নির্বাচন নিয়ে ছয় নেতাকে বেগম জিয়ার ছয় পরামর্শ

নির্বাচন নিয়ে ছয় নেতাকে বেগম জিয়ার ছয় পরামর্শ

ঈদের রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ছয় জন সদস্য বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তারা বেগম জিয়ার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, তার কুশলাদি জিজ্ঞেস করেন এবং দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এই আলোচনায় বেগম জিয়া কথা বলেছেন অনেক কম। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য যিনি ঐ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তিনি বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া যা বলেছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। তার মতে, এমনিতেই ম্যাডাম কম কথা বলেন কিন্তু যে সমস্ত কথা বলেন প্রত্যেকটা কথার মধ্যে গুঁড়ো রহস্য রয়েছে এবং প্রত্যেকটা কথার ব্যাখ্যা প্রয়োজন। বেগম খালেদা জিয়া ছয় নেতার কাছে ছয় ছয়টি পরামর্শ দিয়েছেন ঈদের দিনের আলোচনায়। এই ছয়টি পরামর্শ হলো:

১. আন্দোলন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি একসাথে নিতে হবে: বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম পরামর্শ ছিল যে, আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও বিএনপিকে নিতে হবে। না হলে বিএনপি পস্তাবে। শুধুমাত্র এক দফার আন্দোলন করা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি যদি না নেয়া হয় তাহলে বিএনপির সর্বনাশ ঘটতে পারে। এটি বেগম খালেদা জিয়ার কথার তাৎপর্য বলে মনে করছেন বিএনপির কোনো কোনো নেতা।

২. আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন সম্ভব নয়: বেগম খালেদা জিয়া অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন যে, শুধু আন্দোলন করে সরকার পতন ঘটানো সম্ভব নয়। এর ব্যাখ্যা হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলছেন যে, বিএনপির যে সাংগঠনিক শক্তি এবং অবস্থান রয়েছে তাতে এটি সুস্পষ্ট যে বিএনপির শুধু আন্দোলন করে সরকার পতন ঘটাতে পারবে না। আর তাই বেগম খালেদা জিয়া অতীত অভিজ্ঞতার আলোকেই ঐ মন্তব্য করেছেন বলে তারা মনে করছেন। 

৩. আন্দোলনে ব্যর্থ হলে বিএনপির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে: বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন যে, এবারের আন্দোলন যদি ব্যর্থ হয় তাহলে বিএনপির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। এই কথার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন যে, এবারের আন্দোলন ডু অর ডাই। এই আন্দোলনে যদি কোনোভাবে বিএনপি ব্যর্থ হয় তাহলে বিএনপির অস্তিত্ব থাকবেনা। 

৪. এবার নির্বাচন .২০১৮ বা ২০১৪ এর মত হবে না: বেগম খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ছয় নেতাকে বলেছেন, এবারের নির্বাচনে ২০১৪ বা ২০১৮ এর মত হবে না। নির্বাচন হবে অন্যরকম ভাবে। আর এর ব্যাখ্যা হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত অনেকে মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া সুস্পষ্টভাবেই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে ইঙ্গিত করেছেন। তবে স্থায়ী কমিটির অন্য একজন সদস্য বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে কিছু বলেননি। তবে তিনি আগামী নির্বাচন যে একতরফা ভাবে হবে না সে ব্যাপারে ইঙ্গিত করেছেন।

 

৫. বিদেশীরা এবার সুষ্ঠু নির্বাচন করে ছাড়বে: বিদেশীরা বলতে বেগম খালেদা জিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো কথা বলেছেন। তারা যে আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বদ্ধপরিকর, সে ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়া ইঙ্গিতবাহী বক্তব্য রেখেছেন। 

৬. আওয়ামী লীগের জনসমর্থন কমে গেছে: বেগম খালেদা জিয়া তার বৈঠকের শেষ প্রান্তে মন্তব্য করেছেন যে, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। 

আর এই ছয়টি বক্তব্যকে একসাথে করে বিএনপির অনেক নেতাই মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়া সুস্পষ্টভাবে বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে বৈঠকে উপস্থিত স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে দুইজন বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেননি। তিনি শুধু সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তার উপলব্ধি এবং পরামর্শগুলো দিয়েছেন। এটির বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা হতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেছেন, আমরাও আন্দোলন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি ভাবে নিচ্ছি। কাজেই বেগম জিয়ার বক্তব্যের সঙ্গে আমাদের কোনো সংঘাত নেই।