আগস্ট ট্রাজেডি: অলৌকিক ভাবে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা

আগস্ট ট্রাজেডি: অলৌকিক ভাবে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা

কিছুটা জেদ করেই শেখ হাসিনা পশ্চিম জার্মানিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই সিদ্ধান্তই তাঁর ও শেখ রেহানার প্রাণ রক্ষা করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৭ জুলাই বঙ্গবন্ধু কার্লসরুয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টহাউসে অবস্থানরত তাঁর জামাতা ওয়াজেদ মিয়াকে ফোন করেন। তিনি ওয়াজেদ মিয়াকে জানান, ওই মাসের শেষের দিকে রেহানা ও নিজের দুই ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে হাসিনা জার্মানি যাবে। ওয়াজেদ মিয়া বলেন, ‘কয়েক মাস পর আমি দেশে ফিরতে পারি। হাসিনার অত টাকাপয়সা খরচ করে জার্মানি আসা ঠিক হবে না।’ তখন বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোমার ছেলে জয়কে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না। ও সারাক্ষণ তোমার কথা বলে, তোমার খোঁজ করে এবং তোমার কাছে যেতে চায়। কথাগুলো বলে বঙ্গবন্ধু ফোনটা শেখ হাসিনাকে দেন। শেখ হাসিনাকেও ওয়াজেদ মিয়া একই কথা বলেন। শেখ হাসিনা তখন ওয়াজেদ মিয়াকে বলেন, ‘তুমি যতই আপত্তি করো না কেন, আমি জার্মানি চলে আসবই।’

জার্মানিতে গবেষণাকাজে ওয়াজেদ মিয়ার তখন প্রায় সাড়ে তিন মাস পার হয়েছে। প্রবাসে স্ত্রী শেখ হাসিনা ও দুই ছেলেমেয়ে জয় আর পুতুলকে দেখার আকুতি থাকলেও শুধু খরচের বিষয় চিন্তা করে তিনি তাঁদের সেই সময় জার্মানিতে যেতে নিষেধ করেছিলেন।

 

পেছনের কথা

১৯৭৫ সালের ২৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জ্যামাইকায় কমনওয়েলথ জোটের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পথে ফ্রাঙ্কফুর্টে সাত ঘণ্টা যাত্রাবিরতি করেন। এর চার দিন আগে পশ্চিম জার্মানির বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব তারিক করিম ফ্রাঙ্কফুট রাইন মাইন বিমানবন্দরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযাত্রীদের যাত্রাবিরতিকালীন বিশ্রাম ও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেন। বাংলাদেশ থেকে আসা অতিথিদের জন্য ডিভিআইপি লাউঞ্জের ব্যবস্থা করা হয়। যাত্রাবিরতির দিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটি দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসপ্রধান, ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে নিয়োজিত বাংলাদেশের অনারারি কনস্যুলার, সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা অনিল দাশগুপ্ত প্রমুখ দেখা করেন।

ফ্রাঙ্কফুর্টে যাত্রাবিরতি শেষে বঙ্গবন্ধু লুফৎহানসার একটি বিমানে জ্যামাইকা রওনা হন। বিমানবন্দরে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী তাঁকে বিদায় জানান। এ সময় দূতাবাসের প্রথম সচিব তারিক এ করিমও রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডান পাশে ছিলেন রাষ্ট্রদূত আর বাঁ পাশে ছিলেন তারিক এ করিম তাদের একটু সামনে ছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন। বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরে আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানান। রাষ্ট্রদূত চৌধুরী তখন তারিক এ করিমকে দেখিয়ে বলেন, ‘স্যার, আমি কিছুই করিনি, সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ পাওয়ার কথা ওরই।’ বঙ্গবন্ধু এ সময় তারিক এ করিমের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলেন, ‘শিগগিরই আমার দুই কন্যা জার্মানিতে আসবে। তোমরা ওদের একটু দেখে রেখো।’

প্রায় ৪৫ বছর পর সেই কথা স্মরণ করতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে তারিক এ করিম বলেন, তিনি কি তখনই বুঝতে পেরেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যারা যখন জার্মানি আসবে, তারপরই তিনিসহ তাঁর পরিবারের জীবনে নেমে আসবে নৃশংস নিশ্চিত সেই মৃত্যুর থাবা!

এর আগে মার্চ মাসে একদিন রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব ও প্রেস অ্যাটাশে আমজাদুল হককে জানান, ১৩ মার্চ সকালের দিকে বঙ্গবন্ধুর জামাতা এম এ ওয়াজেদ মিয়া ফ্রাঙ্কফুর্টে আসবেন। কার্লসরুয়ের পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্রে তিনি পোস্টডক্টরাল করার জন্য আসছেন। রাষ্ট্রদূত চৌধুরী আমজাদুল হককে অনুরোধ করেন ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে যেতে এবং ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে কিছুটা সময়ও কাটিয়ে আসতে। সেদিন আমজাদুল হক বিমানবন্দরে যান ও ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বেশ কিছু সময় কাটান। তখন কথা প্রসঙ্গে জানতে পারেন তাঁরা দুজনই রাজশাহী কলেজে পড়াশোনা ও সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। দুজনই কলেজের মুসলিম হোস্টেলে থাকতেন। আমজাদুল হক পরে বেশ কয়েকবার বন থেকে কার্লসরুয়ে গিয়ে ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের দুজনের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।

ওয়াজেদ মিয়া ১৯৭৫ সালের ১৩ মার্চ সকালের দিকে ফ্রাঙ্কফুর্টে এসে পৌঁছান। তিনি জার্মানিতে এসেছিলেন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশনের বৃত্তি নিয়ে কার্লসরুয়ে পরমাণু গবেষণাকেন্দ্রে পোস্টডক্টরাল গবেষণার কাজে।  এর আগে তিনি ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। কার্লসরুয়ে জার্মানির অন্যতম প্রাচীন শহর। ১৭১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শহরটি বাতেন ভুর্টেমবের্গ রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। চমৎকার স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত পুরোনো কেন্না ও উদ্যান শহরটির এক বড় বৈশিষ্ট্য। জার্মানির সুপ্রিম কোর্ট ও বিখ্যাত পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কার্লসরুয়ে ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এখানেই অবস্থিত। শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবেও এই শহরটির পরিচিতি রয়েছে। এখানে আছে সাতটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে পরমাণু গবেষণাকেন্দ্রের অবস্থান।

সেদিন (১৩ মার্চ) আমজাদুল হক ছাড়াও সেই সময় কার্লসরুয়ে পরমাণু গবেষণাকেন্দ্রে কর্মরত ড. সৈয়দ রেজা হোসেন ও আমিরুল ইসলাম (বাবুল) ও বিমানবন্দরে যান। আমজাদুল হক তাঁর গাড়িতে করে ওয়াজেদ মিয়াসহ তাঁদের কার্লসরুয়ে পৌঁছে দেন।

পরমাণু গবেষণাকেন্দ্রে পৌঁছানোর পর বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু দাপ্তরিক কাজকর্ম সম্পন্ন করার জন্য ওয়াজেদ মিয়াকে কেন্দ্রের গাড়িতে করে প্রশাসনিক ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তিনি যান নিউট্রন ফিজিকস ও পরমাণু চুল্লিবিষয়ক কেন্দ্রে। সেখানে ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও খ্যাতনামা পরমাণুবিজ্ঞানী ড. কার্ল ভিটজের (Karl Writz) সঙ্গে দেখা করে তিনি তাঁর গবেষণার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া কার্ল ভিটজের সহকারী প্রফেসর কুশলের সঙ্গেও তিনি পরিচিত হন।

কার্ল ভ্রিটজ তখন পশ্চিম জার্মানির পরমাণু কমিশনের সদস্য। এ ছাড়া তিনি জার্মান সরকারের পারমাণবিক অস্ত্রবিষয়ক চুক্তির পরামর্শক এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত পারমাণবিক ফোরামের সদস্য ছিলেন। তাঁর গবেষণা কাজের জন্য তিনি ১৯৭৫ সালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির সর্বোচ্চ সম্মানসূচক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘ফেরডিন্ট ক্রয়েজ’—এ ভূষিত হন। ওয়াজেদ মিয়ার সৌভাগ্য যে তাঁর পূর্বতন একাডেমিক রেকর্ড তাঁকে স্বনামধন্য অধ্যাপক কার্ল ভ্রিটজের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করার সুযোগ করে দিয়েছিল।

১৯৭৫ সালের মধ্য মার্চে ওয়াজেদ মিয়া যখন কার্লসরুয়ে আসেন, তখন অল্প বাঙালি ছাত্র—গবেষক ওই শহরে থাকতেন। তাঁরা মাঝেমধ্যে একসঙ্গে মিলে রান্নাবান্না করতেন ও আড্ডা দিতেন। ওই গবেষণাকেন্দ্রে তখন বলবীর গোয়েল নামে একজন ভারতীয় পরমাণুবিজ্ঞানী চাকরি করতেন। তার সঙ্গে ওয়াজেদ মিয়ার ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ ছাড়া কার্লসরুয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিষয়ক গবেষক শহীদ হোসেনের সঙ্গেও ওয়াজেদ মিয়ার সখ্য হয়। ওয়াজেদ মিয়া লেকচারার অতিথি ভবনের একটি সিঙ্গেল রুমে উঠেছিলেন। তাঁর কাছাকাছি ছাত্রাবাসে থাকতেন শহীদ হোসেন। ছুটির দিনে তাঁরা প্রায়ই গেস্টহাউস লাগোয়া চমৎকার পুরোনো একটি পার্কে গিয়ে বসতেন। মাঝেমধ্যে শহরের প্রধান সড়ক কাইজার স্ট্রাসেতেও হাঁটতেন। ওয়াজেদ মিয়া মাঝেসাঝে পাইপ টানতেন। সেই স্ট্রাসে বা রাস্তার একটি চুরুট ও পাইপসামগ্রীর দোকানের সামনে তিনি প্রায়ই দাঁড়াতেন আর কোনো একটি পাইপ দেখিয়ে বলতেন, ওই পাইপটি আমাকে কিনতে হবে। সেই সময় জার্মান গাড়ি কোম্পানি ভক্সওয়াগন গলফ নামে নতুন মডেলের একটি গাড়ি বের করেছিল। সেই নতুন গাড়ির মডেলটিও ওয়াজেদ মিয়ার খুব পছন্দসই ছিল। একদিন কথা প্রসঙ্গে শহীদ হোসেনকে ওয়াজেদ মিয়া জানান, কিছুদিন পর তিনি ওই গাড়িটি কিনতে চান। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি একদিন কার্লসরুয়েতে দীর্ঘ সময় ধরে তুষারপাত হয় ওয়াজেদ মিয়া আর শহীদ হোসেন তুষারপাতের মধ্যেই নিকটবর্তী কার্ল ভিলহেমের কেল্লার দিকে যান এবং কেল্লার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। প্রথম দিকে ওয়াজেদ মিয়া রান্না করা নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন। শহীদ হোসেন এসব বিষয়ে তাঁকে সহযোগিতা করেন।

শেখ হাসিনা তাঁর দুই সন্তান ও বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই পশ্চিম জার্মানিতে পৌঁছান। সেদিন রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী আবার আমজাদুল হককে ফ্রাঙ্কফুর্ট যেতে বলেন। খুব ভোরের ফ্লাইটে তাঁরা ফ্রাঙ্কফুর্টে পৌঁছাবেন বলে আমজাদুল হক ও ওয়াজেদ মিয়া আগের রাতে একটি হোটেলে রাত যাপন করেন। সেই রাতে রাজশাহীর কলেজের স্মৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধকালে দিল্লিতে পাকিস্তানি দূতাবাস থেকে আমজাদুল হকের পক্ষত্যাগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তাঁর অবস্থান গ্রহণ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা হয়। আমজাদুল হক এই লেখককে বলেছেন, খুব সোজা সরল ও স্পষ্টভাষী ছিলেন ওয়াজেদ মিয়া। আলাপচারিতায় ওয়াজেদ মিয়া আমজাদুল হককে জানান, কয়েক দিন পরেই তিনি বনে আসবেন এবং হাসিনাদের আশপাশের কয়েকটি দেশ ঘুরিয়ে দেখাবেন। রাষ্ট্রদূত চৌধুরীও আমজাদুল হককে জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বনে দুই দিন থেকে ব্রাসেলসে রাষ্ট্রদূত সানাউল হক ও প্যারিসে রাষ্ট্রদূত আবুল ফতেহ—এর ওখানে বেড়াতে যাবেন। সম্ভব হলে রোমেও যাবেন ।

শেখ রেহানা তখন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে বড় বোন শেখ হাসিনা তাঁকে বলেন তাঁর সঙ্গে ইউরোপ ভ্রমণে যাওয়ার জন্য। তাঁদের পশ্চিম জার্মানি বেড়াতে আসা প্রসঙ্গে শেখ রেহানা এক স্মৃতিচারণায় বলেন, ‘আমার দুলাভাই ওখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলোশিপ করছিলেন। আপার পাঁচ বছরের জয় আর ছোট্ট পুতুলকে নিয়ে জার্মানিতে যাওয়ার কথা। আমার সামনে তখন ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা। আপা বললেন, নিরিবিলি পড়তে পারবি ওখানে গেলে। আর কত—কী দেখবি, কত কিছু কিনে দেব, প্যারিস নিয়ে যাব। ইউরোপ ঘুরে দেখতে পারবি গাড়িতে। আমারও লোড হলো

৩০ জুলাই ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে নেমেই শেখ হাসিনা আমজাদুল হকের সামনেই শেখ কামালের বিয়েতে ওয়াজেদ মিয়ার উপস্থিত না হওয়া নিয়ে অনুযোগ করেন। অনুযোগটা ছিল খুবই স্বাভাবিক। শেখ কামালের বিয়ে হয়েছিল ১৫ জুলাই। এর তিন দিন পর ১৮ জুলাই শেখ জামালের বিয়ে হয়। বিয়েতে উপস্থিত থাকার জন্য বঙ্গবন্ধু দুবার ওয়াজেদ মিয়াকে ফোন করেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চিঠি লেখেন। লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর নুরুল মোমেন খান, রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী বাংলাদেশ থেকে (তখন তিনি বাংলাদেশে ছিলেন) ও আমজাদুল হক ফোনে ওয়াজেদ মিয়াকে তাঁর শ্যালকদের বিয়েতে যোগ দিতে বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিয়েছিলেন।

কিন্তু ওয়াজেদ মিয়া ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাঁর দুই শ্যালকের বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তিনি একাডেমিক প্ল্যান ও স্কলারশিপের শর্তগুলোর বিষয়ে খুব সতর্ক ছিলেন। তিনি চাননি ইনস্টিটিউটের শর্তের বাইরে গিয়ে কিংবা পরিচালক কার্ল ভিটজের অনুমতি ছাড়া কিছু করতে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, জার্মানিতে বিদেশি কোনো ছাত্রের পক্ষে ওই ধরনের সম্মানীয় একজন প্রফেসরের অধীনে পোস্টডক্টরেট করা ৪৫ বছর আগে যেমন কঠিন ছিল, আজও তাই হয়ে গেছে।

অনুমতির ব্যাপারে প্রফেসর ভ্রিটজের অনমনীয় ও অনড় অবস্থান গ্রহণ করায় ওয়াজেদ মিয়া শ্যালকদের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশে না আসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। আমজাদুল হক জানান, ওই সময় তাঁর সঙ্গে কার্লসরুরে অবস্থানরত ওয়াজেদ মিয়ার একাধিকবার ফোনে কথা হয়েছিল। পোস্টডক্টরাল চলারশিপের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শক্তি কমিশনের কঠিন শর্ত, প্রফেসর ভ্রিটজের অনমনীয় এবং সবার অনুরোধের পরও ১৫ জুলাই শেষ কামালের বিয়েতে তাঁর উপস্থিত হতে না পারা। এসব কিছু নিয়ে তখন ভীষণই মানসিক দোলাচলে ছিলেন ওয়াজেদ মিয়া।

(সূত্র: ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড প্রবাসে বঙ্গবন্ধু কন্যার দুঃসহ দিন)