ধর্মের নামে কেউ যেন বিভ্রান্ত করতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

ধর্মের নামে কেউ যেন বিভ্রান্ত করতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

ধর্ম নিয়ে আর কেউ যেন কোনোরকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য মসজিদের খতিব, ইমামসহ শিক্ষক-অভিভাবকদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইমামদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজের যেসব অঙ্গতি রয়েছে, যেমন- মাদকাসক্তি, বাল্য বিবাহ, নারী নির্যাতন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ইত্যাদি দূরীকরণে ইমাম ও খতিবরা তাদের বয়ান বা খুতবায় এসব বিষয়ে তুলে ধরবেন। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে যেন প্রত্যেকের ছেলে মেয়েরা দূরে থাকে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ইসলামের সম্মান নয় বরং বদনাম। এসব বিষয়ে সচেতনতার সৃষ্টির ক্ষেত্রে আপনারা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমারা চাই দেশের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে আরও উন্নত হোক, গরিব মানুষ দারিদ্যের হাত থেকে মুক্তি পাক সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এসময় করোনাকালে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি চাই, আমাদের দেশে সত্যিকার ইসলামের জ্ঞান চর্চা হোক।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করি আমাদের ধর্মের সম্মানটা যেন আরও উন্নত হয়। আমাদের জাতির পিতার আদর্শকে মাথায় রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের প্রতিটি ধর্মের মানুষ যেন নিজ নিজ ধর্ম বাধাহীনভাবে পালন করতে পারে সেটাই চাই, সেটাই ইসলামের শিক্ষা। ইসলাম শান্তির ধর্ম, সৌহার্দ্যের ধর্ম, ভ্রাতৃত্যের ধর্ম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী যে অথনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে তার থেকে বাংলাদেশ যাতে মুক্ত থাকে তাই সবার কাছে আমার আবেদন, কোথাও যেন কোনও জমি অনাবাদী না থাকে। জমির আবাদ করে খাদ্য চাহিদা পূরণ করতেপারি। কারও কাছে হাত পেতে নয়, ভিক্ষা করে নয়, সম্মানের সাথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারি সেই আহ্বান থাকবে সবার প্রতি। তাই আসুন বাংলাদেশটাকে সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলি। প্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

এসময় তিনি ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ভার্চুয়ালি ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী ও গাজীপুরে দুটি মডেল মসজিদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালে যুক্ত হবেন বলে জানা গেছে।

‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদসহ প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত ৯৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৬৪টির মধ্যে ১০০টি মসজিদ উদ্বোধন করলেন।

তিনি এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেছিলেন। আশা করা হচ্ছে, আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে তৃতীয় ধাপে আরও ৫০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু করা হবে।

উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী ও গাজীপুরে দুটি মডেল মসজিদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্থানীয়দের অনুভূতি শোনেন।

উদ্বোধন করা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো যেসব এলাকায় রয়েছে- ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নগরকান্দা, গাজীপুরের কাপাসিয়া, গোপালগঞ্জের সদর উপজেলা, কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলা, কটিয়াদী, মানিকগঞ্জের ঘিওর, সাটুরিয়া, নরসিংদীর সদর উপজেলা, মনোহরদি, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা, জেলা সদর, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা, বগুড়ার ধুনট উপজেলা, নন্দীগ্রাম, নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলা, পাবনার ভাঙ্গুরা সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া, ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলা, শেরপুরের সদর উপজেলা, পিরোজপুরে সদর উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর ও কসবা, খাগড়াছড়ির সদর উপজেলা ও মানিকছড়ি, কুমিল্লার চান্দিনা ও চৌদ্দগ্রাম, খুলনার রূপসা, কুষ্টিয়ার খোকশা ও ভেড়ামারা, মেহেরপুর জেলা সদর ও গাংনী, সাতক্ষীরার দেবহাটা, সিলেটের গোয়াইনঘাট, সুনামগঞ্জ জেলা সদর এবং জগন্নাথপুর, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা।

তথ্য অনুযায়ী, মডেল মসজিদগুলোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ অজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে হজ গমনে ইচ্ছুকদের জন্য রেজিস্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগের আনুষ্ঠানিকতা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামী সাংস্কৃতিক সম্মেলন কক্ষ। কার্যক্রম এবং ইসলামী দাওয়াত, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, মসজিদের সঙ্গে দেশি ও বিদেশি অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধা।