বাইডেনের ডিনার পার্টিতে শেখ হাসিনার নিমন্ত্রণ, গলতে শুরু করেছে সম্পর্কের বরফ

বাইডেনের ডিনার পার্টিতে শেখ হাসিনার নিমন্ত্রণ, গলতে শুরু করেছে সম্পর্কের বরফ

গলতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের বরফ। সম্পর্কের যে টানাপোড়েন চলছিল দুটি দেশের মধ্যে ক্রমেই তা ক্ষীণ হয়ে আসছে। ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে শেখ হাসিনা বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। বাইডেনের আয়োজনে সেখানে এক নৈশভোজেও যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তার।

খবর অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনের রাষ্ট্রীয় ডিনার পার্টিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোর ৫টা) নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনে ‘দ্য মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট’র মিলনায়তনে এ অভ্যর্থনা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, নয়াদিল্লি সফরকালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে কিছু কথা হয়েছে। তারই জের হিসেবে বাইডেনের ডিনার পার্টিতে আরও কথা হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। কখনোই তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক খারাপ ছিল না। সে সূত্রেই আমরা পরস্পরের সহযোগিতার দিগন্ত আরও প্রসারিত করতে চাই। মানবতার সার্বিক কল্যাণে যুক্তরাষ্ট্র তার সহায়তা সবসময় অব্যাহত রেখেছে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র তিনি এও জানান।

জাতিসংঘের চলতি ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে নিউইয়র্কে এসেছেন। জাতিসংঘ সফরের প্রথম দিনের কর্মসূচি শেষে সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর হোটেলে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। পাশে ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এম এ মুহিত, উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তৌফিক ইসলাম শাতিল, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা, প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি নূর এলাহি মিনা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইমদাদ চৌধুরী।

এ দিন বাংলাদেশ এবং হাঙ্গেরির মধ্যে তিনটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এগুলো হলো- অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি, ২০২৪-২০২৬ সালের জন্য স্টাইপেনডিয়াম হাঙ্গারিকাম প্রোগ্রামের কাঠামোর মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক এবং একই সময়ের জন্য স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক।

বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন এবং হাঙ্গেরির পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রী এসব চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়। সে সময় রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে হাঙ্গেরির সহযোগিতা কামনা করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর হাঙ্গেরি চাপ অব্যাহত রাখবে বলে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন।

এদিকে শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনার হোস্ট কে হবেন তা নিয়ে চরম উত্তেজনা চলছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ পরিবারে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অভিমত জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের নেত্রী যখন যে দেশেই যান, সেখানেই গণসংবর্ধনা অথবা নাগরিক সংবর্ধনা হয়ে থাকে। নিউইয়র্কেও হবে। তবে সেখানে কে সভাপতিত্ব করেন আর কে সঞ্চালনা করবেন-সেটি একান্তভাবেই নেত্রীর নির্দেশের ওপর নির্ভর করছে। তাই উত্তেজনার কোনো অবকাশ থাকতে পারে না।