‘বঙ্গবন্ধুর প্রতি শিশুটির এ যেন এক নিষ্পাপ ভালোবাসা’
জাহিদ হাসান, মাদারীপুর প্রতিনিধি:
মাদারীপুর বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম সায়মা (৮)। রোজ স্কুল ছুটির পর বাসায় ফেরার পথে সরকারি একটি বাসভবনের দেয়ালচিত্রে শিশুটি তাঁর রুমাল দিয়ে কোমল হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যগুলো পরিস্কার করে। পরিস্কার হলে ছবিগুলোয় চুমু খেয়ে আবার স্যালুট জানায়। আবার ছবিগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষার জন্য দোয়া চায়। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে রোজ এভাবেই শিশুটি তাঁর মনের মাধুরী দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর শহরের ২ নং শকুনি এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম মাতুব্বরের মেয়ে মরিয়ম সায়মা। সায়মার বাবা সৌদি প্রবাসী হলেও গত তিন বছর ধরে দেশে ফিরে এখন বেকার। তার মা আখি আক্তার গৃহিনী। সায়মার দুই বছরের বড় একজন ভাই আছে। তার নাম সায়মন ইসলাম। আব্দুস সালাম মাতুব্বরের গ্রামের বাড়ি মূলত শরীয়তপুর সদরে। তবে ছেলে মেয়েদের ভাল স্কুলে লেখাপড়ার জন্য তিনি মাদারীপুর শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন।
মাদারীপুর বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের পশ্চিম পাশেই জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবন। এই বাসভবনের সীমানা প্রচীরের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাধিক চিত্র রয়েছে। কোন কোন ছবিতে বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দিচ্ছেন। কোন কোন ছবিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়েছেন। এ ছাড়াও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, উন্নত বাংলাদেশের কিছু স্থির দৃশ্যপট ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে। এই দেয়ালের পাশেই ফুটপাত দিয়ে রোজ হেটে স্কুলে আসা-যাওয়া করে শিশু মরিয়ম সায়মা। স্কুল ছুটি হলে সে তাঁর মায়ের হাত ধরে যখন চলতে থাকে তখনই বঙ্গবন্ধুর ছবি কিংবা শেখ হাসিনার ছবিতে ময়লা লাগানো থাকলেই শিশুটি তাঁর রুমাল বের করে তা পরিস্কার করে। কখনো রুমাল ছাড়াও তার স্কুলড্রেস দিয়েও এই দেয়ালচিত্রগুলো পরিস্কার করে থাকে শিশুটি। এ সময় শিশুটির মা আখি আক্তার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও সন্তানের এমন পরম শ্রদ্ধা দেখে তিনিও মুগ্ধ হন।
দেখা যায়, শিশুটি বাম হাতে পরীক্ষার হার্ডবোর্ড আর ডান হাতে রুমাল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ময়লা লাগানো ছবিটি পরিস্কার করছে। পরিস্কার শেষে বঙ্গবন্ধুর গালে চুমু খেয়ে তারপর স্যালুট জানাচ্ছে। একই ভাবে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি ছবি পরিস্কার করে তার কাছে দোয়া চাইছে। শিশুটিকে শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি ছবিও পরিস্কার করতে দেখা যায়। শিশুটি থেকে ১০ মিটার দূরে শিশুটির মা আখি আক্তার দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আখি আক্তারের কাছে শিশু মরিয়ম সায়মার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে মরিয়ম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি শেখে। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখলেই তাকে স্যালুট করে। তাঁর ছবি অপরিস্কার থাকলে পরিস্কার করে। কখনো রুমাল না থাকলে স্কুল ড্রেস দিয়েই পরিস্কার করতে থাকে। কখনো কখনো আমার ওড়না দিয়েও পরিস্কার করতে থাকে। প্রথমে বঙ্গবন্ধুর ছবি পরিস্কার করলেও এখন তার কন্যা শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের ছবিও একই ভাবে যত্ন সহকারে পরিস্কার করে। বিষয়টি প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও মেয়ের এমন শ্রদ্ধাবোধ দেখে এখন ভাল লাগে। তাই ও ওর কাজটা করে, আমি পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। তারপর বাসায় যাই।’
শিশুটিকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে, ‘আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। তাই তার ছবিতে ময়লা পড়া থাকলে আমার খুব খারাপ লাগে। তাই ময়লা মুছে দেই। তার কাছে পরীক্ষার জন্য দোয়া চাই। তিনিও আমাকে দোয়া করে দেন। ফুটপাতের সাথে বঙ্গবন্ধুর ছবি মিশানো থাকায় ময়লা বেশি হয়, ছবিগুলো আরও একটু উপরে দিলে ময়লা হতো না বলে জানায় শিশুটি।’
শিশুটির এমন শ্রদ্ধাবোধ প্রায় দেখতে পান বলে জানালেন ফুটপাতের দোকানীরা। তারা বলেন, ‘আমরা প্রায়ই দেখি স্কুলড্রেস পড়া মেয়েটা বঙ্গবন্ধুর ছবি, শেখ হাসিনার ছবি রুমাল দিয়া পরিস্কার করে। ছবির সামনে দাঁড়িয়ে একা একা কথা বলে। প্রথমে ভাবছিলাম, মেয়েটা হয়তো পাগল, সহজসরল। এখন দেখি না। মেয়েটা মন থেকে, ভাল লাগা থেকে এমনটা করে।’