গাছের সৌন্দর্যের ভিতর লুকিয়ে আছে মৃত্যু
লাইফস্টাইল ডেস্ক : আমরা গাছকে বন্ধু হিসেবেই জেনে থাকি। গাছের দ্বারা আমরা বিভিন্ন সময় উপকৃত হই। ছোট বড় গাছের দ্বারা আবার আমরা আমাদের ঘরের ভেতর এবং বাহিরের আঙিনা সাজিয়ে থাকি। কখনো কখনো গাছের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে। কিন্তু গাছ সম্পর্কে আমাদের কিছুটা জানা হয়তো বাকি রয়েছে। হ্যাঁ পৃথিবীতে এমনও কিছু গাছ রয়েছে যা আপনার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।
আজ জেনে আসা যাক তেমনই কিছু গাছের সম্পর্কে-
ক্যাস্টর বিন : এটিকে আফ্রিকার একটি অন্যতম আকর্ষণীয় উদ্ভিদ ধরা হয়। এর দেখা পাওয়া যাচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তেই। শোভাবর্ধক হিসেবেও এটি বিশ্বব্যাপী বেশ পরিচিত। রেড়িগাছ ভেন্নান গাছ নামে আমাদের দেশে উদ্ভিদটি পরিচিত। ক্যাস্টর অয়েল একটি সাধারণ পদার্থ যা সাবান থেকে রঙে, কালি এবং এমনকি সুগন্ধি পর্যন্ত বিস্তৃত পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত হয়। তবে, আপনার এটিও জেনে রাখা ভালো এটি অত্যন্ত বিষাক্ত জ্ঞানযুক্ত উপাদান। এর মধ্যে রিকারিন রয়েছে, এমনকি একক ক্যাস্টর শিম চিবানো অসুবিধার লক্ষণগুলি নিয়ে আসে যা আপনাকে হাসপাতালে প্রেরণ করে এবং চার বা ততোধিক বীজ গ্রহণের ফলে মারাত্মক গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস হতে পারে। উদ্ভিদটি মূলত আফ্রিকার স্থানীয়, তবে এটির সৌন্দর্য এবং প্রয়োজনীয়তার কারণে বিশ্বজুড়ে এর চাষাবাদ করা হয়।
রোজারি পি : রোজারি পি এর পাশাপাশি জেকুইরিটি বিনস নামেও এটি বিশ্বব্যাপী বেশ পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Abrus precarious। রতি, রত্তি, গুঞ্জা, চূড়ামণি, কুঁচ, কইচ গোটা ইত্যাদি নামে ডাকা হয় আমাদের দেশে। রোজারি পি এর দেখা মিলে মূলত গ্রীষ্মপ্রধান এলাকাগুলোতে। মাঝে মাঝে এটিকে বিভিন্ন অলংকার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাহারি নামে যেমন মানুষের কাছে খুব প্রিয় এটি তেমনি রয়েছে এর উল্টো দিক। এই উদ্ভিদটিতে রয়েছে বিষাক্ত এব্রিন, যা রাইবোজোম দমন করে থাকে। এর বীজ যখন ভাঙা হয় বা ফেটে যায় এবং চিবোনো হয়, তখনই এটি হয়ে ওঠে ভয়ংকর এমনকি প্রাণঘাতী বিষ। তবে বীজটি অক্ষত থাকা অবস্থায় মোটেও ক্ষতিকর নয়। একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির জন্য মাত্র ৩ মাইক্রোগ্রাম এব্রিনই যথেষ্ট। যা একটি রোজারি পি’র বীজে থাকে। অনেক অলংকার নির্মাতারা এই বীজটি দিয়ে কাজ করতে গিয়ে ঘটনাক্রমে বিভিন্ন সময় আঙুলে খোঁচা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এমনকি অনেকে মারাও গিয়েছেন। রাইসিনের মতো এব্রিনও রক্তে আমিষের সঞ্চালনে বাধা প্রদান করে এবং মাত্র চারদিনে যেকোনো অঙ্গ নিষ্ক্রিয় করে।
তামাক : যদি প্রশ্ন করা হয় বিশ্বে সবচাইতে বেশি কোন উদ্ভিদের জন্ম হয়- তবে এর উত্তর তামাক। এই উদ্ভিদের ক্ষতিকর দিকটি সম্পর্কে সবারই জানা। এটি কোন খাদ্য তালিকার শ্রেণীতে পড়ে না। বিশেষ করে এর পাতায় রয়েছে বিষাক্ত অ্যালকালয়েডস নিকোটিন এবং অ্যানাবেসিন, যা গ্রহণের পরিণাম হতে পারে মারাত্মক। যদিও একে হৃদপিন্ডের জন্য একটি বিষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তারপরও তামাকের নিকোটিনকে বিশ্বব্যাপী চিত্তপ্রভাবকারী, আসক্তিকর এবং নেশাকর হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
সুইসাইড ট্রি : এর দেখা মেলে উপকূলীয় লবণাক্ত জলাভূমিতে। জন্ম পার্শবর্তী দেশ ভারতে। এটি প্রাকৃতিকভাবেই জন্মায়। ফুলের মতো এর পাতাগুলোও দেখতে সাজানো। এর সৌন্দর্য এবং আকর্ষণীয়তা যে কাউকে ভালোবাসতে বাধ্য করবে। এর সারা গায়ে বিষাক্ত হুল রয়েছে, যেখানে কার্ডেনোলাইড এবং কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইড নামক বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে যা মানবদেহের হৃদপেশীর কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দিতে সক্ষম। ভয়ংকর ব্যাপার হলো মানুষের গায়ে একবার যদি লাগে প্রায় দুবছর পর্যন্ত যন্ত্রণা হতে পারে।
ম্যানচিনেলা ট্রি : পৃথিবীর সবথেকে ভয়ংকর এবং বিষাক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ম্যানচিনেলাকে। তার কারন এই গাছ থেকে এক প্রকার বিষাক্ত রস নিঃসরিত হয়। এই গাছকে tree of death বলা হয়ে থাকে। ফ্লোরিডা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে এর দেখা মিললেও ট্রপিক্যাল নর্থ এবং সাউথ আমেরিকায় এর বিস্তরণ। এর সৌন্দর্য আপনাকে কাছে টানবেই। তবে এটির স্পর্শে গেলেই শুরু হয় মহাবিপদ, আমরা কখনো কখনো মনের অজান্তেই গাছের পাতা ছিঁড়ি ফেলি। আর তখনই হাতে ডার্মাটাইটিস এর প্রদাহ শুরু হবে। এমনিতে কস নিঃসৃত হয় আর তখন যদি গাছে স্পর্শ করা হয়, তবে সাথে সাথে ফুসকা পড়ে যায়, চোখে গেলে অন্ধ হবারও সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির সময় এই গাছের নীচে একদমই দাঁড়ানো যাবে না। deadliest tree হিসেবেও গিনেস ওয়ার্ল্ড বুকে জায়গা করে নিয়েছে।