থমকে আছে চাখারে শেরেবাংলা হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ
রাহাদ সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি॥
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায় চাখারে সন্ধ্যা নদীর তীরে শেরে বাংলার নামে প্রস্তাবিত হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ থমকে আছে। ২০১২ সালে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। যার কারণে দফায় দফায় হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল চাখারে সন্ধ্যা নদীর তীরে সম্ভাব্যতা যাচাই করলেও গত প্রায় এক যুগেও এখানে হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হয়নি।
জানা গেছে,২০১২ সালে শেরেবাংলার স্মৃতিবিজড়িত চাখার ইউনিয়নের সোনাহার-সাকরাল গ্রামের সন্ধ্যা নদীর তীরে হাইটেক পার্ক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের তৎকালীণ সংসদ সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম মনি এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার এ স্বপ্নের উদ্যোগের সারথী হন বাংলাদেশ জাপান ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম খান বুলবুল। ফলে তাদের প্রচেষ্টায় ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন পিএস ও সচিব মো. নজরুল ইসলাম খানসহ (এন আই খান) হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সরেজমিন পরির্দশন শেষে চাখারে হাইটেক পার্ক স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মো. মনিরুল ইসলাম মনি বরিশাল-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় চাখারে তার স্বপ্নের হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ থমকে যায়।
২০১৭ সালে সাবেক সংসদ সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম মনি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহম্মেদ পলকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাইটেক পার্ক নির্মাণ কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য আবেদন করেন। ফলে ওই বছরের ১২ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব সুশান্ত কুমার সাহাসহ প্রতিনিধি দল চাখারে প্রন্তাবিত হাইটেক পার্কের স্থান পরিদর্শনে যান। এসময় সাবেক সংসদ সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম মনি,তৎকালীণ ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব গোরীশংকর ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) মো. আবদুর রহিম, সহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ আহম্মেদ, চীনা আইটি বিশেষজ্ঞ আবুলইকিমু আবুলইমিতি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর তৃতীয় দফায় পরিদর্শন করেন হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উপ-সচিব জোহরা বেগম ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অ্যাসিটেন্ট মেইনটেন্যান্স প্রকৌশলী মাহাবুল আলম। উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য মো, মনিরুল ইসলাম মনি।
তখন পরিদর্শনে যাওয়া হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উপসচিব জোহরা বেগম সাংবাদিকদের বলেছিলেন,সরকার দেশের প্রতিটি জেলায় হাইটেক পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে শের-ই বাংলার পূণ্যভূমি চাখারে তার নামে প্রস্তাবিত হাইটেক পার্কের স্থান পরিদর্শন করছি। ঢাকায় ফিরে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার পরে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, চাখারে হাইটেক পার্ক করার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভূগছেন হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। তারা চাচ্ছেন, শতাধিক একর আয়তনের জমি ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ওই সূত্র জানায়, বরিশালের সমমানের বিভাগীয় শহর সিলেটে হাইটেক পার্ক করা হয়েছে ১৬৩ একর জমির ওপর। একই সময়ে বরিশাল নগরীতে জমি সংকটের কারণে নথুল্লাবাদে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হয় মাত্র ২ দশমিক ৫১ একর জমির ওপর। হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে, বিভাগীয় শহর হিসাবে বরিশালেও সিলেটের সমমানের একটি হাইটেক পার্ক হোক।
এ প্রসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, শেরেবাংলার স্মৃতিধন্য পূন্যভূমিতে তার নামে হাইটেক পার্ক হবে এটা পুরো দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দাবি। এজন্য জেলা প্রশাসন চাখার ইউনিয়নের সোনাহার-সাকরাল গ্রামে প্রায় ১০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। ওই ১০ একর জমির আশপাশে প্রচুর খাসজমি রয়েছে। জমি অধিগ্রহণ করারও সুযোগ রয়েছে। চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজেরও প্রচুর জমি অব্যবহৃত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে শুধু সদিচ্ছাই যথেষ্ট।
এদিকে দফায় দফায় স্থান পরিদর্শন করা হলেও হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার বাস্তব রূপ কবে দেখা যাবে তা নিয়ে অনিñয়তা কাটছেনা। স্থানীয় সচেতনমহল বাঙালী জাতির মহান নেতা শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের নামে তাঁর পূণ্যভূমিতে হাইটেক পার্ক গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত,হাইটেক পার্ক মূলত তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি বিশেষ স্থান। আইটি সংক্রান্ত সব কাজ সম্পাদন করা, আইটিকে ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, আইটি সেক্টরে সুযোগ-সুবিধা তৈরি, তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত আমদানি-রপ্তানির সুবিধা সংবলিত যে পার্ক গড়ে তোলা হয় তাকেই হাইটেক পার্ক বলে। দেশ-বিদেশের নাম করা বড় বড় তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো এ পার্কে কোম্পানি খুলে তাদের কাজ করতে পারবে। প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পায়ন,তরুণদের কর্মসংস্থান এবং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্পের উত্তরণ ও বিকাশে সুযোগ সৃষ্টি করে হাইটেক পার্ক।