মিরপুর বাঙলা কলেজে হামলা: মৃত ব্যক্তিদের নামে মামলা, আসামি সম্পর্কে জানেন না বাদী!

মিরপুর বাঙলা কলেজে হামলা: মৃত ব্যক্তিদের নামে মামলা, আসামি সম্পর্কে জানেন না বাদী!

কবর থেকে উঠে দু’জন ব্যক্তি মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে ছাত্রলীগের ওপর হামলা ও কলেজে ভাঙচুর চালিয়েছে। আজগুবি মনে হলেও মামলার কাগজে এমনটাই বলছে পুলিশ। আসামিদের একজন ২ বছর আগে এবং অন্যজন ৮ মাস আগে পৃথিবী ছেড়েছেন। মামলায় একজন দুই নম্বর এবং অন্যজন ৭৩ নম্বর আসামি।

চলতি মাসের ১৮ তারিখ পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। পরদিন দারুস সালাম থানায় ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ রুবেল এবং কলেজের অফিস সহকারী মহিদুর রহমান বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন।

বাংলা কলেজের অফিস সহকারীর করা মামলার কপি এসেছে যমুনা টেলিভিশনের হাতে। যেখানে ১২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার দুই নম্বর আসামি সাবেক শ্রমিকদল নেতা জব্বার হাওলাদার এবং ৭৩ নম্বর আসামি বাংলা কলেজের সাবেক ছাত্রদল নেতা শফিকুল ইসলাম সুমন।

মামলার দুই নম্বর আসামি সাবেক শ্রমিকদল নেতা জব্বার হাওলাদারের স্ত্রী মর্জিনা বেগম। চার মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সাভারের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। স্বামীর মৃত্যুর পর কোনো রকম টেনেটুনে চলছে সংসার।

মর্জিনা বেগম বলেন, আমার স্বামীর প্রথমে ডন্ডিস হয়েছিল, পরে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি ক্যান্সার। বিভিন্ন হাসপাতালে তাকে নিয়ে ঘুরেছি। তিন বছর বিছানায় পড়ে ছিল। বারডেম হাসপাতালে সে মারা গিয়েছিল। দাফন করা হয়েছিল আজিমপুর কবরস্থানে। তার মারা যাওয়ার এখন দুই বছর। গাবতলী এলাকার সবাই জানে, সে মারা গেছে। তাহলে এ অবস্থায় তাকে দুই নম্বর আসামি কীভাবে দেয়া হলো?

মামলার আরেক আসামি সাবেক ছাত্রদল নেতা শফিকুল ইসলাম সুমনের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালির মির্জাগঞ্জে। সেখানে গিয়ে জানা যায়, সুমনও আট মাস আগে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কবর দেয়া হয়েছে বাড়ির পাশেই।

তার বাবা ও চাচা জানান, পাঁচ বছর পর্যন্ত ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকার পর ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর সে মারা যায়। অনেক লোক তার জানাজায় শরিক হয়েছিল। একজন মৃত মানুষের নামে কীভাবে মামলা হয়? মৃত দু’জন মানুষকে মামলার আসামি করায় হতবাক ও ক্ষুব্ধ স্বজনরা।

এখন প্রশ্ন কারা কিভাবে ঘটালো এমন নজরিবিহীন ঘটনা? এর উত্তর খুঁজতে রাজধানীর দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আমিনুল বাশারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাদী পক্ষের তালিকা অনুযায়ী মামলা রুজু হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম মামলায় কীভাবে অন্তর্ভূক্ত হলো তা কলেজ কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে।

কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, পুলিশকে নামের কোনো তালিকা দেননি তারা। আর মামলার বাদী বলছেন, কলেজে ভাঙচুরের ঘটনায় তিনি শুধু অভিযোগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সরকারি বাঙলা কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর সেলিমা আলম বলেন, মিছিলে এত মানুষের মধ্যে আমরা তো সবাইকে চিনি না। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে নামগুলো হয়ত চলে এসেছে। কেউ কেউ হয়ত থানায় বলেছে কিংবা থানাতেও নিশ্চয়ই এখানকার কে কোন দল করে, তার একটা তালিকা থাকে, এমন সবকিছু মিলিয়ে হয়ত তালিকাটা হয়েছে। কিন্তু আমরা কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো লিস্ট করে পাঠাতে পারিনি। কারণ, এটা তো আমাদের পক্ষে চেনা সম্ভবও না।

এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ কথা বলতে রাজি হননি।