দেশি বলে চালানো হচ্ছে মিয়ানমারের ইলিশ কিনে ঠকছেন ক্রেতা
মিয়ানমার থেকে আসা নিম্নমানের ইলিশে ছেয়ে যাচ্ছে বাজার। কম দরে আমদানির বিষয়টি গোপন রেখে দেদার তা বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ দেখে পার্থক্য করা কঠিন হওয়ায় দেশি ভেবে তা কিনে ঠকছেন সবাই। বিক্রেতারাও এ সুযোগ নিয়ে দেশি বলে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
কেবল দেশেই নয়, বাংলাদেশি ইলিশ নাম দিয়ে চোরাইপথে বিদেশেও তা পাঠাচ্ছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। ফলে দেশের বাইরে বাংলাদেশি ইলিশের বিপুল চাহিদায় ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে ইলিশ রপ্তানির ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় এখনই কিছু বোঝা না গেলেও নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে ভয়ঙ্কর ক্ষতির বিষয়টি সামনে আসবে বলে মনে করছেন ইলিশ রপ্তানিকারকরা। সেক্ষেত্রে রপ্তানির এ খাতে থাকা হাজার কোটি টাকার বাজার হারাতে পারে বাংলাদেশ।
আকার-আকৃতির ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম কিছু পরিবর্তন ছাড়া বোঝার উপায় নেই যে কোনটা মিয়ানমার আর কোনটা দেশীয় ইলিশ। তবে খাওয়ার সময় তফাতটা পরিষ্কার বোঝা যায়। দেশি ইলিশের ঘ্রাণ অনুপস্থিত মিয়ানমারের ইলিশে। মিয়ানমার থেকে শত শত টন ইলিশ এনে দেশি বলে চালানো হচ্ছে বাজারে।
বরিশাল ইলিশ মোকামের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, পার্থক্য বলতে দেশি ইলিশের পিঠ একটু মোটা ও কালচে। মিয়ানমারের ইলিশের পিঠ চিকন-সাধারণত লম্বাটে হওয়ার পাশাপাশি এটি ওপর-নিচে খুব একটা চওড়া হয় না। পক্ষান্তরে দেশি ইলিশ লম্বার তুলনায় ওপরে-নিচে বেশি চওড়া এবং পেট খানিকটা ভারী হয়। এত সূক্ষ্ম পরিবর্তন বিচার করে মাছ কেনা সম্ভব হয় না বলেই মিয়ানমারের ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফেরে মানুষ।
মোকামের ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে বর্তমানে চলছে ইলিশের খরিফ মৌসুম। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের ইলিশ দিয়েই চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছি আমরা। এ ইলিশ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও পাবনার রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে আনা হয়। কেজি সাইজের ইলিশের দাম পড়ে প্রতি মন প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া ১২শ-১৩শ গ্রাম ৭০ হাজার এবং ১৪শ গ্রাম সাইজ ৭২ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় মনপ্রতি বিক্রি হয়।
জানা যায়, মূলত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও পাবনার কয়েকজন আমদানিকারক জড়িত এ ইলিশ আমদানির সঙ্গে। বছরে কয়েক হাজার টন ইলিশ মিয়ানমার থেকে আমদানি করেন তারা। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আমদানিকারক পাবনার সেভেন স্টার ফিশের বরিশালের এক প্রতিনিধি মিয়ানমার থেকে ইলিশ আমদানির বিষয়টি স্বীকার করলেও এর পরিমাণ কিংবা দর সম্পর্র্কে কিছু বলতে রাজি হননি।
ইলিশ আনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রামের আরেক ব্যবসায়ী জাহাঙ্গির আলমও পুরোপুরি এড়িয়ে যান বিষয়টি। প্রায় একই আচরণ মেলে চট্টগ্রামের আরেক আমদানিকারক মাসুদ কোম্পানির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।
বরিশালের সিকদার ফিশ ট্রেডিংয়ের মালিক জহির সিকদার বলেন, বিষয়টি আমদানিকারকদের গোপন রাখার কারণ, খুব কম দামে মিয়ানমার থেকে এনে বেশি দামে বিক্রি। সবাই জেনে গেলে সেই সুযোগ আর থাকবে না।
এদিকে চোরাই পথে বিদেশে ইলিশ যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এফবিসিসিআই-এর পরিচালক এবং বাংলাদেশ ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামউদ্দিন।
ইলিশ আমদানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা নতুন কিছু নয়। দেশে যখন ইলিশের সংকট থাকে, তখনই মিয়ানমার থেকে ইলিশ আনেন ব্যবসায়ীরা। তবে স্থানীয় বাজারে যে দরে বিক্রি হওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা বোধহয় ঠিক নয়। যতদূর জানি, ৩ থেকে ৪ ডলার রেটে মিয়ানমার থেকে ইলিশ আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। সেই হিসাবে এখানকার খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৮শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ার কথা।
বরিশাল নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ৪ ডলার দরে আমদানি মানে বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ৪০০ থেকে ৪১০ টাকা। সেই মাছ যদি ১২শ-১৫শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, তাহলে কী আকারে লুটপাট হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া সরকারের উচিত।