অবসরের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব, লাশ ফেলে পালাল সন্তানরা
চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনির আহমদ (৬৫) মারা যান। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মারা যান তিনি। মরদেহ হাসপাতাল থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসা হয়।
হাসপাতাল থেকে লাশ বাড়িতে আনলেও কয়েক ঘণ্টা ব্যবধানে লাশ দাফন হয় না। কারণ, বাবার অবসরের টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সন্তানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ ঘটনায় বাবার লাশ ফেলে পালায় তিন মেয়ে। অবশেষে ৩৬ ঘণ্টা পর লাশ দাফন করা হয়।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল মাহমুদ ও কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
তবে মৃত মনির আহমদের স্ত্রীর অভিযোগ, তার তিন মেয়ে মনিরের মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে অসুস্থ বাবাকে অ্যাম্বুলেন্সে রেখে এফডিয়ারের ৩০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে।
রোববার বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে কর্ণফুলী থানা পুলিশের সদস্যরা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছেন। সন্তানদের এমন কাণ্ডে হতবাক স্থানীয়রা।
মনির আহমদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম জানান, বাবা পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। অবসরের পর ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। মেজ বোন বেবি আকতার বাবাকে চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে এবি ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে ৩০ লাখ টাকা তোলে নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, মনিরের অবসরের টাকা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে মেজ মেয়ে বেবি আকতারের সঙ্গে অন্য ভাই-বোনদের বিরোধ চলছিল। তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর এ নিয়ে রোববার সকালে ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে সামাজিক বৈঠকও হয়। মারা যাওয়ার পর লাশ বাড়ির পাশের সড়কে রেখে দেওয়া হয়। সকাল থেকে অবসরে টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ চলছিল।
তবে বেবি আকতার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, আমার বাবার অবসরের কোনো টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করিনি। তাদের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
মনিরের ছোট মেয়ে লিপি আকতার জানান, আমরা তিন বোন মিলে বাবার চিকিৎসার খরচ বহন করছি। ভাইরা কোনো সহযোগিতা করেনি। অবসরের টাকার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেছে। বাবার অবসরের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশীদ বলেন, অবসরের টাকার জন্য তার সন্তানদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের মাধ্যমে বৃদ্ধের সন্তানদের মাঝে সৃষ্ট বিবাদ নিরসন করা হয়।
কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী জানান, ছোট ছেলে বিদেশ থেকে আসতে না পারায় সোমবার সকালে দাফন করা হয়েছে। তবে অবসরের টাকা বাটোয়ারার দ্বন্দ্ব নিয়ে তদন্ত নেমেছে প্রশাসন। তবে এ রকম ঘটনা যেন আর না হয়, সেদিকে প্রশাসনের নজর রয়েছে।