ঈদ ঘনিয়ে আসলেও লঞ্চের কেবিন ফাঁকা
পদ্মা সেতুতে বদৌলতে বদলে গেছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়কপথে যাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় কমেছে লঞ্চযাত্রী। ফলে ঈদ-উল ফিতর ঘনিয়ে আসলেও এবার এখন পর্যন্ত অধিকাংশ লঞ্চের কেবিন ফাঁকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা।
বুধবার সকালে একাধিক লঞ্চের মালিকরা জানিয়েছেন, পবিত্র ঈদ-উল ফিতর দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি রুটে চলাচলের জন্যে ইতোমধ্যে ১৮০টি লঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ লঞ্চের কেবিন এখনও বিক্রি হয়নি। লঞ্চ মালিকদের দাবি, আগে যেখানে প্রতিদিন ছয় থেকে সাতটি লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে চলাচল করতো, সেখানে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর এখন মাত্র দুটি করে লঞ্চ চলাচল করছে। অর্থাৎ প্রতিদিন ঢাকা থেকে দুটি এবং বরিশাল থেকে দুটি। এরপরেও যাত্রী সংকট কাটছে না। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নিয়েও যাত্রী মিলছে না।
সূত্রমতে, ঈদ উপলক্ষে ১৮ এপ্রিল ঢাকার সদরঘাট থেকে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু করা হয়। ওইদিন ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চের ভিআইপি থেকে শুরু করে সোফা, ফ্যামিলি, ডাবল ও সিঙ্গেল বেশিরভাগ কেবিন ছিল ফাঁকা। লঞ্চের ব্যবস্থাপক, স্টাফ ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যাত্রী সংকটের কারণে লঞ্চের রেস্টুরেন্টেও বেচাকেনা কমেছে। অধিকাংশ লঞ্চ লোকসান দিয়ে চলাচল করছে। এখন অধিকাংশ লঞ্চের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে মালামাল পরিবহন। বিশেষ করে লঞ্চে মালামাল পরিবহনের খরচ কম। তাই ব্যবসায়ীরা সড়কপথের চেয়ে নৌপথে মালামাল আনা-নেওয়া করছেন। এটিই এখন লঞ্চের আয়ের প্রধান উৎস।
বুধবার সকালে অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের কেবিনবয় মো. মাসুম বলেন, যাত্রী সংকটের কারণে মালিকপক্ষ এখন আমাদের বেতন দিতে হিমশিত খাচ্ছেন। যাত্রী সংকট না থাকলে আমাদের এ সমস্যায় পরতে হতোনা।
লঞ্চের ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির বলেন, ঈদের প্রথম যাত্রায় ঢাকা থেকে বরিশালে আসার সময় লঞ্চের দুইশ’ কেবিনের মধ্যে ৫০টি ছিলো ফাঁকা। এরমধ্যে ৫০টি কেবিনে যাত্রী তুলতে হয়েছে দর কষাকষি করে, অর্থাৎ কম দামে। তিনি আরও বলেন, যেখানে ডেকের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করেছে ৪৮০ টাকা। সেখানে আমরা ২৫০ টাকা করে নিয়েও কাঙ্খিত যাত্রী পাচ্ছিনা। সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১২শ’ টাকা হলেও নেওয়া হচ্ছে আটশ’ এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া ২৪শ’ স্থলে নেওয়া হচ্ছে ১৮শ’টাকা। পাশাপাশি ভিআইপি কেবিন তেমন ভাড়া হয়না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সুন্দরবন নেভিগেশনের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌপথের অত্যাধুনিক লঞ্চগুলোকে ব্যবসায় ফেরাতে মালিকপক্ষ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যাত্রী সংকটের কারণে এখন প্রতিদিন নতুন কয়েকটি রুট যুক্ত করে লঞ্চগুলো নোঙর করা হচ্ছে। এতে যাত্রী কিছুটা বাড়লেও আগের মতো ব্যবসা হচ্ছেনা। তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার আগে রোজা শুরুর সাথে সাথে কেবিনের জন্য যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পরতেন। ১৫ রোজার মধ্যে সব লঞ্চের কেবিন বুকিং হয়ে যেতো। অথচ এবার ঈদ অতি সন্নিকটে থাকার পরে এখনও অধিকাংশ লঞ্চের কেবিন ফাঁকা। বরিশাল থেকে ঢাকায় যাওয়ার বুকিং নেই বললেই চলে। ফলে প্রতি ট্রিপে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
সুরভী লঞ্চের পরিচালক রেজিন উল কবির বলেন, ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে ১৮ এপ্রিল থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে কিন্তু এখনও আমাদের লঞ্চের কেবিন বুকিং সম্পন্ন হয়নি। তিনি আরও বলেন, জ্বালানির দাম কমানো এবং নদীর নাব্যতা সংকট দূর করা গেলে আমরা কিছুটা লাভের মুখ দেখতাম।
লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন লঞ্চ কোম্পানির চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, নৌপথ সচল রাখতে নাব্যতা সংকট দূর করা এখন অতীব জরুরি হয়ে পরেছে। তিনি আরও বলেন, লঞ্চগুলো যে শুধু যাত্রী টানছে তা নয়, পণ্য পরিবহনের বাহনও। একেকটি লঞ্চ কমপক্ষে দেড় থেকে দুই হাজার টন পণ্য পরিবহন করে। এজন্য সড়কপথে কমপক্ষে তিনশ’ ট্রাকের প্রয়োজন। কিন্তু এতে পরিবহন খরচ অনেক বেশি। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি তখন মহাসড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে পণ্য এবং যাত্রী পরিবহনের জন্য নৌপথগুলো সচল রাখা প্রয়োজন।
সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় লঞ্চের যাত্রী কমেছে। এর সাথে জ্বালানির দামও বেড়েছে। মূলত জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় যাত্রী সংকটে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। নতুবা কম ভাড়া নিলেও পোষানো যেতো। এছাড়া ঋণ নিয়ে লঞ্চগুলো নির্মান করানো হয়েছে। ঋণের যে পরিমাণ সুদ আসছে, তা পরিশোধ করতে প্রতিটি লঞ্চ মালিকদের কষ্ট হচ্ছে। এজন্য ঋণের সুদ কিছুটা কমিয়ে দেওয়ার জোর দাবি করছি। এবার ঈদে বরিশাল ও ঢাকা থেকে চারটি করে লঞ্চ চলাচল করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ঈদের দুইদিন আগে পাঁচ থেকে ছয়টি করে লঞ্চ চলাচলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।