প্রতিদিন ২৫ কোটি টাকার আম বেচাকেনা

প্রতিদিন ২৫ কোটি টাকার আম বেচাকেনা

জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহারে গড়ে উঠেছে আমের বৃহৎ বাজার। বেচাকেনায় জমজমাট হয়ে উঠেছে এ বাজারটি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়িরা সেখানে আম কিনতে আসছেন। এ হাটে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে। তবে আম উৎপাদনের খরচ বেশি হওয়ায় চাষীরা আমের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সাপাহার আমের বাজারে প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার পর থেকে এ হাটে ভ্যান, ভটভট ও অটোরিকশায় করে সাপাহার উপজেলাসহ পাশের পোরশা ও পতীতলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ক্যারেট ভর্তি করে হাটে আম বিক্রি করতে আসেন বাগানীরা। এ চিত্র এখন প্রতিদিনের। আম হাটের নির্দিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় মৌসুমি এসব আম সাপাহার-পতীতলা সড়কের ওপর অস্থায়ী ভাবে বেচাকেনা চলে। এ সড়কের দুই পাশে রয়েছে আমের আড়ৎ। যেখানে ঢাকা, যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা সহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়িরা এ হাটে আসেন আম কিনতে। চাষীদের কাছ থেকে দরদাম করে আম কিনছেন ব্যবসায়িরা। এ হাটে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার আম বেচাকেনা হয়। মে থেকে আগামী জুলাই (৩ মাস) পর্যন্ত চলবে আমের বাজার।

বরেন্দ্র এলাকার এঁটেল মাটির আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হওয়ায় এ জেলার আমের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। বর্তমানে বাজারে আম্রপালি, বারি-৪, ফজলি ও ব্যানানা ম্যাংগো জাতের আম বাজারে উঠেছে। আম্রপালি প্রকারভেদে ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা, বারি-৪ জাতের ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা, ফজলি ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা এবং ব্যানানা ম্যাংগো ৬ হাজার টাকা মন হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তাদের পছন্দের তালিকায় আম্রপালি জাতের আম। জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের যে পরিমান আম বাগান রয়েছে তার মধ্যে আম্রপালি ১৮ হাজার ৩১৩ দশমিক ৫ হেক্টর। আমের সুমিষ্ট ঘ্রান ভোক্তাদের আম খেতে আরও বেশি আগ্রহী করে তোলে। এ জন্য সারা দেশের মানুষের কাছে এর চাহিদাকে বাড়িয়ে তুলেছে। আম্রপালি আম এ জেলার ব্যান্ডিং হতে পারে।

বাগান মালিকরা বলেন-এ বছর অনাবৃষ্টি, শ্রমিকের মজুরি, জ্বালানি তেল এবং সার ও কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় আম উৎপাদন করতে বিঘা প্রতি প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা খরচ বেশি পড়েছে। আড়তদারদের সিন্ডিকেটে বাজারে ৪৮ কেজিতে মনের পরিবর্তে ৫২ কেজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। প্রতিমণ ৪ হাজার টাকা হলে লাভবান হবেন তারা।

উপজেলার উলিগ্রামের আমচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন- এ বছর আম উৎপাদন করতে খরচ বেশি পড়েছে। গাছ থেকে আম বেড়ে বাজারে নিয়ে আসবো শ্রমিক সংকট। ৫০০ টাকা মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ৪৮ কেজিতে মন নেওয়ার কথা ছিল। ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটের কারণে ৫২ কেজিতে আমরা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। আবার আমের দামও কম পাওয়া যাচ্ছে। আমের যে খরচ সে হিসেবে আমরা দাম পাচ্ছি না।

উপজেলার গুডাউন পাড়ার সৌরভ আলী বলেন- সাপাহার বরেন্দ্র অঞ্চলের এঁটেল মাটি হওয়ায় আমের অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। সেরা আমের মধ্যে আ¤্রপালি জাতের আম। এ আমের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। এ আমের দাম ভাল পাওয়ায় বাগানও বেশি। ভবিষ্যতে এ আমের ব্যান্ডিং হতে পারে। আমের আড়তে ক্যারেটে আম সাজানোর কাজ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কানসাট গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন- ক্যারেটে আম সাজিয়ে প্রতিদিন ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার আয় করা যায়। প্রতিটি আড়তে ৫-১৫ জন শ্রমিক ক্যারেটে আম সাজানোর কাজ করেন। এ উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার মৌসুমি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ঢাকার যাত্রাবাড়ীয় আড়ৎদার বকুল হোসেন বলেন, এ উপজেলার আম্রপালি অত্যান্তু সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। এ আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৩০০ টাকা মণ চলছে। এখান কিনে ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ১৫০ ক্যারেট (৭৫ মন) আম কেনা হয়।

আব্দুর রশিদ নামে এক ব্যবসায়ি বলেন- আম মৌসুমে এ উপজেলায় মৌসুমি কয়েকজন ব্যবসায়িরা ক্যারেট (প্লাস্টিকের ঝুঁড়ি) বিক্রি করেন। প্রকারভেদে একটু দূর্বল আকারে প্রতিটি ক্যারেট ৭০ টাকা এবং ভালটা ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়। এ মৌসুমে বাজারে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্যারেটে বিক্রি হবে।

সাপাহার আড়ৎদার সমিতি সহসভাপতি মোঃ রেজাউল করিম বলেন- উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩৫০টি আমের আড়ৎ আছে। দিন যত যাচ্ছে কমছে আমের পরিমান, বাড়ছে দাম। প্রতিদিন এ বাজারে প্রায় ২৫ কোটি টাকা বেচাকেনা হচ্ছে। এসব আম ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে।

তিনি বলেন- ৫২ কেজিতে মন চাষীরা যে অভিযোগ করছে তা ঠিক নয়। আমরা প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ি ৪৮ কেজিতে মন কিনছি। তবে চাষীরা আম বাছাই না করে সবগুলো একত্রে করে বিক্রি করতে আসে। এতে ব্যবসায়িরা চাষীদের সঙ্গে চুক্তি করে কয়েক কেজি বেশি আম ধরে নেয়। এটা ব্যবসায়ি ও চাষীরা সমঝোতা করেই এ টা করে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে এ বছর জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান গড়ে উঠেছে। প্রতি হেক্টরে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন হিসেবে প্রায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভবনা রয়েছে।