গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন: জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল (ভিডিওসহ)

ঋণখেলাপির দায়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারলেন না বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তবে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বহাল রয়েছে। 

রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। 

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন জাহাঙ্গীর। তার মা জায়েদা খাতুনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন। 

মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর ‘নৌকার বিরুদ্ধে নয়, ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন’ বলে মন্তব্য করেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ‘আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী’ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। 

মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ঋণের জিম্মাদার হিসেবে জাহাঙ্গীরকে খেলাপি ঘোষণা দিয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

এসময় অবশ্য বাছাই কমিটির কাছে ওই ঋণের টাকা পরিশোধর কাগজপত্র জাহাঙ্গীর আলম এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দেখায়। তার আইনজীবীও এ বিষয়ে নানা যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন।

মনোনয়নপত্র বাতিলের পর জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আদালতে আপিল করার কথা জানান।

জাহাঙ্গীরের মা ছাড়াও যাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান, বিএনপি নেতা হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহনুর ইসলাম রনি, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডলসহ ৯ জন। 

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রোববার সকাল থেকে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ মে। ৯ মে প্রতীক বরাদ্দ শেষে আগামী ২৫ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

২০২১ সালের নভেম্বরে বেফাঁস মন্তব্য করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন জাহাঙ্গীর আলম। অনিয়ম, দুর্নীতির নানা দায়ে মেয়র পদও খোয়ান জাহাঙ্গীর। 

এরপর দলে ভেড়ার জন্য নানা চেষ্টা-তদবির চালানোর পর অবশেষে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে দলে ফিরিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। 

ভোটের তফসিল ঘোষণার পর গত ১৫ই এপ্রিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গাজীপুরসহ পাঁচ সিটিতে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করে। গাজীপুরে জাহাঙ্গীরকে বাদ দিয়ে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়রে প্রবীণ নেতা আজমত উল্লা খানকে।   

এক দশক আগে ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির প্রথম ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছিলেন আজমত উল্লা খান। তখন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়ে যান জাহাঙ্গীর। 

দলের নির্দেশেও ভোট থেকে সরতে রাজি না হয়ে জাহাঙ্গীর কয়েকদিন নিখোঁজ থাকেন। ভোটের আগে গাজীপুরে ফিরে আমজত উল্লাকে সমর্থন দেন।  

তবে ভোটের ব্যালটে জাহাঙ্গীরের নাম থেকেই যায়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গাজীপুরে বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরে যান নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা। তখন বিভিন্ন মহল থেকে ওই পরাজয়ের জন্য জাহাঙ্গীরকে দায়ী করা হয়েছিল। 

আরও পড়ুন: ‘কিছুটা স্বস্তির জন্য আইএমএফের ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ’

এরপর ২০১৮ সালে আজমত উল্লা খানকে বাদ দিয়ে নৌকা প্রতীক তুলে দেয়া হয় জাহাঙ্গীরের হাতে। সেই নির্বাচনে জাহাঙ্গীর জিতে মেয়র পদে বসলেও সুস্থিরভাবে চলতে পারেন নি। বিতর্ক তার পিছু লেগেই ছিল।