ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি তুরস্কের গাজিয়ানতেপ প্রদেশ।

ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি তুরস্কের গাজিয়ানতেপ প্রদেশ।

এই শহরের তাপমাত্রা মাইনাস পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেছে। এমন চরম আবহাওয়ার মধ্যে হাজার হাজার পরিবারকে এখন গাড়ি ও অস্থায়ী তাঁবুতে রাত কাটাতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) আল জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ভূমিকম্পে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ১০টি প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব অঞ্চলে ৯০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।

ওই দশটি প্রদেশের একটি গাজিয়ানতেপ। ভূমিকম্পে গাজিয়ানতেপ শহরের বহু উঁচু ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। যার নিচে চাপা পড়েছে অসংখ্য মানুষ। আর যারা বেঁচে আছে তারা হয়েছে উদ্বাস্তু।

আরও পড়ুন: তুরস্কে ভূমিকম্প /তীব্র হচ্ছে মানবিক সংকট, নেই লাশ বহনের ব্যাগও

তাদের জীবন এখন মৃত্যুর চেয়ে কোনো অংশেই কম যন্ত্রণার নয়। এর কারণ গাজিয়ানতেপের বৈরি আবহাওয়া। বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) তাপমাত্রা মাইনাস ৫ ডিগ্রির নিচে নেমে গেছে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় সবকিছু জমে যাওয়ার যোগাড়।

এমন বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে এখন খোলা আকাশের নিচেই থাকতে হচ্ছে হাজার হাজার পরিবারকে। তবে যেসব পরিবারে শিশু রয়েছে তারা আরও বেশি বিপাকে পড়েছে। ছেলে-মেয়েদের কম্বলে মুড়ে কোনো রকমে বাঁচানোর চেষ্টা করছে বাবা-মায়েরা।

যাদের গাড়ি আছে তারা গাড়িতেই রাত কাটাচ্ছে। যাদের নেই, তাদের অস্থায়ী তাবুই ভরসা। কিন্তু তাবুর মধ্যেও প্রচণ্ড ঠান্ডা। যেমনটা বলছিলেন গাজিয়ানতেপের বাসিন্দা মেলেক হালিসি। বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে দুই বছরের মেয়েকে কম্বলে জড়িয়ে রাস্তায় হাঁটছিলেন তিনি। কারণ তাবুর চেয়ে বাইরে অপেক্ষাকৃত কম ঠান্ডা।

আরও পড়ুন: তুরস্কে ভূমিকম্প /৬২ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার তরুণী

এ সময় এএফপিকে তিনি বলছিলেন, ‘তাবুর মধ্যে বসে থাকাও যন্ত্রণার। রাত হলে তাবুতেই ফিরে যেতে হয়। কিন্তু আমি যেতে চাই না। কারণ এত টান্ডা আমার সহ্য হয় না। আবার বাড়ি ফিরে যাওয়ার চিন্তাও করতে পারছি না ‘

হালিসিসের সঙ্গে এমন আরও অনেক পরিবারকে তাঁবুতে থাকতে হচ্ছে। শীত মোকাবিলায় সুপারমার্কেট ও অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো আগুন জ্বালাতে তাদের কাঠ দিয়েছে। অনেকে প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ আবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু বেশিরভাগেরই যাওয়ার মতো কোনো গন্তব্য নেই।

আরও পড়ুন: তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প /ক্ষীণ হয়ে আসছে জীবিত উদ্ধারের আশা

ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়ের জন্য জিম, মসজিদ, স্কুল ও কিছু দোকান রাতেও খোলা রাখা হচ্ছে। এছাড়া হাজার হাজার মানুষ উষ্ণতার জন্য ইঞ্জিন চালিয়ে গাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন সুলেমান ইয়ানিক। তিনি বলেন, ‘আমার বিকল্প কোনো পথ নেই।’ তিনি এএফপিকে বলেন, ‘বাইরের গন্ধটা ভয়ংকর। কিন্তু আমরা বাড়িতে যেতে পারছি না। ’