বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ

বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ

চৈত্র শেষে বৈশাখের শুরু, মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষের জীবনযাপন। প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলা ঘরের বাইরে মানুষ বেরোতে চাচ্ছেন না। ফলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরের পিচঢালা পথগুলোতে মানুষের চলাচল অনেকটাই কমে যায়। এদিকে প্রচণ্ড গরমে সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে, ফলে চলাচলে মানুষের ঝুঁকি বাড়ছে।

বরিশাল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আজ রোববার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকে তাপমাত্রা গতকাল শনিবারের মতো বিরাজ করছে। শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুয়েছে। আর এরইমধ্য ১০ বছর পরে আবারও বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে। ওইদিন বরিশালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০১২ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সাধারণত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে। এখন আর আগের মতো বড় বড় গাছ নেই, পুকুর নেই, খাল নেই, এসব কারণে বাতাসের সঙ্গে ময়েশ্চার বহন করে না, তাই সবকিছু শুষ্ক হয়ে যাওয়ায় গরমের তীব্রতা বাড়চ্ছে। তবে আশার কথা হলো ২/১ দিন পরে তাপমাত্রা কিছুটা কমবে এমনকি বৃষ্টিও হতে পারে।

এদিকে গত কয়েক দিনের মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহের কারণে প্রচণ্ড গরমে জেলার বিভিন্ন সড়কের পিচ গলে যেতে শুরু করেছে। বিশেষ করে যেসব স্থানে গাছ বা ছায়া নেই সেসব স্থানে বৃহৎ আকারে পিচ গলে যাচ্ছে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের পাশাপশি বরিশালের গৌরনদী থেকে আগৈলঝাড়া পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ গলে গেছে। এ সড়কের পিচ গলে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ চলাচলে বিঘ্নতা ঘটছে। পায়ের জুতা ও যানবাহনের চাকার সঙ্গে পিচ লেগে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মহিলারা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী শাওন সরদার সোলাইমান জানান, আগৈলঝাড়ায় তিন রাস্তা থেকে গৌরনদীতে তিন রাস্তার মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বর্তমানে বেহাল। প্রচণ্ড গরমে রাস্তার পিচ গলে গেছে। সেখানে থেকে যানবাহন চলা যেমন দুষ্কর, তেমনি হাঁটাচলাও দুষ্কর। রাস্তা পার হতে গেলে গলে যাওয়া পিচের সঙ্গে পায়ের জুতা আটকে যাচ্ছে অনেকেরই। এভাবে ঝুঁকিতে পথ চলতে গিয়ে ছোট-খাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে।

চিকিৎসা সহকারী রোবটের প্রতিষ্ঠাতা ওই যুবক বলেন, উপজেলায় আরও সড়ক রয়েছে। সেখানে এমন অবস্থা নেই। আবার এ সড়কটির দুই পাশে প্রচুর গাছও রয়েছে, সেই হিসেবে ছায়াও পড়ে সড়কে। এটি শুরু থেকেই নির্মাণ ত্রুটির সড়ক হওয়ায় এখন গরমে পিচ গলে চলাচলে ভোগান্তি সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় অটোচালক কালাম বলেন, রাস্তার বিষয়ে বলার কিছু নাই। রোদের তাপে এমনভাবে পিচ গলছে যে গাড়ি চালাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে।

তিনচাকা-চারচাকা যানবাহনের থেকে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল চালাতে আরও কষ্ট হয়। আর মানুষ রাস্তা পার হতে গেলে জুতা আটকে যাচ্ছে, ছিঁড়ে যাচ্ছে। আর খালি পায়ে তো হাঁটাই সম্ভব না। তাই এ রাস্তাটা দ্রুত সংস্কার করার দাবি জানাই। গৈলা বাজারের ব্যবসায়ী শামীমও রাস্তার বেহালদশার কথা জানিয়ে বলেন, সড়কটি সংস্কার না হলে মানুষের ভোগান্তি লাঘব হবে না। গলে যাওয়া পিচের কারণে যানবাহনও ঠিকভাবে চলতে পারে না।

এ বিষয়ে প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, মূলত পিচঢালা সড়কের ওপর সূর্যের তাপ পড়লে সেটি শোষন না হয়ে পিচকে উত্তপ্ত করতে থাকে। আর সড়কের যেসব স্থানে গাছপালা বা ছায়া নেই সেখানে প্রচণ্ড তাপে এমনটা হতে পারে। এক্ষেত্রে উন্নত মানের পিচ ব্যবহার করা গেলে এমনটা হতো না। এদিকে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বিক্রি বেড়েছে ডাবের। ৪০-৪৫ টাকায় কেনা পাইকারি ডাব বরিশাল শহরে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।

আর হাসপাতালগুলোর সামনে সেই ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। ডাবের এই বাড়তি দামের কারণে অনেকেই পানির সঙ্গে স্যালাইন গুলিয়ে পান করছেন। খুচরো ডাব বিক্রেতা তানিম জানান, গরমের কারণে ডাবের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে, তাই পাইকারি ডাবের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরোতেও এর প্রভার পড়ছে।