ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ; বেপরোয়া পুলিশ!

ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ; বেপরোয়া পুলিশ!

দেরিতে হলেও ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে রুপালি ইলিশ। দীর্ঘদিন প্রতীক্ষার পর জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মাছ ধরা পড়ায় জেলেপল্লীগুলো সরগরম হয়ে উঠেছে। তবে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়লেও জেলেদের মনে নেই আনন্দ। বৃদ্ধি পেয়েছে জলদস্যু ও পুলিশের চাঁদাবাজি। আর এসব ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ জেলেসহ আড়তদাররা। 

এ বিষয়ে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন বাংলাদেশ উপকূলীয় মৎস্য ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের চরফ্যাশন উপজেলার সভাপতি আলাউদ্দিন পাটোয়ারী। জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়েছে। 

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

জেলেরা জানান, নদীতে মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে জলদস্যুদের উৎপাতও বেড়েছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো নৌকায় হানা দিয়ে জাল-মাছসহ মালামাল ছিনিয়ে নিচ্ছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম দিয়ে চলছে চাঁদাবাজি। 

চরফ্যাশন উপজেলার সবচেয়ে বাড় মাছঘাট হচ্ছে সামরাজ মাছঘাট। এই ঘাটের জেলে সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদিন জানান, কোস্টগার্ড আর নৌপুলিশের তৎপরতায় জলদস্যুদের উৎপাত কিছুটা কমেছিল। সম্প্রতি ইলিশ মাছ বেশি ধরা পড়ছে। তাই জলদস্যুদের উৎপাতও বেড়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম দিয়ে একটি গ্রুপ নদীতে জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে।

চরফ্যাশন সামরাজ মাছঘাটের আড়তদার মিলন মাস্টার বলেন, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার নিঝুম দ্বীপ (বন্দরটিলা) নৌপুলিশ মাছ ধরার ট্রলারসহ নাছির মাঝি ও তার জেলেদের আটক করে চাঁদা দাবি করে। কথা বলতে চাইলে বলেন, কথা বলা যাবে না। বলে মোবাইল বন্ধ করে দেন। পুনরায় চেষ্টার পর ফোনে বলেন, বিকাশে টাকা পাঠান। পরে ১৪ হাজার টাকা দিই। 

অপর এক আড়তদার আব্দুর করিম বলেন, পুলিশ জালসহ নৌকা ধরেই বলে টাকা দেন, পরে বিকাশে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার চায়, আমি ২০ হাজার টাকা দিই। 

মো. আলাউদ্দিন গাজী বলেন, ট্রলারের মাঝি ফোন দিয়ে বলেন, ভাই টাকা পাঠান কোস্টগার্ড ধরছে। তখন ১৭ হাজার টাকা দেওয়ার পরও রক্ষা পাইনি। 

এমন বহু অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগের শীর্ষে রয়েছে নিঝুম দ্বীপের নৌপুলিশ আর দ্বিতীয় অবস্থানে মনপুরার থানা পুলিশ। 

সামরাজ মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মিয়া জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে জলদস্যুদের পাশাপাশি পুলিশের পোশাক পরিহিত লোকজন স্পিডবোট নিয়ে নদীতে নেমে জেলেদের মাছ ও মাঝিকে নিয়ে যায়। পরে টাকা দিলে জেলেদের ছেড়ে দেয়। 

তিনি আরও জানান, মাঝিসহ ট্রলার আটকে রেখে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পেয়ে জেলেদেরকে ছেড়ে দেয়। বিকাশ নাম্বারগুলো থাকে স্থানীয় বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টদের। চাঁদাবাজির এমন অসংখ্য অভিযোগ পাওয়ার পর সমিতির পক্ষ থেকে এই চাঁদাবাজ কারা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঢালচর ও আইচা থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢালচরের পুলিশ স্পিডবোট নিয়ে নদীতে নেমে তাদের শনাক্ত করে এবং এই চাঁদাবাজরা পুলিশ এটা নিশ্চিত হয়। 

সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন হাজি আরও অভিযোগ করেন, চাঁদাবাজির ঘটনার সঙ্গে মনপুরা থানা পুলিশ এবং নৌপুলিশের কতিপয় লোক জড়িত বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। এর পর তারা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এবং প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ১২ সেপ্টেম্বর সমিতির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। 

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানান জানান, অভিযোগ পেলেই কাউকে দোষী বলা যাবে না। তবে অভিযোগের বিষয়টি জেলা পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সুত্র : যুগান্তর