চিংড়ি ঘেরে কাঁকড়া চাষ

চিংড়ি ঘেরে কাঁকড়া চাষ

বেড়িবাঁধের একপাশে বসতি, অন্য পাশে শাখা নদী এবং সাগর। এ এলাকার বাসিন্দাদের আয়ের উৎস হচ্ছে মৎস্য খাত। এখানকার মানুষজন কেউ শাখা নদীতে মাছ ধরে জীবিকাহ নির্বাহ করছে। কেউ বাড়ির আঙ্গিনায় ছোট ছোট ঘের করে চিংড়ি মাছ চাষ করছেন। গত ৪-৫ বছরে অনেকটাই পরিবর্তন ঘটেছে। এই এলাকার ঘেরগুলোতে প্রথমে চিংড়ি চাষ করলেও স্বল্প পুঁজিতে বাড়তি আয় হিসেবে এখন কাঁকড়া চাষ করছে। বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানি হওয়ায় দিন দিন চাষীর সংখ্যা বাড়ছে। 

গতকাল পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চর আন্ডা গ্রামের এক ঘের থেকে কাঁকড়া ধরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি জন্য নিয়ে যাচ্ছেন কাঁকড়া ব্যবসায়ী মুছা। কাকঁড়া চাষ শুধু চর আন্ডা গ্রামে নয়, শুরু হয়েছে একই ইউনিয়নের বালিয়াবুনিয়া, চর বেষ্টিন ও ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের গহিনখালী গ্রামে।

ব্যবসায়ীরা জানান, স্বল্প পুঁজিতে নদী ও সাগর তীরবর্তী ঘেরে কাঁকড়া চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। প্রথমে চিংড়ি ঘেরে চাষ করলেও এখন আলাদা প্রক্রিয়ায় কাঁকড়ার চাষ হচ্ছে। এতে দিন দিন উদ্বুদ্ধ হয়ে কাঁকড়া চাষীর সংখ্যা বাড়ছে। কাঁকড়া চাষে সরকারিভাবে সঠিক পরামর্শ এবং সহযোগিতা করলে এর প্রসর ঘটবে বলে জানান চাষীরা।

 

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ম্যাড ক্রাব বা শীলা কাঁকড়ার চাহিদা, চড়া মূল্য এবং কম সময়ে বাজারজাত করায় উপকূলীয় চাষীদের কাছে কাঁকড়া চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অপরিপক্ক ও ছোট কাঁকড়া ধরার উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে আস্তে আস্তে কাকড়ার প্রজনন বৃদ্ধি থুবরে পরার শঙ্কাও থেকে যায়। কাঁকড়া চাষকে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীল রাখতে এবং চাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে হলে চিংড়ির ন্যায় হ্যাচারিতে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

কাঁকড়া চাষী মুছা বলেন, ‘৪-৫ বছর আগে ছোট ছোট ঘেঁরে কাঁকড়া চাষ করে আসছি। বিভিন্ন স্থানের জেলেদের কাছ থেকে ছোট সাইজ এবং অপরিপক্ক কাঁকড়া সংগ্রহ করতে হয়। আমরা স্থানীয় পাইকারদের কাছে কাঁকড়ার সাইজ অনুযায়ী বিভিন্ন দামে বিক্রি করে থাকি। স্বল্প পুঁজি থাকার কারণে বেশি কাঁকড়া কিনে চাষ করা সম্ভব হয় না। কাঁকড়া চাষে ঝুঁকি কম লাভ বেশি। এ কারণে চাষী বাড়ছে।’       

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান, মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বর্তমানে কাঁকড়া চাষের চেয়ে ফ্যাটেনিং করে বাজারজাতকরণ বেশি লাভজনক। সাধারণত অপরিপক্ক স্ত্রী কাঁকড়া (অপরিপক্ক গোনাড এবং ওজন ১৭০ গ্রামের নিচে) এবং অপুষ্ট পুরুষ কাকড়া (কম মাংস এবং ওজন ৩৫০ গ্রামের নিচে) বিদেশে রপ্তানি হয় না। এগুলো স্থানীয় বাজারে খুব কম দামে বিক্রি হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ও মূল্য বাড়ায় কাঁকড়া চাষে আগ্রহ বাড়ছে। কাঁকড়া চাষের তেমন পরিশ্রম নেই, উৎপাদন ব্যয়ও তুলনামূলক কম। এ খাত থেকে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ বছরে প্রায় শত কোটি টাকা।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল হক বাবুল বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কাঁকড়া চাষ করতে দেখা যায়। কিন্তু সরকারিভাবে চাষীদের কোন সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ না থাকলেও বিভিন্ন এনজিও তাদের পরামর্শ এবং আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে।’