বিয়ে করায় ধর্ষণ মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন সাবেক এমপি আরজু
ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করায় পাবনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজুকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। এ সময় ওই নারীর জন্য ৫০ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়।
বুধবার (২৯ মার্চ) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫-এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজুকে অব্যাহতির আদেশ দেন। গত ১৩ মার্চ একই আদালত বাদীকে বিয়ের শর্তে আরজুকে জামিন দেন।
ট্রাইব্যুনালে আজ মামলাটির চার্জগঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল। এ সময় বাদী জানান, চার্জগঠনের সময় মামলা থেকে আসামিকে অব্যাহতি দিলে কোনো আপত্তি থাকবে না। পরে মামলার শুনানি করেন বিচারক বেগম সামছুন্নাহার। শুনানি শেষে আদালত আরজুকে অব্যাহতির আদেশ দেন।
সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী এস এম লুৎফর রহমান জাহাঙ্গীর।
এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি তালাকপ্রাপ্তা এক নারীকে মিথ্যা নাম-পরিচয় দিয়ে বিয়ে ও প্রতারণার অভিযোগে ধর্ষণ মামলায় খন্দকার আজিজুল হক আরজুকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামি আরজুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫-এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহার।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২২ এপ্রিল শিক্ষানবিশ এক আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। পরে পিবিআইকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের আদেশ দেন আদালত। ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০০ সালের ডিসেম্বরে বাদীর সঙ্গে তার প্রথম স্বামীর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর ২০০১ সালের শেষের দিকে বাদীর চাচার মাধ্যমে আসামি সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজুর পরিচয় হয়। কিন্তু আসামি ওই সময় নিজের নাম ফারুক বলে উল্লেখ করেন। আসামি তার প্রথমপক্ষের স্ত্রী মারা গেছেন বলেও বাদীকে জানান। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর আসামির সঙ্গে বাদীর বিয়ে হয়। ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি তাদের কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু সন্তান জন্ম নেওয়ার পর থেকেই আসামির আচার-আচরণে পরিবর্তন আসে। বাসায় আসা কমিয়ে দেন। বাদীর জমানো আট লাখ টাকা এবং তার বাবার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকাসহ ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেন আসামি।
একপর্যায়ে বাদী আসামির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন তার প্রথম স্ত্রী জীবিত এবং প্রথমপক্ষে কন্যাসন্তান রয়েছে। এ ছাড়া ফারুক হোসেন নামে পরিচয় দিলেও তার আসল নাম খন্দকার আজিজুল হক আরজু। মিথ্যা তথ্য ও পরিচয় দিয়ে বাদীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের উদ্দেশ্যেই বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন আরজু। একইসঙ্গে আসামি বাদীর সঙ্গে বিয়ে ও তাদের সন্তানের পিতৃপরিচয় দিতে অস্বীকার করেন। কিন্তু ওই কন্যাসন্তানের ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে বাদীর গর্ভজাত এবং বিবাদী জন্মদাতা বাবা বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
গত ১৩ মার্চ বিয়ের শর্ত ও দশ লাখ টাকা মুচলেকায় আরজুর জামিন মঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর বাদীকে বিয়ে করায় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় পাবনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজুকে।