যুক্তরাষ্ট্র নমনীয় হলে কী করবে বিএনপি

যুক্তরাষ্ট্র নমনীয় হলে কী করবে বিএনপি

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে অতি আগ্রহ পোষণ করছে। এই অতি আগ্রহী বিএনপিকে চাঙ্গা করে তুলেছে। বিএনপি এখন আন্দোলন করে সরকার হটানোর পরিকল্পনা নেই। বরং তারা মনে করছে, যেকোনো মূল্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সরকারকে হটাবে এবং একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ক্ষমতায় বসাবে। গত দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে এক প্রকার নীরব যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। নানা রকম চাপ প্রয়োগ করছে। আর এটি বিএনপিকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। বিএনপি মনে করছে এই সরকারকে হটাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বদ্ধপরিকর। আর তাই বিএনপি এখন সাফ জানিয়ে দিয়েছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং এরকম নির্বাচন হতেও দেবে না। 

ইতিমধ্যে বিএনপির নিয়োজিত লবিস্ট ফার্মদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে মার্কিন কংগ্রেসম্যানরাও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দিচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইতিমধ্যে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে শান্তিরক্ষা মিশনে সদস্য নেওয়ার সময় তাদের মানবাধিকারের অতীত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। এরকম একটি পরিস্থিতিতে বিএনপি মনে করছে, কিছু না করে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে থাকলেই হবে। তাহলেই বাংলাদেশের ক্ষমতার পট পরিবর্তন হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় বিএনপির এই আশাবাদে নতুন সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। 

আগামী ২১ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। এই সফরে গিয়ে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা করবেন এবং এই নানা বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গটিও গুরুত্বপূর্ণভাবে স্থান পাবে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে যে সমস্ত নীতিকৌশল গ্রহণ করেছে তার অনেকগুলোতে ভারত দ্বিমত পোষণ করে বলেই ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে। এমনকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এ ব্যাপারে তার অভিমত ব্যক্ত করতেও লুকোচুরি করেননি। আর সে কারণেই অনেকে মনে করছেন এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং ভারতের বিশাল বাজারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অব্যাহত রাখার স্বার্থে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি সমঝোতায় আসতেই হবে। 

অতীতে ভারতই বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান এবং একমাত্র পরামর্শক ছিল। ভারত যেভাবে বাংলাদেশের বিষয়গুলোকে দেখত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে সমর্থন করত। এই অঞ্চলে নানা কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন একঘরে হয়ে পড়েছে। আর তাই ভারত নির্জনতা কাটিয়ে যদি বাংলাদেশকে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিতে চায় তার ফলাফল হিতে বিপরীত হবে। মার্কিন নীতিনির্ধারকদের নিশ্চয়ই এটা অনুভব করবেন। আর এর ফলে অনেকেই ধারণা করছেন যে নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেকটাই নমনীয় হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ব্যাপারে যে আগ্রাসী অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করেছিল সেই অবস্থান থেকে তারা কিছুটা হলেও সরে আসবে। 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশকে যে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া সেখান থেকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটা নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করতে পারে ভারতের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। আর তাই প্রশ্ন উঠেছে যদি শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদির মিশন যদি সফল হয়, ভারত যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের ব্যাপারে নমনীয় করতে পারে তাহলে বিএনপি আন্দোলনের কি হবে? বিএনপির রাজনীতির বা কি হবে? কারণ বিএনপি এখন পুরোপুরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্ভর হয়ে পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপই বিএনপির আন্দোলনের একমাত্র ভরসা। বিএনপি এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের ভয় দেখিয়েই বিএনপি কিছু সমাবেশ করতে পারছে। কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্রই যদি ভারতের কথামতো সহনীয়, নমনীয় এবং একটি নিরপেক্ষ স্থানে যায় তাহলে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কি করবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।