প্রেমিক মাসুদের পরিকল্পনায় স্বামীকে হত্যা, স্ত্রীর স্বীকারোক্তি
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ব্যবসায়ী মো. মঈন উদ্দিনকে (৪৬) ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনজনের সহায়তায় এ কাজ করেছেন মঈনের স্ত্রী রজ্জবের নেছা ওরফে রিনা (৩৫) নিজেই। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে তিনি এ স্বীকারোক্তি দেন রিনা।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল হোসাইন নিহত মঈন উদ্দিনের স্ত্রী রজ্জবের নেছার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি দেয়ার পর আদালতের নির্দেশে রিনাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে এ ঘটনায় জড়িত মাসুদসহ অন্য তিন আসামির কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
নিহত মো. মঈন উদ্দিন সেনবাগের ডুমুরুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণকাটা গ্রামের ফকিরবাড়ির মৃত রুহুল আমিনের ছেলে। তিনি চট্টগ্রামের ধনিয়ালাপাড়ায় নিজের রেস্তোরাঁ চালাতেন।
এর আগে, রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ডুমুরুয়া ইউনিয়নের হরিণকাটা গ্রামে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে সোমবার রাতে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানা গেছে, ব্যবসায়ী মো. মঈন উদ্দিন হত্যাকাণ্ডে তার স্ত্রী রজ্জবের নেছা ওরফে রিনাকে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা এলাকার বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় নিহত মঈনের মা রাহেলা বেগমের দায়ের করা মামলায় রিনাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে মহিন উদ্দিনের স্ত্রী রিনার দেয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, অনৈতিক সম্পর্কের জেরে প্রেমিকের পরিকল্পনা অনুসারে নিজের স্বামীকে হত্যা করে সে। এতে সহায়তা করে প্রেমিক মাসুদসহ আরও দুজন। ঘটনার দিন দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রথমে অচেতন করা হয় মহিনকে। পরে ঘুমন্ত স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করে রিনা ও তার সহযোগী মাসুদ।
পুলিশ জানায়, মহিনের লাশ ঘরের দরজায় ফেলে রেখে অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীরা তার স্বামীকে হত্যা করেছে বলে প্রচার করে রিনা।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, তিন সন্তানের জননী রিনার সঙ্গে স্বামী মহিনের বন্ধু মাসুদের অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর জেরে তাকে মৌখিক তালাক দেন মহিন। পরে স্বজনদের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়। তবে রিনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থায়ী করতে তার স্বামী মহিনকে হত্যার প্রস্তাব দেয় প্রেমিক মাসুদ। এক পর্যায়ে মাসুদের প্রস্তাবেই নিজের স্বামীকে খুন করতে সম্মত হয় রিনা।
সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী মঈনের স্ত্রী রিনার বরাতে জানান, রিনার স্বামী চট্টগ্রামে খাবারের হোটেলের ব্যবসা করতেন। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসতেন। প্রায় তিন-চার বছর আগে তার (রজ্জবের নেছা) সঙ্গে প্রতিবেশী মাসুদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাসুদ তার স্বামী মঈনের বন্ধু ছিলেন। রজ্জবের নেছা আরও জানান, তার ও মাসুদের সম্পর্কের বিষয়টি এক পর্যায়ে জানাজানি হয়ে যায়। যার কারণে প্রায় ৯-১০ মাস আগে তার স্বামী রাগের মাথায় তাকে মৌখিকভাবে তালাক দেন। পরবর্তী সময়ে সন্তানদের কথা বিবেচনা করে তাকে আবারও বাপের বাড়ি থেকে ফিরিয়ে আনেন।
রজ্জবের নেছা জানান, স্বামীর বাড়িতে ফিরে এলেও মাসুদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। তাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তার স্বামী চট্টগ্রাম থেকে বাড়িতে আসার বিষয়টি মাসুদ ভালোভাবে নিতে পারেননি। এর জেরে মাসুদের পরিকল্পনায় তিনি (রজ্জবের নেছা) দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রোববার রাতে স্বামীকে খাওয়ান। দুধ খাওয়ার পর স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে তিনি ও মাসুদসহ তিন আসামির সহায়তায় মঈন উদ্দিনকে আনুমানিক রাত তিনটার দিকে ঘর থেকে বের করে ঘরের দরজায় আনেন। তখন মাসুদ তার স্বামীর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে অচেতন অবস্থায় রেখে যান। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চিৎকার-চেঁচামেচি করে বাড়ির লোকজনকে জড়ো করে কে বা কারা তার স্বামীকে হত্যা করে ফেলে গেছে বলে জানান।