হায়দরাবাদের মাটন দম বিরিয়ানির স্বাদ এত বেশি কেন? রেসিপি
হায়দরাবাদের বিরিয়ানিতে জাদু আছে! শহরের আনাচে-কানাচে বিরিয়ানির দোকানে ভরা। বেশ কিছু বিরিয়ানির হোটেল রয়েছে, শত শত বছর আগের। খাবারের স্বাদও অতুলনীয়। হবে না-ই বা কেন! খোদ নবাবের রেসিপি বলে কথা। তবে শুধু বিরিয়ানি নয়।
হায়দরাবাদি চিকেনও রসনাকে তৃপ্ত করতে সিদ্ধহস্ত।
হায়দরাবাদের বিভিন্ন সড়ক ধরে হাঁটলে বা যানে চড়লে বিরিয়ানির সুগন্ধ নাকে বাধে। নিজামদের ছোঁয়া যে শহর এখনো সগৌরবে বিরাজমান, সেখানে খাওয়ার মধ্যেও সেই অদ্ভুত মখমলের মতো নবাবি আমেজটা থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক।
দুধ ব্যবহার করে তৈরি করা এই ধরনের বিরিয়ানি তাই একটি অন্য জায়গা করে নিয়েছে ভোজন রসিকদের মনে। মাংসের টুকরোগুলো প্রথমে দুধে রান্না করা হয়, তারপর যাবতীয় মশলা মিশিয়ে একটি পাত্রে দম দিয়ে বিরিয়ানি বানানো হয়।
গত দুই দিন হায়দরাবাদ চারমিনার, গোলকোন্ডা দুর্গ, রামোজি ফিল্ম সিটি প্রভৃতি দর্শনীয় স্থানে ঘুরেছেন যুগান্তরের এই প্রতিবেদক। এসব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘিরে বিরিয়ানি হাউস-হোটেল গড়ে উঠেছে। যার সুনাম রয়েছে দেশ-বিদেশজুড়ে।
বিরিয়ানি ছাড়াও থাকে সাদা ভাত, দই-ভাত (কার্ড রাইস), পুদিনা রাইস, পুলিহরা, যা সমগ্র দক্ষিণ ভারতেই জনপ্রিয়। আম ডাল, মেথি ও মুগ ডাল দিয়ে তৈরি ডাল ফ্রাই, টমেটো ও বরবটির তরকারি, আলু কোর্মা, ওকরা ছাড়াও লাউ, ঝিঙে, বেগুন দিয়ে বানানো তরকারিও দেদার বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ইরানি চা থেকে অরিসেলু, সকিনালুর মতো বিখ্যাত খাবার নিজামের শহরে পাওয়া যায়।
হায়দরাবাদে বিরিয়ানির অন্যতম সেরা জায়গা সেকেন্দ্রাবাদ এলাকা। এ এলাকায় দুই-তিন শতবছর আগের বিরিয়ানির হোটেল রয়েছে। সেকেন্দ্রাবাদ রেলওয়ে স্টেশন থেকে বের হয়ে মোড়ের পাশেই রয়েছে আলফা বিরিয়ানি হোটেল। যে কোনো কাউকে জিজ্ঞেস করলেই রেস্তোরাঁটির নাম বলে দেবে। রেস্তোরাঁটি চারতলা। নিচেও একতলা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ছয়ের দশকে মাত্র ১০০ আসন নিয়ে পথচলা শুরু এই রেস্তোরাঁর৷ বর্তমানে হায়দরাবাদ ছাড়াও বেঙ্গালুরু, চেন্নাইসহ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এই রেস্তোরাঁর আউটলেট। বিরিয়ানির পাশাপাশি সুপ, স্টার্টার, কাবাব— এমনকি চাইনিজ খাবারও পাওয়া যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্যারাডাইস ফুট কোর্টে৷
হায়দরাবাদি দম বিরিয়ানির স্বাদ বেশ উচুঁর। এক একটি রেস্তোরাঁয় সব ধরনের বিরিয়ানি থাকে। তবে শত শত বছর পুরো রেস্তোরাঁগুলো রাত-দিন ভিড় লেগে থাকে। শহরের মদিনা বিল্ডিংয়ের বিপরীতে ‘শাদাব’ বিরিয়ানির জন্য বিখ্যাত। মাধপুরের ‘বিরিয়ানি ঘরেরও সুখ্যাতি আছে।
আধুনিক হায়দরাবাদে উন্নতমানের যত ফাইভ স্টার রয়েছে, সবকটিতে বিখ্যাত বিরিয়ানি পরিবেশন করা হয়। একাধিক হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হোটেলে থাকা বিদেশিরা খাবার তালিকায় বিখ্যাত বিরিয়ানি চায়। তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিরিয়ানি রাখা হয়।
উল্লেখ্য, হায়দরাবাদ তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী। এ রাজ্যের সঙ্গে মিশে রয়েছে ইতিহাস। সাতবাহন, ইক্ষবাকু, কাকাতীয়, বাহমনি, কুতুবশাহি, মোগল ও নিজামদের দীর্ঘ শাসনকালকে সঙ্গী করে গড়ে উঠেছে তেলেঙ্গানার ইতিহাস৷ শিল্প, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের অন্যতম পীঠস্থান এ রাজ্যটি৷ এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অফুরন্ত ভাণ্ডার৷