান ওমরের জমিতে। সেখান থেকে বিএনপির সাইনবোর্ড ও ব্যানার ফেস্টুন নামিয়ে ফেলা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এই কার্যালয় এখন শাহজাহান ওমরের নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় ৪ নভেম্বর রাতে শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ঢাকার নিউমার্কেট থানার বাসে আগুন দেওয়ার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই মামলায় তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতাকে।
প্রায় চার সপ্তাহ কারাবন্দী থাকার পর বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান শাহজাহান ওমর। সন্ধ্যার পরই কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইউটিসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কথা জানান শাহজাহান ওমর। তিনি বলেন, ঝালকাঠি–১ আসনে তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নৌকার প্রার্থী হিসেবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তিনি। এরপর তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।