জাতীয় শোক দিবসই পালন করেন না এমপি নদভী

জাতীয় শোক দিবসই পালন করেন না এমপি নদভী

টানা দুই মেয়াদে প্রায় ১০ বছর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। এ সময়ের মধ্যে ১০ বার জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। তবে কোনো বারই জাতীয় শোক দিবস পালন করেননি আওয়ামী লীগের এই সাংসদ। এবারও এর ব্যতয় ঘটেনি। 

গতকাল মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। দিবসটি সারা দেশ তথা বিশ্বে পালন করেছে আওয়ামী লীগ তথা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি। তবে শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ছিলেন না চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। তিনি কোথাও দিবসটি পালন করেছেন কি না তাও সঠিক জানেন না এ সংসদীয় আসনের নেতারাও। প্রতিটি জাতীয় শোক দিবসে এমপি নদভীর্ এমন অনুপস্থিতিকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা।

জানা যায়, শোক দিবস উপলক্ষে সংসদীয় আসনের সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। তবে এ কর্মসূচিতে ছিলেন না এমপি আবু রেজা নদভী।

অপরদিকে লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে একই কর্মসূচি পালন করা হয়। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হলেও সেখানেও দেখা মেলেনি আবু রেজা নদভীর।

জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, আমাদের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী ২০১৪ সালে থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। তিনি তখন থেকে থানা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেন না। থানা আওয়ামী লীগের কোনো অনুষ্ঠানে আসেন না। তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় কোনো অনুষ্ঠানও করেন না। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও কোনো অনুষ্ঠানে তিনি লোহাগাড়ায় ছিলেন না।

সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব বলেন, আমাদের সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসন ও থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস কোনো অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী আসেননি। আমি উপজেলা প্রশাসন ও থানা আওয়ামী লীগের দুটি অনুষ্ঠানে ছিলাম। আমাদের সংসদ সদস্য সাতকানিয়া থানা আওয়ামী লীগের কোনো অনুষ্ঠানে আসেন না।

সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন শেষে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, তিনি ও তার পরিবারের সদস্য এবং ১৫ আগস্ট শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিলে অনুষ্ঠানে ছিলেন না সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। আগামী ২৫ আগস্ট  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সাতকানিয়া রিসোর্টে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে কেন্দ্রীয়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যকেও দাওয়াত করা হবে বলেও তিনি জানান।

বঙ্গবন্ধু গবেষক  অধ্যাপক ড. মাসুম চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে বহুভাবে সম্মান ও ভালোবাসা যায়। হয়তো কেউ লিখে, দোয়া ও জিয়ারত ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান জাতীয়ভাবে পালন করা হয়। সেখানে না যাওয়ার অর্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার সামিল।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী আওয়ামী লীগ করার বয়স বেশি দিন হয়নি। যারা সত্যিকার আওয়ামী লীগার তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের দিন নানা অনুষ্ঠানে জাতির জনককে স্মরণ করেন। হয়তো তিনি এখনো আওয়ামী লীগার হতে পারেননি।  

এদিকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সংসদ সদস্য নদভী হয়তো জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুতে শোকাহত। কারণ তিনিও জামায়াত ঘেঁষা ছিলেন। তার শ্বশুর জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। তার সাথে জামায়াতের যে সম্পর্ক তা সবাই জানে। কাজেই তিনি আওয়ামী লীগের এমপি হলেও মনেপ্রাণে এখনও জামায়াতি আদর্শ বুকে রেখেছেন বলে মনে হচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর মোবাইল নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগরা করা হয়। কিন্তু তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তিনি দুই মেয়াদে এমপি থাকাকালীন সময়ে ১০ বার জাতীয় শোক দিবসের প্রোগ্রাম উক্ত দুই উপজেলায় পালিত হলেও তিনি কোনবারও ১৫ আগষ্টের দিন উপস্থিত হতে পারেন নাই। উপরন্তু ২০১৭ সালের ১৫ আগষ্টের দিন স্বপরিবারে দেশের বাইরে ভ্রমনে গিয়েছিলেন

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, উনি কিভাবে ১৫ আগষ্ট পালন করবেন।  এইদিন তো উনার জন্মদিন, তিনি ঘরোয়া ভাবে এই দিবসটি জন্মদিন হিসেবে পালন করেন। এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক। তিনি এমপি হয়েছেন, তবে আওয়ামী লীগ হতে পারেন নাই।