মার্কিন মধ্যস্থতায় অংশ নেবে আওয়ামী লীগ?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে আরও কঠোর এবং অনমনীয় অবস্থায় যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে মধ্যস্থতা করতে চাইছে। চলতি সপ্তাহেই উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করবেন। মানবাধিকার এবং সুশাসন বিষয়ক এই প্রতিনিধি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল হিসেবে যেকোনো বিদেশী অতিথির সাথে যেকোনো আলোচনা করতে আগ্রহী। তবে মার্কিন মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ বা আলোচনায় আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করবে না। আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী মহল এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো প্রতিনিধির সঙ্গে সৌজন্যমূলক আলোচনা করবে এবং সেই সৌজন্যমূলক আলোচনায় বাংলাদেশের সংবিধান এবং সংবিধানের আলোকে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে। পৃথিবীর অন্যান্য সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও সেই একইভাবে নির্বাচন হবে। এই ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কোন ছাড় দেবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোন দেশের মধ্যস্থতায় নির্বাচন নিয়ে কোনো সংলাপ বা সমঝোতার আওয়ামী লীগ যাবে না বলেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাজনৈতিক সংঘাত এড়ানোর জন্য সংলাপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হবার লক্ষ্যে কাজ করছে। এ লক্ষ্যেই মার্কিন প্রতিনিধিরা এসে আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করবে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি সংলাপের ব্যাপারেও আলাপ আলোচনা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রগুলো জানিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কেন; কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই আওয়ামী লীগ আলোচনা করবে না। এমনকি বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কাছে আওয়ামী লীগ কেবলমাত্র তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে। এই অবস্থান পরিবর্তনের জন্য কোনো চাপের কাছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নতি স্বীকার করবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেটি গণতন্ত্র বিনাশী ষড়যন্ত্র বলে আওয়ামী লীগ মনে করে। আওয়ামী লীগ মনে করছে, যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র বানচাল করতে চায়, যারা গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত করতে চায়, তারাই নির্বাচন নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত করছে। এই ফাঁদে আওয়ামী লীগ পা দেবে না।
অতীতে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, বিদেশি দেশগুলো আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক মধ্যস্থতা করেছে। এবারও সে রকম মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এবং সরকারের অবস্থানের মাঝামাঝি একটি জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আসার একটি চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিদেশিদের এরকম চেষ্টাকে বর্তমান সরকার সরাসরিভাবে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের শামিল বলে মনে করছেন।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী এবং যথাসময়ে। এখানে আলাপ-আলোচনা করার কোনো কিছুই নেই। বিএনপি যদি নির্বাচন করতে চায় তাহলে তারা এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন বা সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে পারে। কিন্তু তৃতীয় কোন দেশের মধ্যস্থতায় আলোচনা করে বাংলাদেশ তার মর্যাদা ক্ষুন্ন করবে না। এই অবস্থান থেকেই বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে মার্কিন মধ্যস্থতায় রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ ক্রমশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।