টেস্ট টিউব বেবিতে অভূতপূর্ব সাফল্য ডা. এসএম খালিদুজ্জামানের

টেস্ট টিউব বেবিতে অভূতপূর্ব সাফল্য ডা. এসএম খালিদুজ্জামানের

 দিন দিনই বন্ধ্যত্বের সংখ্যা বাড়ছে। এ ছাড়া নানা ধরনের সমস্যার কারণেও অনেক দম্পতিই মা-বাবা হতে পারছেন না। তাই অনেক দম্পতি বন্ধ্যত্বের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে টেস্ট টিউব বেবি নিয়ে থাকেন।

এমনি এক দম্পতি মিতু ও বোরহান। বিয়ের অনেক বছর পার হলেও তাদের ঘরে কোনো সন্তান ছিল না। জানা যায়, প্রসবের চার দিন পর মারা যায় অধরা আক্তার মিতুর সন্তান। এর সঙ্গে ধরা পড়ে ফ্যালোপিয়ান টিউব ব্লক। এর ফলে সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা হারায় মিতু।

হঠাইৎই মিতু জানতে পারেন এক মানবিক ডাক্তারের কথা। ডা. এসএম খালিদুজ্জামানের কথা। তার কাছে দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে শুরু করেন চিকিৎসা। এরই পর তার কোলে এখন ফুটফুটে চার দিনের সন্তান।

তবে বাংলাদেশে টেস্ট টিউব বেবির জন্মদানের বিষয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফার্টিলিটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এসএম খালিদুজ্জামান বলেন, ‘অনেক জায়গায়ই টেস্ট টিউব বেবি নেয়া শুরু হয়েছে। তবে আমরা একটু ভিন্ন আঙ্গিকে করার চেষ্টা করেছি। মূলত আমরা চেষ্টা করেছি পোশাক কারখানায় কর্মরত, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ট্রাক ডাইভার থেকে শুরু করে শিল্পপতি, ব্যাংকার সবাই যেন এখান থেকে সেবা পেতে পারেন।’

টেস্ট টিউব বেবি কৃত্রিম উপায়ে জন্ম দেয়া কোনো শিশু নয়। এটি মূলত একটি চিকিৎসাপদ্ধতি। যেখানে প্রাকৃতিকভাবে প্রযুক্তির মাধ্যমে বাবার স্পার্ম ও মায়ের ডিম্বাণুর মিলন ঘটানো হয়। তাই ধর্মীয়ভাবে এতে কোনো বাধা নেই বলে জানান  ডা. এসএম খালিদুজ্জামান।

আইভিএফ

টেস্ট টিউব বেবি নেয়া হয় মূলত আইভিএফ চিকিৎসাপদ্ধতির মাধ্যমে। ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতির সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে আইভিএফ। এ পদ্ধতিতে স্ত্রীর পরিণত ডিম্বাণু ল্যাপারেস্কোপিক পদ্ধতিতে অত্যন্ত সন্তর্পণে বের করে আনা হয়। পরে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর ল্যাবে সংরক্ষণ করা হয়। এ ছাড়া একই পদ্ধতিতে স্বামীর শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয়। পরে ল্যাবে বিশেষ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে নেয়া হয় শুক্রাণু।

তারপর অসংখ্য সজীব ও অতি ক্রিয়াশীল শুক্রাণু ছেড়ে দেয়া হয় নিষিক্তকরণের লক্ষ্যে রাখা ডিম্বাণুর পেট্রিডিশে। ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর এই পেট্রিডিশটিকে তারপর সংরক্ষণ করা হয় মাতৃগর্ভের পরিবেশ অনুরূপ একটি ইনকিউবেটরে।  

২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা

ইনকিউবেটরের মধ্যে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পরই বোঝা যায় নিষিক্তকরণের পর ভ্রূণ সৃষ্টির সফলতা সম্পর্কে। ভ্রূণ সৃষ্টির পর সেটিকে একটি বিশেষ নলের মাধ্যমে জরায়ুতে সংস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়। জরায়ুতে ভ্রূণ সংস্থাপন সম্পন্ন হওয়ার পরই তা চূড়ান্তভাবে বিকাশ লাভের জন্য এগিয়ে যেতে থাকে এবং সেখান থেকেই জন্ম নেয় নবজাতক। কোনো টেস্ট টিউবে এই শিশু বেড়ে ওঠে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফার্টিলিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রফিকুল আসলাম ভূঁইয়া জানান, ‘টেস্ট টিউব বেবির সফলতার রেট ৫০-৬০ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য স্বল্প ব্যয়ে সাধারণ মানুষকে সেবা দেয়া।’

বাংলাদেশে প্রথম টেস্ট টিউব বেবির জন্ম হয় ২০০১ সালের ২৯ মে ঢাকার একটি ক্লিনিকে। তবে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা থেকে অনেক পিছিয়েছিল বাংলাদেশ।