ফিফার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক
কাগজপত্র জালিয়াতির দায়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। পরবর্তী দুই বছর ফুটবল সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ জরিমানাও করা হয়। তবে ফিফার এই শাস্তিকে অবৈধ হিসেবে দাবি করেছেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক।
একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কোট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টস-সিএএস (খেলাধুলা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক আদালত) ফিফার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এই কথা জানায় আবু নাঈম সোহাগের আইনি সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠান এ হোসাইন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস।
এর আগে, শুক্রবার ফিফার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই সোহাগের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন সাংবাদিকসহ ফুটবল সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তবে এখন পর্যন্ত তার সাড়া মেলেনি। পরবর্তীতে শনিবার দুপুরে দিকে তার আইনজীবীর করা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ক্রীড়াঙ্গনের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে ফিফা বাফুফের সব লেনদেন নিয়ে নিরীক্ষণ করছে, তখন থেকে ফিফার স্পষ্ট অনুমোদন পাওয়ার পরই খরচ করা হয়েছে। ফুটবল সংশ্লিষ্ট সব নীতি মেনেই ফিফার ফান্ড ব্যবহারে অনুমোদন নিয়েছে বাফুফে। সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে ফিফার তহবিল অনুমোদনের পরই তা ব্যয় করা হয়। আর্থিক অসঙ্গতি নিয়ে শুনানি চলাকালে বাফুফে অনুমোদিত সব লেনদেনের নথি ফিফাকে দেওয়া হয়েছিল।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কিন্তু তদন্ত কমিটির বিচারিক আদালত অনৈতিকভাবে সেই সব জটিল নথি বিবেচনায় না নিয়ে শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, ফিফার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ভ্রান্তই নয়, একইসঙ্গে ত্রুটিপূর্ণ-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বাফুফের প্রতি তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ। অথচ শুনানির সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় বিচারিক আদালত জানিয়েছিল, ফিফা ফান্ডের কোনো অপব্যবহার হয়নি এবং সোহাগ স্বচ্ছ তথ্য পরিবেশন করেছেন।
আরও যেসব বিষয় তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি সেগুলো হলো- সেবা কিংবা পণ্যের অর্ডারের কপি সংগ্রহ করা হয়নি, বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সেসব পণ্য ক্রয় করতে হয়েছে এবং সেসব পণ্য বা সেবার দাম ফিফা ফান্ড থেকে পরিশোধ করা হয়নি।
এর আগে ফিফা জানায়, প্রযোজ্য কর্মধারায় তদন্তকারী চেম্বার দ্বারা পরিচালিত তদন্তের সময় সংগৃহীত সাক্ষ্যপ্রমাণের পাশাপাশি শুনানি ও উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ যত্ন সহকারে বিশ্লেষণের মাধ্যমে অ্যাজুডিকেটরি চেম্বার নিশ্চিত হয়েছে যে, সোহাগ ২০২০ সালের ফিফা এথিকস কোডের ধারা ১৫ (সাধারণ কর্তব্য), ১৩ (আনুগত্যের দায়িত্ব) ও ২৪ (জালিয়াতি ও মিথ্যাচার) লঙ্ঘন করেছেন।
এরও আগে, আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে সশরীরে ফিফার সদরদপ্তর জুরিখে যান বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ফিফার স্বাধীন নৈতিক কমিটির মাধ্যমে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞায় পড়লেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ তিনি ফিফার দেওয়া অর্থ বাফুফের খরচ দেখাতে ভুল কাগজপত্র দেখিয়েছেন।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) থেকে আবু নাঈম সোহাগের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। তার আগেই অবশ্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার মেয়াদ পূর্ণ হবে। ২০০৫ সালে কম্পিটিশন ম্যানেজার হিসেবে বাফুফেতে যোগ দেওয়া সোহাগ, ২০১১ সালে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং দেড় বছর পর পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে।