ঝালকাঠিতে আলোচিত শিক্ষিকা মুনা আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় স্বামীর বিরুদ্ধে চার্জশীট
কামরুজ্জামান সুইট, ঝালকাঠি::- ঝালকাঠিতে আলোচিত স্কুল শিক্ষিকা আত্মহত্যার প্ররোচনায় ও প্রতারনা পূর্বক ধর্ষন মামলার আসামী সাবেক স্বামী ঝালকাঠি ডাচ বাংলা ব্যাকের পাবলিক রিলেশন অফিসার মোঃ ফরিদুল ইসলাম (৩৩)কে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ দঃবিঃ ৩০৬/৪১৯ধারায় অভিযুক্ত করে চার্জশীট প্রদান করেছে পিবিআই। তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক মোঃ বায়জিত আকন একই সাথে মামলার অপর দুই আসামী ফরিদের মা রিনা বেগম ও ভাই হামিদুর রহমান সুজনকে দঃবিঃ ৩০৬/৩৪ধারায় চার্জশীটে অভিযুক্ত করেছেন। বাদী পক্ষে এড. ফয়সাল খান আদালতে মামলাটি পরিচালনা করেন।
মামলার বিবরন ও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, সুলতানা জাহান মুনার সাথে বাসন্ডা ইউনিয়নের দারখি গ্রামের আমির আলীর ছেলে মোঃ ফরিদুল ইসলামের সাথে ২২ জুলাই ২০১৩সালে বিবাহ হয়। তাদের সংসারে হুমায়রা মেঘা (৮) নামে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে আসামীরা যৌতুকের জন্য নিহত মুনা কে নানাবিধ শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করতে থাকে। আসামীদের অত্যাচার-নির্যাতনের ফলে তাদের মধ্যে দুই বার ডিভোর্স হলেও ফরিদের অনুরোধ, মেয়ের ভবিষ্যত ও লিখিত অঙ্গিকারের মাধ্যমে পুনরায় বিবাহ হয়। এরমধ্যে গত ৩০ জুন ২০২২ইং তরিখ উভয়ের সম্মতিতে খোলা তালাক দিলেও একমাস পরে গত ১৮জুলাই ফরিদ ‘নিজের ভূল স্বীকার করে মেয়েকে ছাড়া বাঁচবে না’ জানিয়ে মুনার কাছে ক্ষমা চেয়ে পুনরায় বিয়ের অনুরোধ জানায়। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মুনা নমনীয় হলে ফরিদ তাদের নিয়ে হরিনপালা বেড়াতে গিয়ে মেয়েসহ অনেক ছবি তোলে ও স্বামী-স্ত্রীর ন্যায় বসবাস করে। সেখানে ফরিদ বলে ফিরে এসে ১সেপ্টেম্বর পুনরায় কাবিন রেজিষ্টি করে বিয়ে করবে। নির্ধারিত তারিখে ফরিদুল গা-ঢাকা দিলে তার প্রতারনা বুঝতে পেরে মুনা মানসিক ভাবে ভেংগে পরে ও সেদিন ঝালকাঠি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরের দিন ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে ও সুইসাইড নোট লিখে নিজ ডায়রীর মধ্যে রেখে ফ্যানের সাথে ফাস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, দাম্পত্ত্য কহল ও অঙ্গীকারনামার কপি, হরিনপালা হোটেলের রেজিষ্টার-ছবি, মোবাইল সিডিআর, সুইসাইড নোট, হাতের লেখাসহ বিশেষজ্ঞ মতামত ও স্বাক্ষী-প্রমানে প্রাথমিক ভাবে সুলতানা জাহান মুনাকে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে ধর্ষন ও আত্মহত্যার প্ররোচনা অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট প্রদান করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ইং তারিখ প্রতারনা ও অবিচারের শিকার হয়ে কৃষ্ণকাঠি এলাকার টাইগার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুলতানা জাহান মুনা (২৯) শহরের বিশ্বরোডে ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। এঘটনায় তার পিতা অব:সমবায় কর্মকর্তা মোঃ আবুল বাসার বাদী হয়ে ফরিদুল ইসলামসহ ৩জনকে আসামী করে গত ৫ এপ্রিল ২০২৩ইং তারিখ ঝালকাঠি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে না.শি.নি. দমন আইনের ২০০০(সংশোধনী ২০০৩) এর ৯ (১)সহ ৩০৬/৩৪ ধারায় নালিশী মামলা (নং-৬১/২০২৩) দায়ের করেন। আদালত অভিযোগটি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন প্রদানের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিরোজপুরকে নিদের্শ দিলে পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক মোঃ বায়জিত আকনকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।