ছেলে যখন হালের গরু!

একেকজনের জীবনের গল্প একেক রকম, কারোটা রঙিন কারোটা সাদা-কালো। কারো গল্পটা আবার বেদনার নীলের মত। দুপুরের প্রখর রোদে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন বাবা কুদ্দুছ মিয়া ও তার ১০ বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ। হালের গরু নেই! তাই বাবা আর ছেলেই চাষের জমিতে মই দিচ্ছেন।
রোববার (৫ মার্চ) এ দৃশ্য দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের রুটি-নূরপুর গ্রামে। টাকার অভাবে কয়েকদিন ধরে ক্ষেতে মই দিতে পারছিলেন না। অনেক জায়গায় টাকা ধার চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। তাই নিরুপায় হয়ে ছেলেকে দিয়েই মই দিচ্ছেন কুদ্দুছ মিয়া।
কুদ্দুছ মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, তার নিদারুন জীবন সংগ্রামের কথা। স্ত্রী, দুই ছেলে আর তিন মেয়ে নিয়ে তার সংসার। তার আয়ের উৎস্য গ্রামের বাজারে ছোট্ট একটি লন্ড্রীর দোকান। দোকানের এই সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। কুদ্দুছ মিয়ার নিজের কোন জমি নেই। তিনি বর্গা চাষী। এবছর চার বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করছে। অর্থাভাবে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা বেশি দূর এগুতে পারেনি। বাবার সাথেই জমির কাজে সহযোগিতা করে। ভাই বোনের মাঝে আব্দুল্লাহ তৃতীয়।
কুদ্দুছ মিয়া বলেন, পাট আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। হালের গরু না থাকায় ছেলেকে দিয়েই মই দেওয়ার কাজ করাচ্ছেন। এর আগে এই জমিতে সরিষা করেছিলেন। সরিষা বিক্রি করে খরচ বাদে কিছু টাকা আয় হয়েছে। বাকি জমিগুলোতে ধান চাষ করেছি। ফলনের অর্ধেক জমির মালিককে দিতে হবে। লন্ড্রীর দোকানের আয় আর জমি বর্গা চাষ করে ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকমে দিন চলে যাচ্ছে।
বর্গা চাষী কুদ্দুছ মিয়া বলেন, গরু-বাছুর পালতে গেলে অনেক পুঁজির দরকার। কিন্তু গরু কেনার মত পুঁজি নাই। হালের গরু থাকলেও তো অনেক উপকার হতো। তাই ছেলেকে দিয়ে হালচাষ করছি। আব্দুল্লাহ বলেন, আগে স্কুলে পড়তাম এখন পড়ি না। বাপের সাথে জমির কাজে সহযোগিতা করি। কাজ না করলে ভাত খামু কীভাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, নুরপুর গ্রামে কুদ্দুছ মিয়া নামে একজন কৃষক রয়েছে। যিনি উনার জমিগুলো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জমি চাষাবাদ করেন। জমি লেভেলিং উনারা নিজেরাই করেন। কিন্তু আমরা বলে আসছি আমরা শতভাগ মেশিনের আওতায় এসেছি। কুদ্দুছ মিয়ার বিষয়টি জানতে পেরে আমি দুঃখবোধ করছি। উনাকে কৃষির যত প্রকারের সহযোগিতা করা যায়। আমরা করবো। যেমন কৃষি লোন, প্রনোদনার আওতায় আনা ইত্যাদি। আমরা ওই কৃষকের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের সহযোগিতার আওতায় আনব।