নারীদের কর্মসংস্থানে বাধা, আফগানিস্তানে কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিলো ৫টি সংস্থা
এনজিওতে আফগান নারীদের কর্মসংস্থানে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় আফগানিস্তান থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে ৫টি শীর্ষ সংস্থা। দাবি, নারীকর্মীদের মাধ্যমেই মানবিক ও চিকিৎসা সহায়তা পেতেন রক্ষণশীল দেশটির মেয়েরা। নারীদের কাজের সুযোগ বন্ধ হলে, সেবা বঞ্চিত হবেন দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী। তালেবানের এমন সিদ্ধান্তের পর দেশটিতে কর্মসূচি পরিচালনা অর্থহীন বলে মনে করছে সংস্থাগুলো। এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তায় ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে দেশটির লাখ লাখ মানুষ। খবর আলজাজিরার।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আমিনা পরিবারসহ কাবুলেঅ থাকেন। কাজ করতেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার একটি স্কুলে। হঠাতই তালেবানের এক নির্দেশে অনিশ্চয়তায় বদলে গেলো তার জীবন।
প্রাইভেট স্কুলে সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে কর্মরত আমিনা এ প্রসঙ্গে বলেন, তালেবান আমাদের কাজ করতে দেবে না। অথচ আমার স্বামী অসুস্থ, বিছানায় পড়ে আছে। এখন আমার সংসারের খরচ কে চালাবে? বাড়ি ভাড়া, বাকি সব বিল, স্বামীর ওষুধ খরচ। আয় না করলে এই খরচের অর্থ কোত্থেকে আসবে?
তালেবান সরকার এনজিওতে নারীদের কর্মসংস্থান নিষিদ্ধের পর বিপাকে আমিনার মতো হাজারো পরিবার। কেবল নারী কর্মীরাই নয়, এমন সিদ্ধান্তের বলি হবে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পাওয়া সাধারণ মানুষেরা।
আফগানিস্তানে সেভ দ্য চিলড্রেনে প্রায় আড়াই হাজার ও আইআরসিতে ৩ হাজার আফগান নারী কর্মী কাজ করেন। এনআরসিতেও অর্ধেক কর্মীই নারী। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো বলছে, রক্ষণশীল আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকার নারীরা চিকিৎসাসহ অন্যান্য সহায়তা পেতেন নারী কর্মীদের মাধ্যমেই। নারীদের কাজের সুযোগ বন্ধ হলে সেবা বঞ্চিত হবে লাখ লাখ পরিবার।
এ প্রসঙ্গে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের চিফ অপারেটিং অফিসার ডেভিড রাইট, তালেবানের বিধি মানতে হলে অর্ধেক জনবল ছাড়া অফিস চালাতে হবে। অথচ, এখানে নারীদের কাছাকাছি পৌঁছাতে হলে নারী স্বাস্থ্যকর্মীই দরকার। তাই তাদের ছাড়া কাজ করা সম্ভব না।
এমন পরিস্থিতিতে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন বলে মনে করছে অনেক সংস্থাই। তাই এক যৌথ বিবৃতিতে আফগানিস্তানে কর্মসূচি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায়, সেভ দ্য চিলড্রেন, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল-এনআরসি ও কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল। একই পথ অনুসরণ করেছে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি-আইআরসি ও ইসলামিক রিলিফ।
আফগানিস্তানে কর্মরত নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল-এনআরসি এর কান্ট্রি ডিরেক্টর নেইল টার্নার এ প্রসঙ্গে বলেন, নারীকর্মী ছাড়া আমাদের কর্মসূচি অর্থহীন। তাই কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তালেবানের প্রতি সিদ্ধান্ত বদলের আহ্বান জানাই।
গত বৃহস্পতিবার মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় আফগানিস্তানে। এর দু’দিন পরই, পর্দাপ্রথা যথাযথভাবে মেনে চলছেন না নারীরা- এমন অভিযোগে নারীদের এনজিওতে কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তালেবান সরকার। নিয়ম ভঙ্গ করলে সংস্থার লাইসেন্স বাতিলের হুমকিও দেয় তালেবান।
প্রসঙ্গত, কর্মসংস্থানে প্রভাবের কারণে আরও বাড়বে দেশটির অর্থনৈতিক সংকট এমন আশঙ্কা এখন জাতিসংঘের। তাই, এ ইস্যুতে তালেবানের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে সংস্থাটি।