মাদারীপুরে সড়ক দুর্ঘটনা; বিরামহীন ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় গাড়ি চালাচ্ছিল চালক

মাদারীপুরে সড়ক দুর্ঘটনা; বিরামহীন ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় গাড়ি চালাচ্ছিল চালক

সাত মাস আগে জাহিদ হাসান (৪০) ইমাদ পরিবহনে চালক হিসেবে যোগ দেন। ওই পরিবহনের বাসগুলো খুলনা, পিরোজপুর ও সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় চলাচল করে। পরিবহন কোম্পানিটির চালকদের বাস চালাতে হয় অনেকটা বিরামহীনভাবে। জাহিদ হাসানকেও বাস চালাতে হতো ক্লান্ত দেহে, চোখে ঘুম নিয়ে। বিশ্রামের ফুরসত হতো না বললেই চলে। তার পরিণতিই যেন দেখা গেল গতকাল রোববার সকালে।

জাহিদ হাসান বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ঢাকার দোলাইরপাড়ের বাসা থেকে বের হন। ওই দিন রাতেই যাত্রীবাহী বাসটি নিয়ে যান পিরোজপুরে। পরের দিন শুক্রবার সকালে পিরোজপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ছুটে আসেন। শুক্রবার বিকেলে আবার যাত্রী নিয়ে ছুটে যান পিরোজপুরে। রাতে পিরোজপুর পৌঁছে পরের দিন শনিবার সকালে আবার যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ছুটে আসেন। ঢাকা থেকে শনিবার দুপুরে আবার ছুটে যান খুলনায়। রাতে বাসের মধ্যে তিন থেকে চার ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে রোববার ভোর চারটায় খুলনার ফুলতলা থেকে বাসটি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এভাবে তিনি গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় বাস চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।

রোববার বিকেলে জাহিদের ছেলে রাতুল হাসান বাবার লাশ শনাক্ত করার জন্য শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। তিনি বলেন, ‘বাবা সপ্তাহে এক দিন বাসায় আসার সুযোগ পান। গাড়ি চালিয়ে তিনি সব সময় ক্লান্ত থাকেন। বৃহস্পতিবার বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকা, পিরোজপুর, খুলনা রুটে পাঁচটি ট্রিপে বাস চালিয়েছেন। বাবা শনিবার রাতে ফোনে জানান, তিনি খুব ক্লান্ত ছিলেন। রোববার ঢাকায় ফিরে বাসায় এক দিন বিশ্রাম নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাবা আমাদের ফাঁকি দিয়ে চির বিশ্রামে চলে গেলেন।’

চালকদের ব্যস্ত সূচি ও বিশ্রামের ঘাটতির বিষয়ে ইমাদ পরিবহনের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির বাস যারা চালান, তাদের বিশ্রামের জন্য প্রতিটি জায়গায় আমাদের ঘর রাখা আছে। দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির চালক জাহিদ ক্লান্ত ছিলেন, তিনি এমন কথা আমাদের কাউকে জানাননি।’

চালকের ক্লান্তির বিষয়ে শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ওসি আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জেনেছি, ইমাদ পরিবহনের বাসটির চালক কোনো রকম বিশ্রাম না নিয়ে বাসটি চালাচ্ছিলেন। দীর্ঘ সময় বাস চালানোর কারণে তিনি ক্লান্ত ছিলেন। সকাল সকাল ঘুম ঘুম চোখে বাস চালানোয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি।’

উল্লেখ্য, চালক জাহিদ হাসান ইমাদ পরিবহনের বাসটি নিয়ে গতকাল ভোরে খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে তার বাসটি। এতে তিনিসহ ২০ যাত্রী নিহত হন। ক্লান্ত দেহে ঘুমচোখে অতিরিক্ত গতিতে বাস চালানোর কারণে এত প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। জাহিদ হাসানের ছেলেও জানিয়েছেন, টানা বাস চালিয়ে তার বাবা ক্লান্ত ছিলেন।

দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সর্বশেষ চালকের সহকারী ইউসুফের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশ আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি করেছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানিয়েছে, বাসটির চলাচলের অনুমতি ছিল না। ফিটনেস সনদের মেয়াদও পেরিয়ে গিয়েছিল।