শাহজাহান ওমরকে নিয়ে কি পেল আওয়ামী লীগ?
আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে, দেশ পরিচালনা করছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলটির আলাদা ঐতিহ্য আছে, আছে আদর্শ। আওয়ামী লীগ সবসময় দাবি করে, তারা আদর্শভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দল। তাদের আদর্শের মূল ভিত্তি হলো- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন এবং অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল এক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কর্মসূচি। আর এই আদর্শ নিয়েই আওয়ামী লীগ এখনো একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল, যা এখন মহীরুহে পরিণত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতার অভাব নেই, তারুণ্যের সংকটও নেই। আওয়ামী লীগে বিভিন্নস্তরের নেতারা রয়েছেন যাদের মধ্যে সম্ভাবনাময় জাতীয় নেতাও রয়েছেন। আওয়ামী লীগ এখনো এই রকম অবস্থায় যায়নি যে, দলের জন্য বাইরে থেকে লোক ভাড়া করে আনতে হবে।
আদর্শের বা কৌশলগত কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে অনেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আদর্শিক জোট করে। নির্বাচনের সময় মহাজোটের মাধ্যমে কৌশলগত জোট করে। সেটি আলাদা কথা। কিন্তু, একজন ব্যক্তি যিনি আওয়ামী লীগের আদর্শের ধারে-কাছেও কখনো ছিলেন না, যিনি বিএনপি-জামায়াতের একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, সারা জীবন আওয়ামী লীগকে নোংরা-অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেছেন, কয়েকদিন আগেই যিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করেছেন, পিটার ডি হাসকে যিনি অবতার হিসেবে উল্লেখ করেছেন; এরকম একজন আদর্শহীন, পরগাছা, খড়কুটোর মতো রাজনৈতিক নেতাকে আওয়ামী লীগ বরণ করে কি অর্জন করলো? কি পেল? কি প্রমান করতে চাইলো? আওয়ামী লীগের মধ্যে এ নিয়ে সমালোচনা তীব্র হচ্ছে।
ঝালকাঠি এমনিতেই আওয়ামী লীগে একটি দুর্গ। সেখানে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন, যিনি এলাকায় খুব একটা অজনপ্রিয় নন। তাছাড়া, এবারের নির্বাচন এরকম একটা জীবন-মরণ নির্বাচন নয় যে, ওই আসনে শাহজাহান ওমর নৌকা প্রতীক না নিলে আওয়ামী লীগের ভয়ংকর ভরাডুবি হবে। তাহলে শাহজাহান ওমরের মতো একটি আদর্শহীন, ডিগবাজি দেওয়া ব্যক্তিকে নিয়ে এসে আওয়ামী লীগ কি প্রমাণ করতে চাইলো?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে একটি ভুল বার্তা দিল। সাধারণত অন্যের দল থেকে ভাগিয়ে নিয়ে আসার সংস্কৃতি করে আদর্শহীন রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি-জাতীয় পার্টি এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন সমঝোতা করে অন্য দল থেকে ভাগিয়ে নিয়ে এসে নেতা বানানোর সংস্কৃতি বাংলাদেশে চালু হয়েছে ৭৫ এর পরে। এটি কোনভাবেই আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি না, আওয়ামী লীগের সঙ্গে এটি যায়ও না। সেই আওয়ামী লীগ কিভাবে এরকম একজন ব্যক্তিকে কারামুক্ত করে আওয়ামী লীগে ভেড়ালো এবং নৌকা প্রতীক দিলো? তা নিয়ে সুধীজনের মধ্যে সমালোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি কি এতোই দেউলিয়া হয়ে গেল যে, শাহজাহান ওমরের মতো পরগাছা এবং রিক্ত-সিক্তদেরকে নির্বাচনে আনতে হবে? এবং নির্বাচনে আনার জন্য নাটক করতে হবে?
তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন অন্য কথা। তারা মনে করছেন, শাহজাহান ওমরকে আওয়ামী লীগে ভেড়ানোর পেছনে অন্য কোন কৌশলগত কারণ আছে। এর প্রধান কারণ হলো- বিএনপির মনোবল ভেঙে দেওয়া, বিএনপির দুর্গে হানা দেওয়া এবং এমন একটি বার্তা দেওয়া যে, যারা জেলে আছে তাদের সঙ্গেও ক্ষমতাসীন দল যোগাযোগ করছে। তবে, অতীত অভিজ্ঞতা সবসময় বলে, রাজনীতিতে এই সমস্ত পরগাছা-আবর্জনা নিয়ে কোনদলই লাভবান হয় না। শেষ পর্যন্ত এই পরগাছারাই ক্ষতির কারণ হয়।