৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ: বাড়িতে তালা দিয়ে উধাও রূপালী ব্যাংকের ম্যানেজার

৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ: বাড়িতে তালা দিয়ে উধাও রূপালী ব্যাংকের ম্যানেজার

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রূপালী ব্যাংকের জয়নগর বাজার শাখার ম্যানেজার (ব্যবস্থাপক) মুহাম্মদ মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে তিন কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ ওঠার পর থেকে গত আট দিন ধরে ‘আত্মগোপনে’ রয়েছেন তিনি। মফিজুর রহমান একই উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়নের ফলসি গ্রামের মো. মতিয়ার রহমান মোল্যার ছেলে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জয়নগর বাজার শাখার এক কর্মকর্তা জানান, অর্থ আত্মসাতের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন মফিজুর রহমান। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ব্যাংকের গোপালগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. আব্দুল মান্নানকে প্রধান কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।

জয়নগর বাজার শাখা সূত্রে জানা গেছে, মফিজুর রহমান ২০১৯ সালের শেষের দিকে রূপালী ব্যাংকের জয়নগর বাজার শাখায় ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন। চলতি বছরের জুলাই মাসে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি টিম ওই শাখায় অডিটে আসে। তখন ম্যানেজারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও আর্থিক অনিয়মের সত্যতা পান টিমের সদস্যরা। গত ২৬ জুন ওই শাখা থেকে মফিজুর রহমানকে বদলি করা হয়। সেইসঙ্গে শাখা ম্যানেজার হিসেবে সিনিয়র কর্মকর্তা মো. ফাইজুর রহমানকে নিযুক্ত করা হয়। গত ১ আগস্ট ফাইজুর রহমান দায়িত্ব বুঝে নিতে ব্যাংকে এলে মফিজুর রহমান আত্মগোপনে চলে যান। পরদিন কাশিয়ানী থানায় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে লিখিত দেন শাখার নতুন ম্যানেজার ফাইজুর রহমান। একইসঙ্গে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইমিগ্রেশন শাখায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রূপালী ব্যাংকের জয়নগর বাজার শাখার ম্যানেজার মফিজুর রহমান অর্থ জালিয়াতি ও আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তিনি যাতে কোনও অবস্থায় দেশত্যাগ করতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’

এ ছাড়া অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ওই শাখার পক্ষ থেকে ২ আগস্ট কাশিয়ানী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ফাইজুর রহমান। এই অভিযোগে তার সন্ধান চেয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

শাখার দুই জন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মফিজুর রহমান ব্যাংকের শাখা থেকে বড় অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ তিন কোটির বেশি। এই কারণে আত্মগোপন করেছেন। রূপালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের তিন সদস্যের একটি টিম বিষয়টি তদন্ত করছে। একইসঙ্গে দুদকের একটি টিম অনিয়মের তদন্ত করছে।

এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে ব্যাংকের বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক মো. ফাইজুর রহমান বলেন, ‘১ আগস্ট নতুন কর্মস্থলে যোগদান ও দায়িত্ব বুঝে নিতে এলে শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মফিজুর রহমানকে পাইনি। ওই দিন থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। এর মধ্যে তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। পরে কাশিয়ানী থানায় লিখিত দিই। পাশাপাশি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইমিগ্রেশন শাখায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। যেন তিনি দেশ ছাড়তে না পারেন, ইমিগ্রেশন পুলিশকে সে অনুরোধ করা হয়েছে।’ 

এ ঘটনায় ব্যাংকটির গোপালগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. আব্দুল মান্নানকে প্রধান কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় আমাকে দায়িত্বহীনতার দায়ে বদলি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে আমার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।’ 

এ বিষয়ে জানতে মফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। জেলা শহরের মিয়াপাড়ার বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়ির দরজায় তালা দিয়ে তারা চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কোথায় গেছেন জানতে চাইলে দুই প্রতিবেশী জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে তারা কেউ বাড়িতে নেই। কয়েক বছর আগে বাড়িটি কিনেছেন মফিজুর রহমান। এরপর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন। বাড়িটি শ্বশুরের নামে থাকলেও মূল মালিক মফিজুর।

কাশিয়ানী থানার ওসি মুহাম্মদ ফিরোজ আলম বলেন, ‘মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ২ আগস্ট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ফাইজুর রহমান। বিষয়টি তদন্ত করছি আমরা। একইসঙ্গে তিনি কোথায় আছেন, সে অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে।’