বরিশালে সড়কে ৮ মাসে ঝরেছে শতাধিক প্রাণ

বরিশালে সড়কে ৮ মাসে ঝরেছে শতাধিক প্রাণ

বরিশাল জেলা থেকে মাদারীপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়ক এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। গত ৮ মাসে এই মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে শতাধিক। বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলাতে ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনা রেকর্ড করেছে হাইওয়ে পুলিশ। আশুকাঠী থেকে ভূরঘাটা সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানান পুলিশ ।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনা: গত ২৫ জুলাই মহাসড়কে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার আশোকাঠী এলাকায় দুই পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ইলিশ পরিবহনের একটি যাত্রিবাহী বাস উল্টে ডোবায় পড়ে যায়। এতে নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২০জন আহত হয়।

একদিন পর ২৬ জুলাই মহাসড়কের মাহিলাড়া এলাকায় বাস-কাভার্ড ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়। গত ২ আগস্ট মহাসড়কের আশোকাঠী এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এনা পরিবহনের বাস উল্টে পুকুরে পড়ে যায়। এ সময় বাসের চাঁপায় এক মোটরসাইকেল চালকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বাসের কমপক্ষে ১২ যাত্রী আহত হয়। গত ৫ আগস্ট মহাসড়কের ইল্লা-ভূরঘাটার মধ্যবর্তী এলাকায় যাত্রিবাহী বাস ও ট্রাক্টর দিয়ে তৈরি অবৈধ ট্রলির সংঘর্ষে বাসযাত্রী এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয় এবং বাসের ১০ যাত্রী আহত হয়।

সর্বশেষ ,গত ৬ আগস্ট রাত আটটার দিকে মহাসড়কের কসবা এলাকায় নসিমন-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়। এরমধ্যে দুইজনকে আশংকাজনক অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। একই দিন দিবাগত ভোররাতে আশোকাঠী এলাকায় মালামাল বোঝাই একটি মিনি ট্রাক উল্টে খাদে পড়ে যায়। হাইওয়ে পুলিশের হিসেবে গত ৮ মাসে নিহতের সংখ্যা ১৭ জন। বরিশালে সর্বশেষ গত শনিবার সাকুরা পরিবহনের চাপায় উজিরপুরে একজন ইজিবাইক চালক নিহত হয়েছেন। উজিরপুরে গত ৮ মাসে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩০ জন ।

জানা গেছে, ২০২২ সালে বরিশাল জেলায় ১৬৮ দুর্ঘটনায় ১৮৩ জন মারা গেছে। ২০২২ সালে বরিশাল বিভাগের সব জেলায় দুর্ঘটনা ও মৃত্যু বেড়েছে। গতবছর বরিশাল জেলায় ১৬৮ দুর্ঘটনায় ১৮৩ জন মারা গেছে। ভোলায় ৪৮ দুর্ঘটনায় ৪৪ জন, ঝালকাঠিতে ২২ দুর্ঘটনায় ২৪ জন, পটুয়াখালীতে ৫২ দুর্ঘটনায় ৫৩ জন, পিরোজপুরে ৪৭ দুর্ঘটনায় ৫৪ জন এবং বরগুনায় ৪৫ দুর্ঘটনায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক জানান, বরিশাল-কুয়াকাটা, ঝালকাঠি, ভাঙ্গা ও মাদারীপুরের শিবচরে গত ৮ মাসে শতাধিক যাত্রী নিহত হয়েছে । অতিরিক্ত গতি এবং ফিটনেসবিহীন গাড়িই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হয়ে দাড়িয়েছে । তবে গত ৮ মাসে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ৩ হাজার ৫২৯টি। এতে নিহত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৯৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৩০০ জন।

হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, মাওয়া থেকে স্প্রিডওয়েতে ভাঙ্গা পর্যন্ত এসেই দুই লেনের সড়কের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে পারে না বেশিরভাগ চালক। এর উপর কিছু চালক অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বরিশালে সর্বশেষ বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ঝালকাঠির ছত্রকান্দায়। ১৭ জনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। চলতি বছরের ২১ জুলাই এই দুর্ঘটনায় আহত হয় আরো ১৮ জন।

তিনি বলেন, রাজাপুর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় খুলনা-ঝালকাঠি সড়কে ঘটে এই দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনাকবলিত বাশার স্মৃতি পরিবহনের বাসটি ভাডারিয়া থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ছত্রকান্দায় পৌঁছার পর বাসটির চাকা ফেটে গেলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান এবং বাসটি উল্টে রাস্তার পাশের পুকুরে পড়ে যায়। চালকের অসাবধানতায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি পুকুরে পড়ে যায়। এর আগে মাদারীপুরের শিবচরেও বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।