'বাংলাদেশের টাকা চোরের গাড়ি' কলকাতার ইডি অফিসের দর্শনীয় বস্তু
কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকার দর্শনীয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় মূল অভিযুক্ত পি কে হালদারের ব্যবহৃত গাড়ি। লোকমুখে গাড়িটি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে 'বাংলাদেশের টাকা চোরের গাড়ি' নামে।
পি কে হালদারের ব্যবহৃত এই গাড়িটি কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি'র পূর্বাঞ্চলীয় কার্যালয়ের গেট থেকে কিছুটা ভেতরে ঢুকলে লিফটের কাছে মূল ফটকের সামনে দেখা যায় । পি কে হালদারের ভারতীয় ভুয়া নাম শিবশঙ্কর হালদার নামে গাড়িটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।
জানা যায়, কড়া নিরাপত্তার বলয়ে মোড়া সিজিও কমপ্লেক্সের ভেতরে বাইরের গাড়ি প্রবেশের অনুমতি কম। সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে থাকা ও ধুলো ময়লায় ঢেকে যাওয়া বিলাসবহুল গাড়িটি কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে কমপ্লেক্সে আসা মানুষের মধ্যে। কেননা কোনো মামলার ক্ষেত্রে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পর তা ইডি অফিসে নিয়ে এসে দীর্ঘদিন এভাবে ফেলে রাখতে হয়নি। ভবনটির গাড়ি চালকদের মুখে মুখে ইতোমধ্যে গাড়িটি 'বাংলাদেশের টাকা চোরের গাড়ি' নামে বিখ্যাত হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভবনের বিভিন্ন গাড়ি চালকরা বলেন, বিভিন্ন কাজের জন্য সিজিও কমপ্লেক্সে যারা আসেন তারা এই গাড়িটি দেখে জানতে চান, 'এটা কোন কেসের গাড়ি।' আসলে বড় বড় কর্মকর্তারা ধুলো ময়লা পড়ে আছে এমন গাড়িতে চড়েন না, আমাদের এখানে এত গাড়ি থাকলেও ধুলো ময়লা পড়ে থাকা এমন দামী গাড়ি একটাও নেই। একনজরে দেখলেই বাকি গাড়ির সঙ্গে এটা আলাদা করা যায়। তারা আরও জানান, আমরা গত সাত-আট মাস ধরে এই গাড়ির বিষয়ে জবাব দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। তাই কেউ জিজ্ঞেস করলেই সংক্ষেপে বলে দেই 'বাংলাদেশের টাকা চোরের গাড়ি।' তারপরেও যদি কেউ আরও বেশি প্রশ্ন করে তখন বলে দেই গুগল থেকে জেনে নিন।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, গাড়িটির নমিনি হিসেবে নাম রয়েছে পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ প্রণব হালদারের নাম। বারাসাত রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট মোটর ভেহিকেলস অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশন করা গাড়িটি কেনা হয়েছে পি কে হালদারের অশোকনগর নবজীবন পল্লীর বাড়ির ঠিকানা দিয়ে। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গাড়িটি কেনা হয়েছে। কোটি কোটি টাকার প্রতারণা করলেও গাড়িটি পি কে হালদার কিনেছেন ভারতের অ্যাক্সিস ব্যাংকের লোনের মাধ্যমে। ২০২২ সালের ১৪ মে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করার সময় তার এই গাড়িটি ইডির গোয়েন্দারা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙ্গড় এলাকার বিলাসবহুল বৈদিক ভিলেজের বোট হাউজ থেকে বাজেয়াপ্ত করে ।
ভারতে পি কে হালদারের ব্যবহৃত জিপ কোম্পানির কম্পাস এস ০২ মডেলের গাড়িটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ রুপি।