গাজার কোন কিছুই এখন নিরাপদ নেই

গাজার কোন কিছুই এখন নিরাপদ নেই

গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদকে টার্গেট করে হামলা চালিয়ে স্থাপনাগুলোকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এদিকে হামাসের যোদ্ধারাও অনবরত গাজা থেকে ইসরায়েলে ঢুকছেন। তাঁদের কবজায় থাকা শহর পুনর্দখলে অবিরাম লড়াই চলছে। এই লড়াই ধারণার চেয়ে দীর্ঘতর হবে বলে মনে করছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

রয়টার্স বলছে, গত শনিবার হামাস যেভাবে ঢুকে পড়েছে, তাতে ইসরায়েল অজেয় বলে যে সুখ্যাতি ছিল, তা ধসে গেছে। তাঁদের হাতে ৭০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে এবং কয়েক ডজন মানুষ এখনো জিম্মি। আজ সোমবারও হামাস যোদ্ধাদের দখল করা সাত বা আটটি জায়গায় লড়াই চলছিল।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ৩ লক্ষ সেনা সদস্যকে তলব করেছে। এদিকে পুরো গাজা অঞ্চল অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এছাড়া খাদ্য ও পানি সরবরাহও বন্ধ করে রেখেছে। ফলে অবরুদ্ধ গাজা এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। পুরো গাজা অঞ্চলের বিন্দু পরিমান জায়গাও এখন নিরাপদ নেই।

এদিকে ইসরাইলে হামাসের হামলার পর ফিলিস্তিনীদের দেওয়া সাহায্য বন্ধ ঘোষণা করেছে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া।

৫০ বছর আগে ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধে মিসর ও সিরিয়ার হামলার পর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে সবচেয়ে ভয়াবহ অভিযানটি এবার চালিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হ্যাশট সাংবাদিকদের বলেন, ‘রক্ষণাত্মক ও নিরাপদ পরিস্থিতিতে ফিরতে যত সময় লাগবে বলে আমরা ধারণা করেছিলাম, তার চেয়ে বেশি সময় লাগছে।’

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দিন আগে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর তারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়। সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর আরও চারটি বিভাগ পাঠানো হয়েছে।

গাজা উপত্যকায় হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের ৫০০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুত হামলা চালানো হয়। এই হামলায় যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং সাঁজোয়া যান রয়েছে। হামলায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদ কমান্ড সেন্টার এবং হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রুহি মাশতার বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলে অনুপ্রবেশের নির্দেশ রুহি মাশতার কাছ থেকে এসেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

গাজার চিকিৎসকেরা জানান, ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুটি বাড়িতে অন্তত সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। কয়েক ডজন বিমান হামলাও চালানো হয়েছে। এর অনেকগুলো হয়েছে উত্তরের শহর বাইত হানুনে।

রোববার গাজার আবাসিক এলাকা, টানেল, একটি মসজিদ এবং হামাস কর্মকর্তাদের বাড়িতে আঘাত হেনেছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববারের হামলায় অনেক শিশুসহ ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা যে শিগগির শেষ হচ্ছে না, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। হামাসের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সহর ওফাকিম পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, ‘গাজা উপত্যকাকে যে বিশাল মূল্য পরিশোধ করতে হবে, তাতে একটি প্রজন্মের বাস্তবতাই পাল্টে যাবে।’

মাত্রা বাড়ানোর ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে। ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস জানিয়েছেন, আরও ১ লাখ ইসরায়েলি সৈন্যকে গাজা সীমান্তে মোতায়েন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধের শেষে ইসরায়েলি বেসামরিকদের জন্য হুমকি হওয়ার মতো কোনো সামরিক সক্ষমতা যেন হামাসের আর না থাকে, সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের কাজ। সে সঙ্গে আমরা আরও নিশ্চিত করব যে, গাজা উপত্যকার হামাসের শাসন চলবে না।’

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলা সহিংসতায় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়েছে। ইরান থেকে তেলের সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় সোমবার এশিয়ায় তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলারের বেশি বেড়েছে। তেলের দাম স্থায়ীভাবে বেড়ে গেলে সেই বাড়তি দাম ভোক্তাদের ওপর ট্যাক্সের মতোই প্রযোজ্য হবে। এতে বিশ্বব্যাপী বাড়তে পারে মুদ্রাস্ফীতি। কারণ, এসএন্ডপি সূচক ০.৭ শতাংশ এবং নাসডাক সূচক নেমেছে ০.৬ শতাংশ।

ইরান হামাসের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ইসরায়েলে হামলার জন্য হামাসকে অভিনন্দনও জানিয়েছে দেশটি। তবে জাতিসংঘে ইরানের মিশন বলেছে যে, তেহরান এই হামলায় কোনোভাবেই জড়িত নয়।

হামাসের হামলার পর তেল আবিবের সঙ্গে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, আবারও ফ্লাইট শুরুর জন্য পরিস্থিতির উন্নতির জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।

অবরুদ্ধ গাজার বাইরেও ঘটে চলছে এই যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা ঘটনা। ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে লেবাননের ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ বাহিনীর যুদ্ধ হয়েছে গত রবিবার। কামান এবং রকেটের সাহায্যে হয়েছে গোলা বিনিময়। আবার, মিসরে একজন গাইডসহ দুই ইসরায়েলি পর্যটককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

সারা বিশ্ব থেকেই আসছে যুদ্ধ থামানোর আহ্বান। তবে বেশিরভাগ দেশই ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

এদিকে গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে ‘ধ্বংস ও মৃত্যুর বর্বর অভিযান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রবিবার এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, দখলদার শক্তি হিসেবে গাজা বা ফিলিস্তিনের কোথাও অরক্ষিত বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর কোনো অধিকার বা যৌক্তিকতা নেই ইসরায়েলের।

গত শনিবার ইসরায়েলের সেনা ঘাঁটি দখল এবং সীমান্ত শহরগুলোতে আক্রমণ করার পর দেশটির দক্ষিণে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এখনো লড়াই করে যাচ্ছে হামাসের যোদ্ধারা।

সে প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংকালে ইসরায়েলের সামরিক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেকট বলেন, ‘পুরো পরিস্থিতিকে প্রতিরক্ষামূলক ও নিরাপদ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সময় লাগছে।’