ছয়তলা থেকে পড়ে ইবি ছাত্রীর মৃত্যু, 'আত্মহত্যা নাকি হত্যা'

ছয়তলা থেকে পড়ে ইবি ছাত্রীর মৃত্যু, 'আত্মহত্যা নাকি হত্যা'

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী নওরীন নুসরাত স্নিগ্ধার রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১৬ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুর‍্যালের সামনে এই কর্মসূচির আয়োজন করে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত 'বন্ধন-৩২' ব্যাচ।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক সহিদা আখতার ও বন্ধন-৩২ ব্যাচের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের হাতে ‘আমিও একজন নারী, আমি ভয়ে আছি’, ‘আমার ক্যাম্পাসের সম্পদ ফেরত দিন’, ‘ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই’, আত্মহত্যা নাকি হত্যা?’, ‘তার পরিবারকে আইনি সুরক্ষা প্রদান করা হোক’, ‘আমরা বন্ধু হত্যার বিচার চাই, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হোক’, ‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই’, ‘ছাদ থেকে পড়লো নাকি ফেলে দিলো?’ সহ নানা স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন দেখা যায়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নওরীন নুসরাত এভাবে আত্মহত্যা করতে পারেনা। এর পিছনে কোন রহস্য রয়েছে। যে মেয়েটি আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন, তার দ্বারা এ ধরণের কাজ হওয়া সম্ভব নয়। এর পিছনে যে রহস্য রয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বিবাহের পর নওরীনকে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো। তাকে তার বাবা মা থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। এমনকি বাবা মা জামাইকে ফোন দিয়ে তার বাসায় মেয়ের কাছে যেতে চাইলে তাদেরকে সন্ধ্যা ৬ টার পর আসতে বলা হয়। ঠিক তখনই তার মৃত্যু হয়। শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তাকে পড়াশোনা না করে দ্রুত বাচ্চা নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলো। মৃত্যুর পর তার পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করলে পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন মামলা নেয়নি। এটা আসলে কিসের ইঙ্গিত করে? আমরা চাই তার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক।

বিভাগের সভাপতি সাহিদা আখতার বলেন, নওরীনের মৃত্যুর পর তার পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করলে এখন পর্যন্ত কোন মামলা নেওয়া হয়নি। কোন আত্নহত্যার ঘটনা ঘটলে পুলিশ বাদি হয়ে থানায় একটা ইউডি মামলা হয়ে থাকে, কিন্তু এখন পর্যন্ত ইউডি মামলার তদন্ত কাজ শুরু হয়নি। তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন বলছে, নওরীন ৬ তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্নহত্যা করেছে। যদি সে ৬ তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্নহত্যা করেও থাকে, তাহলে যে কক্ষটিতে তার বসবাস ছিল সে কক্ষটি কেন পুলিশ সিলগালা করল না? তারা কেন তার কক্ষ থেকে কোন আলামত সংগ্রহ করলো না? এটা আসলে কিসের ইঙ্গিত বহন করে?

তিনি আরও বলেন, আমরা এর আগেও তার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ফলাফল পাইনি। তার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন চালিয়ে যাব।

এর আগে গত ১২ আগস্ট একই দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ। বিভাগের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে অংশগ্রহণ করেন।

প্রসঙ্গত, গত ০৮ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সাভারের আশুলিয়ায় পলাশবাড়ী নামাবাজারের একটি ভাড়া বাসার ছয়তলা থেকে নিহত হন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থী নওরীন নুসরাত। স্বামী ইব্রাহীম খলিলের সঙ্গে সেখানে থাকতেন নওরীন। এর আগে গত ২১ জুলাই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। পরে স্বামীর সঙ্গে ঢাকাতে থাকতেন। সেখানে থাকাকালীন বিয়ের ১৬তম দিনে তার মৃত্যু হয়।