৬.১৫ কিমির পদ্মা সেতু, ‘ভাড়ায় দৈর্ঘ্য’ ১৫৪ কিলোমিটার!

৬.১৫ কিমির পদ্মা সেতু, ‘ভাড়ায় দৈর্ঘ্য’ ১৫৪ কিলোমিটার!

রেলপথের মধ্যে বিশেষ রেল সেতু, সংযোগ সেতু, উড়াল রেলপথ থাকলে ওই অংশটুকুর জন্য আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। ভাড়া নির্ধারণের প্রক্রিয়া অনুযায়ী, নির্দিষ্ট বিশেষ অংশের ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি না বাড়িয়ে আসল দূরত্বকে বাড়িয়ে বিবেচনা করা হয়। এতে আসল দূরত্বের পরিবর্তে অতিরিক্ত দূরত্বের সঙ্গে ভিত্তি ভাড়ার সমন্বয় করা হয়।

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পথে যেসব ট্রেন চলাচল করবে সেগুলোর ভাড়া নির্ধারণ করার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি করা হয়।

কমিটি মন্ত্রণালয়কে ভাড়ার তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে। কোনোটিই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এই প্রস্তাব থেকেও নির্ধারিত ভাড়ায় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে কমিটির পক্ষ থেকে পদ্মা সেতুর মূল দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটারকে বাড়িয়ে ১৫৪ কিলোমিটার হিসাবে বিবেচনা করে ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে।

ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে শ্রেণিভেদে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি ভিত্তিমূল্য রয়েছে। এতে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কোচে প্রতি কিলোমিটার এক টাকা ৯৫ পয়সা ও স্বাভাবিক কোচে (নন-এসি) এক টাকা ৭৫ পয়সা ভাড়া আদায় হয়। তবে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও আন্তঃনগর ট্রেনের ধরনভেদে ভাড়ার ভিত্তিমূল্যে পরিবর্তন আসে। এটি হচ্ছে সাধারণ রেলপথের ভাড়া।

ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাস্তবের চেয়ে কাগজে দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে ভাড়া ঠিক করার এই পদ্ধতিকে কারিগরি ভাষায় ‘পয়েন্ট চার্জ’ বলা হয়। একই পদ্ধতিতে রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার উড়াল রেলপথকে ১১৫ কিলোমিটার বিবেচনা করে ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। 

বর্তমানে হার্ডিঞ্জ সেতুর দৈর্ঘ্য ১.৮ কিলোমিটার। ভাড়া দিতে হচ্ছে ৪১.৪ কিলোমিটার বিবেচনায়। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু সেতুর ভাড়া হিসাব হয় প্রায় ৮১ কিলোমিটার ধরে।

চার কিলোমিটারের ব্রহ্মপুত্র সেতুর ১৬ কিলোমিটার বিবেচনায়। আর এক কিলোমিটারের ভৈরব সেতুর জন্য ভাড়া দিতে হয় ২৩ কিলোমিটারের। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশেষ উদ্বোধনী ট্রেনে চড়ে এই পথে চলাচল উদ্বোধন করবেন। ট্রেনটি প্রধানমন্ত্রীসহ যাত্রীদের নিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত যাবে। 

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অধীন ঢাকার কমলাপুর থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত আপাতত ট্রেন চলবে। প্রকল্পের এই পথের দৈর্ঘ্য ৮২ কিলোমিটার। ঢাকার এই ট্রেন পরে ভাঙ্গা থেকে রাজবাড়ী হয়ে রাজশাহী ও খুলনায় যাবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সূত্র বলছে, বর্তমানে ঢাকা-খুলনা পথে চলাচলকারী সুন্দরবন এক্সপ্রেস নিয়মিত পথ থেকে সরিয়ে এনে পদ্মা সেতু দিয়ে চালানো হবে। একইভাবে ঢাকা-বেনাপোল পথে চলাচলকারী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের পথও পরিবর্তন করা হচ্ছে। অর্থাৎ রাজশাহী, বেনাপোল ও খুলনার পথে তিনটি ট্রেন চলবে পদ্মা সেতু হয়ে। পথ নতুন হলেও তিনটি ট্রেনই পুরনো।