সারাহ ইসলামকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর দাবি সংসদে
মরণোত্তর কিডনি ও কর্নিয়া দান করায় সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্যকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানোর দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি করেন।
দেশে প্রথমবারের মতো মৃত ব্যক্তির দান করা কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে গত ১৮ জানুয়ারি রাতে এ তথ্য উল্লেখ করে হানিফ বলেন, কিডনি দান করে গেছেন ২০ বছর বয়সী কিশোরী সারাহ। মৃত্যুর আগে সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্য অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি তার কর্নিয়াও দান করে গেছেন। তার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা মনে করি সারাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো উচিত। তিনি অন্যন্য নজির স্থাপন করেছেন। সারাহকে সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানালে অনেকে মরদেহ দিতে এগিয়ে আসবেন বলেও জানান হানিফ।
মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন সংশোধন করে কঠোর নজরদারির মাধ্যমে স্বেচ্ছায় অঙ্গদানের সুযোগ তৈরি করার পরার্মশ দিয়ে আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য বলেন, ইসলাম বা বিদ্যমান আইনে অঙ্গদানে কোনো বাধা নেই। তবে এখন শুধু নিকটাত্মীয়রা এটি দিতে পারেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাই।
উল্লেখ্য, মাত্র ২০ বছর বয়সে মারা যান মেধাবী তরুণী সারাহ ইসলাম। তিনি ১০ মাস বয়সে ‘টিউমার স্কেলেলিস’ রোগে ভুগছিলেন। এ মারণব্যাধি রোগ নিয়েই তিনি অগ্রণী গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন গোল্ডেন জিপি-৫ পেয়ে। এরপর ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলভমেন্ট অলটারনেটিভে (ইউডা) ফাইন আর্টসে ভর্তি হন। সাহারা ফাইন আর্টসের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তখন থেকেই বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়।
মৃত্যুর আগে নিজেই পুরো দেহ দান করে গেছেন মানুষের কল্যাণে, গবেষণায়। তার চোখ দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখছেন দুজন। তারই কিডনি দিয়ে সুস্থ আছেন আরও দুই ব্যক্তি। কলেজে পড়া অবস্থায় তিনি বুঝতে পারছিলেন, তার জীবন প্রদীপ ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেই মাসহ পরিবার সদস্যদের কাছে তিনি দেহ দানের সিদ্ধান্ত নেন।
গত ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তাকে ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। রাত ১০টার দিকে অস্ত্রোপচার করে তার দুটি কিডনি ও দুটি কর্নিয়া অপসারণ করা হয়। ওইদিন কর্নিয়া ও কিডনি চারজন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনও হয় গত ১৯ জানুয়ারি।