বিচার বন্ধে ইউনূস কি শান্তি মিশন বন্ধের তদবির করবেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাকে যখন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অবসর দেওয়া হয়েছিল তখন এই অবসরের সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নিতে পারেননি। অবসরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেন দরবার এবং তদবির করেছিলেন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি ড. কামাল হোসেনকে দিয়ে আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আইনি লড়াইয়ে পরাজিত হওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই নিয়ে আন্তর্জাতিক লবিং করেন। তার পক্ষে সেই সময় বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিবৃতি দিয়েছিলেন। পাশাপাশি হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে টেলিফোন করেছিলেন। টেলিফোনে হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছিলেন। অনতিবিলম্বে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পুনর্বহালের জন্য তিনি অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, আইনের ব্যত্যয় ঘটানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
এবার যখন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা চলমান ঠিক সেই সময় আবার একই কৌশল অবলম্বন করছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে বিচার বন্ধের জন্য বিবৃতি সংগ্রহ করছেন। প্রথমে চল্লিশ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ড. ইউনূসের বিচার বন্ধ চেয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত প্রকাশ করেছেন। এরপর একশো ষাট জনের একটি বিবৃতি সিজিয়ন পিআরের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া হিলারি ক্লিনটন ইউনূসের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এই সমস্ত বিবৃতির জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আইন নিজস্ব গতিতে চলবে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের মামলাটি কোনোভাবেই সরকার করেনি। এটি শ্রমিকদের করা মামলা। বাংলাদেশ যেহেতু আইএলও-এর সঙ্গে সম্পর্কিত এবং আইএলও-এর যেহেতু কতগুলো নিয়ম কানুন আছে সেই নিয়মকানুন অনুযায়ী শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য মামলা করেছে। এই মামলা সরকারের স্থগিত করার কোনো আ ক্ষমতা নেই। এরকম পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার মামলা বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে যখন তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই সময় তিনি পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধের জন্য তদবির করেছিলেন। এবং হিলারি ক্লিনটনের অনুরোধে বিশ্ব ব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধের আকস্মিক ঘোষণা দিয়েছিল। যেটি বোর্ড সভায় অনুমোদন ছাড়াই একক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট। এবারও কি সেরকম কোন অস্ত্র প্রয়োগ করতে চান ড. মুহাম্মদ ইউনূস?—এই প্রশ্নটি এখন কূটনৈতিক অঙ্গনে নানাভাবে ঘোরাফেরা করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছে, এখন বাংলাদেশে শান্তি মিশন ড. ইউনূসের সামনে সবচেয়ে বড় অস্ত্র। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি এবং বাংলাদেশ সবচেয়ে প্রশংসিত দেশ। গত কিছুদিন ধরেই শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ব্যাপারে এক ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। এবং শান্তি মিশন থেকে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রত্যাহারের জন্য বিএনপি সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল লবিং করছেন। ড. ইউনূস কি এখন সেই অস্ত্রটি প্রয়োগ করবেন কিনা তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে ইউনূস সেন্টার থেকে ইতিমধ্যে জাতিসংঘে একটি বার্তা পাঠানো হয়েছে। সেখানে ইউনূসের ওপর তার ভাষায় যে বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে তার ব্যাপারে জাতিসংঘকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, শেষ চেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূস জাতিসংঘকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন। এবং বাংলাদেশের শান্তি মিশনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন। কারণ ব্যক্তি স্বার্থে ড. ইউনূস যেকোনো তৎপরতাই করতে পারেন বলে অনেকে মনে করেন।