বরিশালে যৌতুকের টাকা না পেয়ে ছাঁদ থেকে ফেলে দেয়া হয় কিশোরী বধূকে

প্রেমের সম্পর্কে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে বিয়ে করেছিল সপ্তম শ্রেনীতে পড়ুয়া জান্নাতুল ফেরদৌসি (১৪)। বিয়ের মাত্র সাত মাসের মধ্যে দাবিকৃত যৌতুকের দুই লাখ টাকা না পেয়ে হত্যার জন্য কিশোরী বধূকে পাঁচতলার ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল নগরীর রূপাতলী হাউজিং এলাকার ২২ নম্বর সড়কের পঞ্চম তলা বিশিষ্ট সারা-জারা ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে নয়টার দিকে। স্থানীয়রা ৯৯৯ এর সহায়তায় ওই কিশোরীকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। জান্নাতুল ফেরদৌসি রূপাতলী শের ই বাংলা সড়কের দিনমজুর রিপন হাওলাদারের মেয়ে।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) দুপুরে কিশোরী বধূর মা নুপুর বেগম জানান, তার মেয়ে রূপাতলী এ ওয়াহেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলো। সাত মাস আগে রূপাতলী ভাসানী সড়কের বাসিন্দা ইজিবাইক চালক রাকিব হোসেনের সাথে পালিয়ে বিয়ে করে। পরে ছেলের বাবা বিয়ের বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে মীমাংসা করেন। এরপর থেকে মেয়ে ভাসানী সড়কের স্বামীর বাসায় থাকতো। তিনি আরও বলেন, দুই মাস আগে রাকিব দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন।
কিশোরীর বাবা রিপন হাওলাদার বলেন, যৌতুকের দাবিতে জামাই, শ্বাশুড়ি ও ননদ প্রায়ই তার মেয়েকে মারধর করতো। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে এক লোক ফোন করে তার স্ত্রীকে শেবাচিম হাসপাতালে আসতে বলেন। পরে সেখানে আসার পর মেয়ে শুধু এটুকুই বলেছে, তার স্বামী ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন জান্নাতুল ফেরদৌসি।
কিশোরী বধূকে উদ্ধার করা মো. নিজাম বলেন, আমি বাহিরে বের হওয়ার পর হঠাৎ করে পাঁচতলার ওপর থেকে কিছু পরার শব্দ শুনতে পাই। পরে দেখি ভবনের সামনে রাস্তার ওপর কিছু পরে আছে এবং এক নারীর গোঙ্গানির শব্দ। পরে ৯৯৯ এ কল করে অ্যাম্বুলেন্স এনে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।
পাঁচতলা বিশিষ্ট সারা-জারা ভবনের মালিক স্বপন সরদারের ছেলে মেহেদি হাসান বলেন, 'কীভাবে এখানে আসলো বা ছাদ থেকে কিভাবে ফেলা হয়েছে তা কিছুই বলতে পারছি না।' শেবাচিম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাহাদাৎ হোসেন বলেন, 'ওপর থেকে পরে যাওয়ায় কিশোরীর দুই পা ভেঙ্গে হাড় বের হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও মাথায় আঘাত পেয়েছে। পা ভেঙ্গে যাওয়ায় তাকে হাসপাতালের মহিলা অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।'
ওই ওয়ার্ডের সেবিকা তমালিকা হালদার বলেন, 'শুক্রবার দুপুরে কিশোরীর জ্ঞান ফেরার পর সে শুধু জানিয়েছে তার স্বামী ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। এরবেশি কিছু সে বলতে পারেনি।' কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আমানুল্লাহ আল বারী বলেন, 'কিশোরী গৃহবধূকে যে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল, সেটা নিশ্চিত। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’