বগুড়ায় ‘স্বতন্ত্র’ নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন বিএনপির সাবেক ৩ নেতা
বগুড়ার সাবেক তিন বিএনপি নেতা আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ গ্রহণ করবেন। দল মূল্যায়ন না করা, দীর্ঘদিনেও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করায় অভিমান ও অনেকটা ক্ষোভ থেকে তারা প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির সাবেক এই তিন নেতা হলেন বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শোকরানা, বৃহত্তর বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সরকার বাদল এবং বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বিউটি বেগম।
এই তিন নেতা এক সময় বিএনপিতে সক্রিয় ছিলেন। জেলও খেটেছেন একাধিকবার। এদের মধ্যে মোহাম্মদ শোকরানা ২০০৮ সালে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচন করেছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের দাপুটে যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ শোকরানা ১৯৯৯ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর থেকে দলের পেছনে ব্যাপক পরিশ্রম করার পরেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষোভ এবং অভিমানে ২০১৯ সালের শেষ দিকে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর গত চার বছর কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে জড়িত হননি।
শোকরানা বলেন, ‘পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেব। আমার চাচা মন্ত্রী ছিল, আমার পরিবারের অনেকেই এলাকায় জনপ্রতিনিধি। আমি নিজেও ২০০৮ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে অল্প ভোটে হেরেছি। এরপর দল আমাকে মূল্যায়ন করেনি, মনোনয়ন দেয়নি। কিন্তু নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। রাজনৈতিক শত্রুতা এবং ব্যবসায়িক কারণে গত চার বছর ধরে আমি রাজনীতি করি না। ব্যক্তি ইমেজের কারণে বিএনপির অনেক ভোটার আমাকে ভোট দেবে।’
বৃহত্তর বগুড়া সদর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি সরকার বাদল ২০১৪ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে তিনি বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এরপর থেকেই তিনি বিএনপির রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। ২০২২ সালে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে উপনির্বাচনে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন।
সরকার বাদল বলেন, ‘বিএনপি আমাকে পদবঞ্চিত করে রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে। আমার অনেক ত্যাগ থাকার পরেও দল আমাকে মূল্যায়ন করেনি। এ কারণে দলের ওপর আমার ক্ষোভ অভিমান থাকলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’
বাদল বলেন, ‘বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী এবং জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশ আমার সঙ্গে আছে। এ কারণেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) থেকে প্রস্তাব থাকার পরেও আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবো।’
বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বিউটি বেগম ২০১৪ সালে দলীয় সমর্থনে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলে বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর গত প্রায় পাঁচ বছরেও তাকে দলে ফেরানো হয়নি। এই ক্ষোভ থেকে তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিউটি বেগম বলেন, ‘১৫ বছর বিএনপি করে চার বার জেল খেটেছি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে উপজেলা নির্বাচন করায় আমার সঙ্গে যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, তারা সবাই দলে ফিরেছে। কিন্তু শিবগঞ্জের এক বিএনপি নেতা গত পাঁচ বছরেও আমাকে দলে ফিরতে দিচ্ছে না। এ কারণে আমার ক্ষোভ অভিমান দুটোই রয়েছে।’
বিউটি বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হলে বিএনপির লোকজনও আমাকে ভোট দিবে এবং আমি নির্বাচিত হতে পারব।’
এদিকে বিএনপির এই তিন নেতা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) থেকে প্রার্থী হচ্ছেন এমন গুঞ্জন শোনা গেলেও এই তিন নেতা গুঞ্জনকে গুজব বলেছেন। তারা বলেছেন, ‘আমাদের কাছে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রস্তাব আসলেও আমরা রাজী হইনি। আমরা ব্যক্তি ইমেজে নির্বাচিত হতে পারব।’